১৬ জুলাই, ২০১৮ ২১:১৭

বগুড়ায় কিশোরী ধর্ষণ ও মা-মেয়ে নির্যাতন

মামলার এক বছরেও বিচার শুরু হয়নি

নিজস্ব প্রতিবেদক, বগুড়া

বগুড়ায় কিশোরী ধর্ষণ ও মা-মেয়ে নির্যাতন

মা-মেয়ের মাথা ন্যাড়া করে দেওয়া হয়েছিল।

বগুড়ার বহুল আলোচিত শ্রমিকলীগ নেতা তুফান সরকারের হাতে কিশোরী ধর্ষিত ও মা-মেয়ে নির্যাতন মামলার বিচার গত এক বছরেও শুরু হয়নি। সেই সাথে পলাতক আসামি সামিউল হক সামিউলকেও এক বছরেও গ্রেফতার করতে পারেনি পুলিশ। এর ফলে বিচার কার্যক্রমে দীর্ঘসূত্রিতা সৃষ্টি হয়েছে বলে অভিযোগ উঠেছে।  

বগুড়ার শিশু আদালতে এ ঘটনায় দায়েরকৃত দুটি মামলার কার্যক্রম চলছে। তবে প্রধান আসামি তুফান সরকার, সহযোগি আতিক ও মুন্না কারাগারে আটক রয়েছেন। অপর ৯ আসামি জামিনে রয়েছেন।

বগুড়া শহর শ্রমিকলীগের তৎকালীন আহবায়ক তুফান সরকার শহরের নামাজগড় এলাকার ভাড়া বাসা থেকে এসএসসি পাশ এক কিশোরীকে ভালো কলেজে উচ্চ মাধ্যমিক শ্রেণীতে ভর্তির প্রলোভন দিয়ে ২০১৭ সালের ১৭ জুলাই  সহযোগিদের দিয়ে তুলে নিয়ে শহরের চক সূত্রাপুরের নিজ বাসায় ধর্ষণ করে। এ ঘটনার ১০দিন পর ওই কিশোরী তার মাকে নিয়ে স্থানীয় সংরক্ষিত ২ নং ওয়ার্ডের পৌর কাউন্সিলর মার্জিয়া হাসান রুমকির বাসায় গিয়ে বিচার চায়। এতে ক্ষিপ্ত হয়ে রুমকি ও তার ছোট বোন তুফানের স্ত্রী আশা মিলে মা ও মেয়েকে নির্যাতন করে দুজনের মাথা ন্যাড়া করে দেয়।এরপর স্থানীয় লোকজন দুজনকে অসুস্থ্য অবস্থায় বগুড়া শহীদ জিয়াউর রহমান মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করে দেয়। এ ঘটনায় কিশোরীর মা বাদী হয়ে বগুড়া সদর থানায় তুফান ও তার সহযোগিদের বিরুদ্ধে মামলা করেন।

এরপর পুলিশ তুফান সরকার ও তার স্ত্রীসহ ১১জনকে গ্রেফতার করে। দেশে- বিদেশে ব্যাপক সমালোচনার পর তুফান সরকারকে শ্রমিক লীগ থেকে বহিষ্কার করা হয়। এ ছাড়া তাকে মদদ দেওয়ার অভিযোগে তার বড় ভাই বগুড়া শহর যুবলীগের তৎকালীন যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মতিন সরকারকেও বহিষ্কার করা হয়। সেই সাথে মামলায় চার্জশিট ভুক্ত হওয়ায় বগুড়া পৌরসভার সংরক্ষিত ২ নং ওয়ার্ড কাউন্সিলর মার্জিয়া হাসান রুমকিকেও কাউন্সিলর পদ থেকে বরখাস্ত করে প্রজ্ঞাপন জারি করে স্থানীয় সরকার বিভাগ। এজাহারভুক্ত অপর আসামীরা হলো,তুফানের শাশুড়ি রুমি, সহযোগী আতিক, মুন্না, দিপু, রূপম, জিতু ও শিমুল।

গ্রেফতারকৃত আসামিদের একাধিকবার রিমান্ডে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদের এক পর্যায়ে আতিক ও মুন্না নামে তুফানের দুই সহযোগী এবং জীবন রবিদাস নামে এক নাপিত (নরসুন্দর) আদালতে ১৬৪ ধারায় স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দী দেয়। পাশাপাশি ভিকটিম কিশোরীও পৃথকভাবে আদালতে ২২ ধারায় জবানবন্দী দেয়। পরবর্তীতে ধর্ষিতা কিশোরীর ডাক্তারী প্রতিবেদনও সংগ্রহ করে পুলিশ। যাতে ধর্ষণের আলামত পাওয়ার কথা উল্লেখ করা হয়। এক সপ্তাহের মধ্যে তদন্তের উল্লেখযোগ্য অগ্রগতি হলেও পুলিশ চার্জশীট দাখিলে বিলম্ব করে। 

তদন্তকারী কর্মকর্তা বগুড়া সদর থানার পরিদর্শক (অপারেশন্স) আবুল কালাম আজাদ গত বছরের ১০ অক্টোবর পৃথক দু’টি ধারায় ওই মামলার আলাদা দু’টি চার্জশীট বগুড়ার চীফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে দাখিল করেন। ধর্ষণ এবং নির্যাতনের অভিযোগে নারী ও শিশু নির্যাতন আইনে দাখিল করা চার্জশীটে এজাহারভুক্ত ১০জনকেই অভিযুক্ত করা হয়।  এ ছাড়া কিশোরীকে অপহরণ ও তাকে সহ মাকে মারপিটের ঘটনায় এজাহারভুক্ত ওই ১০জনের সঙ্গে আরও ৩জনকে অভিযুক্ত করা হয়। পৃথক দু’টি চার্জশীটে মামলার বাদী ,তার কিশোরী কন্যা, পুলিশ এবং চিকিৎসক মোট ২৩জনকে সাক্ষী করা হয়।

ধর্ষণ এবং নির্যাতনের অভিযোগে নারী ও শিশু নির্যাতন আইনে দাখিল করা চার্জশীটে অভিযুক্তদের মধ্যে সামিউল ইসলাম শিমুল এখনও পলাতক রয়েছে। তাকে এক বছরেও পুলিশ গ্রেফতার করতে পারেনি। বাকী ৯ আসামীর মধ্যে তুফান এবং তার দুই সহযোগী আতিক ও মুন্না ছাড়া সবাই জামিনে রয়েছে। অপরদিকে অপহরণ ও মারপিটের ঘটনায় দাখিল করা অপর চার্জশীটে এজাহারভুক্ত ১০জনের সঙ্গে আরও ৩জনকে অভিযুক্ত করা হয়েছে । তারা হলো অভিযুক্ত ওয়ার্ড কাউন্সিলর মার্জিয়া হাসান রুমকির বাবা জামিলুর রহমান রুনু, মাথা ন্যাড়া করে দেওয়া নাপিত জীবন রবি দাস ও কাউন্সিলর রুমকির গৃহপরিচারিকা আঞ্জুয়ারা বেগম। 

সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়,  বগুড়া চীফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে দাখিল করা দু’টি চার্জশীট গত ১২ এপ্রিলের মধ্যে বিচারিক শিশু আদালতে পাঠানো হয়। সর্বশেষ গত ১১ জুলাই ওই মামলার শুনানীর দিন ধার্য্য  ছিল। কিন্তু একজন আসামী পলাতক থাকায় নারী ও শিশু নির্যাতন আইনে মামলাটির চার্জ গঠন করা যায়নি। কারণ পলাতক আসামীর বিষয়ে পত্রিকায় বিজ্ঞপ্তি প্রকাশের আইনী বাধ্যবাধকতা রয়েছে। তবে অপহরণ এবং মারপিট সংক্রান্ত মামলায় চার্জ গঠন খুব দ্রুত সময়ের মধ্যে সম্পন্ন হবে।

বগুড়া শিশু আদালতের পাবলিক প্রসিকিউটর (পিপি) অ্যাডভোকেট আমান উল্লাহ্ জানান, ভিকটিম কিশোরী ও তার মা বিচার কাজ দ্রুত শুরুর জন্য বার বার তাগাদা দিচ্ছেন। পুলিশের পক্ষ থেকে তদন্ত শেষে চার্জশীট দাখিল করা হলেও একজন  আসামী পলাতক থাকায় এখনও চার্জ গঠন সম্পন্ন হয়নি। তিনি বলেন,  বিচার প্রক্রিয়া কিছুটা বিলম্ব হলেও ন্যায় বিচার নিশ্চিত করা হবে।

বিডি-প্রতিদিন/ ই-জাহান

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর