২৩ সেপ্টেম্বর, ২০১৮ ১৯:৩১

বান্দরবানের বিরল প্রজাতির গাছের বনও উজাড়

কবির হোসেন সিদ্দিকী, বান্দরবান

বান্দরবানের বিরল প্রজাতির গাছের বনও উজাড়

পার্বত্য জেলা বান্দরবানের এবার বিরল প্রজাতির রিজার্ভ বনও গাছ কেটে সাবাড় করছে চোরকারবারীরা। আলীকদম এলাকার ৪০ একরেরও বনাঞ্চলটিতে দুর্লভ প্রজাতির চম্পা ফুল, গর্জন, বৈলামসহ নানা প্রজাতির গাছ রয়েছে। চকরিয়া ও আলীকদমের একটি গাছ পাচারকারী চক্র মেশিনচালিত করাত দিয়ে কেটে নিঃশেষ করে দিচ্ছে এই রিজার্ভটি।

থানচি-আলীকদম সড়কের ডিম পাহাড় সড়কটির কাছে হওয়ায় ট্রাকে করে পাচারকারীরা উজাড় করে নিয়ে যাচ্ছে প্রাকৃতিক বনের দুর্লভ গাছগুলো। বনটিতে কেটে ফেলা কোনো কোনো গাছের বেড় প্রায় ১৫ থেকে ১৮ ফুট।

পাড়া কার্বারী দিরি ম্রো জানান, বনের পাশে পাড়ায় একটি ক্রামা মন্দির নির্মাণ করে দেয়ার কথা বলে গাছ পাচারকারীরা পাড়াবাসীর কাছ থেকে একটি আবেদনে স্বাক্ষর নেয়। পরে তারা প্রতারণার আশ্রয় নিয়ে ওই আবেদনটি ব্যবহার করে গাছ রিজাভের গাছ কেটে নিচ্ছে। 

স্থানীয়রা জানান, আলীকদম উপজেলার গাছ ব্যবসায়ী মোহাম্মদ আলী ও কক্সবাজারের চকরিয়া এলাকার কুতুব সওদাগর মিলে রিজার্ভটি বনটি উজাড় করছেন।

তাদের অভিযোগ, শ্রমিকরা পেট্রোলচালিত করাত দিয়ে প্রতিদিন রিজাভের বড় বড় গাছ কেটে নিচ্ছে। আগে হস্তচালিত করাত ব্যবহার করা হলেও সময় বেশি লাগায় এখন সেখানে পেট্রোলচালিত করাত ব্যবহার করে হরদম গাছ কাটা হচ্ছে। 

সরেজমিনে দেখা গেছে, রিজার্ভ বনটি কেটে উজাড় করে ফেলা হয়েছে। বনের বড় বড় প্রাকৃতিক গাছ পেট্রোলচালিত করাত দিয়ে কেটে স্তুপ করে রাখা হয়েছে পাড়ার কাছে। ট্রাকে করে সুবিধামত সময়ে বিশেষ করে রাতের আঁধারে পাচার করা হচ্ছে এসব গাছ।

স্থানীয়রা জানান, দিরি পাড়া থেকে গাছগুলো আমতলি এলাকায় জমা করে সেখান থেকে চকরিয়ায় নিয়ে যাওয়া হচ্ছে। এছাড়া প্রায় সময় রাতের আঁধারে ট্রাকে করে সরাসরি চকরিয়ায় পাচার করা হচ্ছে পাড়া রিজাভের মূল্যবান গাছ। 

আলীকদম সদর ইউনিয়নের স্থানীয় ইউপি সদস্য আবদুল মতিন জানান, দীর্ঘদিন থেকে দিরি পাড়া এলাকার মূল্যবান দুর্লভ প্রজাতির গাছগুলো পাচার হয়ে যাচ্ছে। আলীকদম চকরিয়া সড়কে বিভিন্ন চেকপোস্ট থাকার পরও রাতের আঁধারে পাচারকারী চক্রটি ট্রাকে করে গাছ চকরিয়ায় নিয়ে যাচ্ছে। 

পাড়ার লোকজন জানান, বাধা দিলেও পাচারকারী চক্রটি উল্টো হুমকি-ধামকি দিয়ে রিজার্ভ বনের গাছ কেটে চলেছে। 

এ বিষয়ে জানতে চাওয়া হলে কাঠ ব্যবসায়ী মোহাম্মদ আলী জানান, যে এলাকা থেকে গাছ কাটা হচ্ছে তা রিজার্ভ নয়। সেখানে জোত পারমিটের মাধ্যমে বৈধ পন্থায় গাছ কাটা হচ্ছে। 

লামা বন বিভাগের তৈন রেঞ্জের রেঞ্জ কর্মকর্তা শামসুল হুদা জানান, খবর পাওয়ার পর বৃহস্পতিবার দিরি পাড়া এলাকায় অভিযান চালানো হয়েছে। সেখান থেকে প্রায় ৫০০ ঘনফুট কাঠ জব্দ করা হয়েছে। 

বন বিভাগের বেশ কয়েকটি চেকপোস্ট থাকার পরও রাতের আঁধারে পাচারের সময় ট্রাকগুলো কেন আটক করা হয় না জানতে চাইলে রেঞ্জ কর্মকর্তা কোনো সদুত্তর দিতে পারেননি।

এ বিষয়ে লামা বনবিভাগের বিভাগীয় বন কর্মকর্তা কামাল উদ্দিন আহম্মেদ সাংবাদিকদের জানান, দিরি পাড়া এলাকা থেকে কাঠ পাচারের বিষয়টি তাদের জানা নেই। তবে বিষয়টি সরেজমিন দেখে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

বিডি প্রতিদিন/২৩ সেপ্টেম্বর ২০১৮/আরাফাত

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর