২০ জুলাই, ২০১৮ ১৬:৩০

লক্ষ্মীপুরে ভয়াবহ ভাঙনে হুমকির মুখে মেঘনা পাড়ের মানুষ

লক্ষ্মীপুর প্রতিনিধি:

লক্ষ্মীপুরে ভয়াবহ ভাঙনে হুমকির মুখে মেঘনা পাড়ের মানুষ

মেঘনার ভয়াবহ ভাঙনে বিলীন হয়ে গেছে লক্ষ্মীপুরের রামগতি ও কমলনগরের বিস্তীর্ণ জনপদ। নতুন করে হুমকির মুখে রয়েছে কমলনগরের ৫টি ইউনিয়নের বেশ কিছু এলাকাসহ গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনা। ইতিমধ্যে ভাঙন প্রতিরোধে নতুন প্রকল্পের আওতায় কমলনগরের ১ কিলোমিটারে নদী তীর রক্ষা বাঁধের কাজ শেষ করা হয়েছে। তবে ওই বাঁধে চলতি বর্ষা মৌসুমে জোয়ারের পানি ও অতি বৃষ্টির প্রভাবে আবারো ধস দেখা দিয়েছে। এতে করে এ উপকূলের বাসিন্দারা রয়েছে এখন চরম আতঙ্কে। 

জানা যায়, লক্ষ্মীপুরে গত কয়েক বছর ধরে মেঘনার অব্যাহত ভয়াবহ ভাঙনে বিলীন হয়ে গেছে রামগতি ও কমলনগরের বিভিন্ন মসজিদ, মাদ্রাসা ও শিক্ষা প্রতিষ্ঠানসহ গুরুত্বপূর্ণ বহু স্থাপনা। ভাঙ্গন ঠেকাতে বর্তমান সরকার সাড়ে ৫কিলোমিটার এলাকায় নদী তীর রক্ষা বাঁধের প্রকল্প অনুমোদন করে। পৌর আলেকজান্ডার এলাকায় সাড়ে ৩ কিলোমিটার, রামগতির মাছ ঘাটের ১ কিলোমিটার সম্পন্ন করা হয়।  ইতিমধ্যে প্রায় ৫০ কোটি টাকা ব্যায়ে নতুন প্রকল্পের আওতায় কমলনগরের ১ কিলোমিটারের কাজও সম্পন্ন করা হয়। 

চলতি বর্ষা মৌসুমে জোয়ারের পানি ও অতি বৃষ্টির প্রভাবে কমলনগরের ১ কিলোমিটার নদী তীর রক্ষা বাঁধে আবারো ধস দেখা দিয়েছে। গত এক সপ্তাহে প্রায় ২শ’ মিটার বাঁধ ধসে পড়েছে। এ পর্যন্ত গত এক বছরে ওই বাঁধে ধস দেখা দিয়েছে ৬ বার। বর্তমানে সংশ্লিষ্ট কাজের ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান বালু ভর্তি জিও বেগ ফেলে ভাঙন ঠেকানোর চেষ্টা করছেন। তবে তীব্র ভাঙনে তাতে কোন কাজ হচ্ছেনা বলে জানান শ্রমিকরা। 

এদিকে বার বার ধসে ওয়েস্টার্ন ইঞ্জিনিয়ারিং নামে যে ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান বাঁধের কাজ করেছে তারা নিম্ন মানের সামগ্রী ব্যবহার করেছে বলে অভিযোগ উঠেছে। তবে ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠানের পক্ষে ওয়েস্টার্ন ইঞ্জিনিয়ারিং এর এ জি এম মাসুদ রানা তা অস্বীকার করে বলেন, নিয়মতান্ত্রিকভাবে কাজ সম্পন্ন করা হয়েছে। এখনো কাজ বুঝিয়ে দেওয়া হয়নি। তবুও ভাঙন ঠেকাতে বালু ভর্তি করে জিও বেগ ফেলা হচ্ছে।

বাঁধে দসের খবর পেয়ে ঘটনাস্থল পরিদর্শনে এসে পানি উন্নয়ন বোর্ডের কুমিল্লা পূর্বাঞ্চলের প্রধান নির্বাহী প্রকৌশলী বাবুল চন্দ্র শীল বলেন, বাঁধের দুপাশে ঢুকে গেছে নদী মাঝখানে পড়ে গেছে বাঁধ। তাছাড়া ডুবো চর ও পলী জমে পানির প্রবাহ গতি বেড়ে ৩০ মিটারে দাঁড়িয়েছে। ওই পানি নদীর তীর ঘেষে প্রবাহিত হওয়ায় ভাঙছে নদী। ভাঙন রোধে কার্যকরী ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে বলে জানান তিনি।

এদিকে প্রতিদিনই ভাঙছে নতুন নতুন এলাকা, জেলার কমলনগর উপজেলার চরকালকিনি, চর ফলকন, সাহেবের হাট, পাটারীর হাট ইউনিয়নের বেশ কয়টি ওয়ার্ড নদী গর্ভে বিলীন হয়ে গেছে। এখন হুমকির মুখে রয়েছে এসব ইউনিয়নের বেশ কিছু এলাকাসহ উপজেলা পরিষদ কমপ্লেক্স, কমলনগর থানা, হাজির হাট বাজারের সরকারি বেসরকারি গুরুত্বপূর্ন স্থাপনা ও ফসলী জমি। 

স্থানীয় বাসিন্দারা রয়েছেন আতঙ্কে। তারা বলছেন,  ঝুকিপূর্ণভাবে বসবাস করছে এখানকার হাজার হাজার মানুষ। যে কোন মূহুর্তে জোয়ারের পানিতে প্লাবিত হতে পারে এসব এলাকা। আর বহু প্রাণহানির আশঙ্কা রয়েছে বলে জানান তারা।

লক্ষ্মীপুর সরকারি কলেজের উদ্ভিদ বিজ্ঞান বিভাগের প্রধান ও সহযোগী অধ্যাপক মো. আব্দুল আহাদ বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, নদীতে পলী জমে পানির প্রবাহ বাধাগ্রস্থ হচ্ছে। ড্রেজিংয়ের মাধ্যমে পানির প্রবাহটা মূল চ্যানেলে নিশ্চিত করা ও নদীর পাড় রক্ষায় গাছ লাগানো হলে সমস্যার সমাধান অনেকটা সম্ভব।


বিডি প্রতিদিন/২০ জুলাই ২০১৮/হিমেল

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর