১৭ জুলাই, ২০১৮ ০৫:৫৯

কর্মব্যস্ত শরীর নিয়ে খোলা আকাশের নিচে রাত কাটে তাদের

আব্দুল লতিফ লিটু, ঠাকুরগাঁও:

কর্মব্যস্ত শরীর নিয়ে খোলা আকাশের নিচে রাত কাটে তাদের

রাতে পুরো পৃথিবী ঘুমের রাজ্যে চলে যায়। দিনের ক্লান্তি শেষে মানুষ আরাম-আয়েশে রাত্রিযাপন করেন। এর মধ্যে কেউ অট্টালিকায় কেউবা কুঁড়ে ঘরে। কিন্তু ঠাকুরগাঁওয়ের কিছু হোটেল শ্রমিক ও ছিন্নমুল মানুষকে পুরাতন বাসষ্ট্যান্ডে দেখা মেলে ভিন্ন চিত্রে। এখানে অট্টালিকাও নেই আবার নেই কুঁড়ে ঘরও। এরপরও আরাম করে খোলা আকাশের নিচে দিব্বি ঘুমাচ্ছেন একদল ঘুমের রাজ্যের রাজা। যারা সারাদিন হোটেল বা শ্রম বিক্রির কাজে ব্যস্ত থাকেন।

মঙ্গলবার (১৭ জুলাই) দিবাগত রাত দু’টার দিকে সরেজমিনে দেখা যায়, সুনশান ঠাকুরগাঁও পুরাতন বাসস্ট্যান্ডের গোল চত্বরে হোটেল শ্রমিক ও ছিন্নমুল কয়েকজন মানুষ ঘুমিয়ে রয়েছেন খোলা আকাশের নিচে। দিনের কোলাহলের বিপরীতে রাতে কয়েকজন মানুষের সাথে দেখা মেলে। তারা জানান, রাতে বেশিরভাগ সময় হোটেল বন্ধ করে গোল চত্বরেই ঘুমিয়ে পড়েন অনেকেই।

রাতে শহর পাহারাদার জাকিরের মতে, শহরে বিভিন্ন হোটেলে যারা কাজ করে বা সারাদিন দিন মজুরেরা থাকার জায়গা না পেয়ে বাসস্ট্যান্ডের গোল চত্বরে খোলা আকাশের নিচে ক্লান্ত শরীরে ঘুমিয়ে পড়ে। এসব লোকজন যা রোজগার করে তা দিয়ে ভাড়ায় কোথায় থাকতে পারে না, বাধ্য হয়েই খোলা আকাশের নিচেই রাত পার করে থাকে। রাত শেষে ভোরে আবার প্রতিদিনের মতই কাজে ব্যস্ত হয়ে পড়েন তারা।

পেটের দায়ে পাহাদার জাকির হোসেন দীর্ঘদিন ধরে দোকান পাহারা দিয়েই চলছেন। তিনি বলেন, মাসে প্রতি দোকান হতে ইনকাম হয় ৩ হাজার টাকার মতো দেয়। এভাবেই জীবন চালিয়ে যাচ্ছি। 

বৃষ্টির সময় এরা কিভাবে ঘুমায়- এমন প্রশ্নের জবাবে জাকির বলেন, কোন বিল্ডিংয়ের সিঁড়ির নিচে চলে যায়।

ট্রাক শ্রমিক হোসেন আলী জানান, দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে যখন যায় এমন চিত্র নিত্যদিনের।  সাধারণ খেটে খাওয়া মানুষেরা সারাদিন কাজ করে ক্লান্ত শরীর ফেলে দেয় খোলা কোন স্থানে। ক্লান্তির কারণে তখন আর বাসা-বাড়ি বা অট্টালিকার কথা ভুলে যায়। অনেক কষ্ট হয় এমন চিত্র চোখে পড়লে। সরকার যদি এসকল মানুষের প্রতিটি শহরে থাকার ব্যবস্থা করেন তাহলে শ্রমজীবী মানুষেরা শত কষ্টের মাঝেরও একটু আস্থা খুজেঁ পাবেন। 

ঠাকুরগাঁও সমাজসেবক আব্দুল আলীম জানান, খাদ্য,বস্ত্র, বাসস্থান, চিকিৎসা নাগরিক অধিকার যা দেশের সংবিধানে উল্লেখ্য রয়েছে। কিন্তু বাস্তবতার চিত্র ভিন্ন। যেখানে মানুষকে খোলা আকাশের নিচে ঘুমাতে হয় সেখানে একজন মানুষের জীবন কতটুকু নিরাপদ। তাই সরকারের বিভিন্ন বে-সরকারি সংস্থা এ সকল মানুষের জন্য যদি কোন উদ্যোগ গ্রহণ করে তাহলে দিন শেষে একজন মানুষ ক্লান্তির জন্য ঘুমের রাজ্যে রাত পার করতে পারবে। সুন্দর দেশ ও সমাজ গড়তে সকলকে ঐক্যবদ্ধ হওয়ার আহ্বান জানান তিনি।

বিডি প্রতিদিন/হিমেল

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর