১৬ অক্টোবর, ২০১৮ ১৮:০১

তিনটি সম্মাননায় ভূষিত মুক্তিযোদ্ধা-কবি ডা. মখদুম আজম মাশরাফী

অনলাইন ডেস্ক

তিনটি সম্মাননায় ভূষিত মুক্তিযোদ্ধা-কবি ডা. মখদুম আজম মাশরাফী

মখদুম আজম মাশরাফী। একাধারে মুক্তিযোদ্ধা, প্রবাসী, লেখক, চিকিৎসক এবং রাজনীতিক। অস্ট্রেলিয়া প্রবাসী এই পঞ্চ-প্রতিভা ধারণকারীর পৈতৃক নিবাস বৃহত্তর রংপুরের নীলফামারী জেলার ডোমারে। তবে দেশের বাইরে থাকলেও তিনি যেমন ভুলেননি নিজ মাতৃভূমিকে, তেমনি তাকেও ভুলতে পারেননি এলাকার মানুষ। সম্প্রতি নিজ জেলা নীলফামারী থেকে তিনটি সম্মাননা পেয়েছেন এই গুণী ব্যক্তি।

নীলফামারী শিল্পকলা একাডেমি মিলনায়তনে সম্প্রতি আয়োজন করা হয় বহুমাত্রিক কবিতা-কথাসাহিত্য কর্মশালা। এতে লেখক হিসেবে যোগ দেন মখদুম আজম মাশরাফী। কর্মশালাটির আয়োজন করে ‘তিনবাংলা’। যা বাংলাদেশ-ভারত-প্রবাসবাংলা’র সাহিত্য-সংস্কৃতি-প্রধান বিশ্বসংগঠন। কর্মশালার উদ্বোধন করেন গ্লোবাল প্রেসিডেন্ট কবি সালেম সুলেরী। দুই পর্বের প্রধান অতিথি ছিলেন দু’জন বিশিষ্ট ব্যক্তিত্ব। সমাপনীতে সরকারের অতিরিক্ত সচিব লেখক গোলাম শফিক। সূচনায় নীলফামারী সরকারি কলেজের অধ্যক্ষ দেবীপ্রসাদ রায়। সভাপতিত্ব করেন কর্মশালা কমিটির আহ্বায়ক আহসান রহীম মনজিল।
 
অনুষ্ঠানে ‘মেয়র সম্মাননা’ পান কবি মখদুম আজম মাশরাফী। নীলফামারী পৌর মেয়র দেওয়ান কামাল আহমদ সম্মাননাটির প্রবর্তক। কর্মশালায় উপস্থিত হয়ে প্রশিক্ষক-উদ্যোক্তা-প্রশিক্ষণার্থীদের শুভেচ্ছা জানান। ৩৬৭ জন অংশগ্রহণকারী ও অতিথিবৃন্দকে মধ্যাহ্নভোজে আপ্যায়িতও করেন। তার পক্ষে আনুষ্ঠানিকভাবে ‘মেয়র সম্মাননা’ তুলে দেন প্রধান অতিথিদ্বয়। উদ্বোধক ছাড়াও প্রশিক্ষকবৃন্দকেও সম্মাননা প্রদান করা হয়। কবি সালেম সুলেরী ছাড়াও প্যানেলে প্রশিক্ষক ছিলেন দু’জন। বাংলা একাডেমির উপ-পরিচালক কবি ড. তপন বাগচী। এছাড়া বিশিষ্ট আবৃত্তিশিল্পী অধ্যাপিকা রুবীনা আজাদ। যোগ দেন অ্যামেরিকা প্রবাসী কবি ডা. রওনক আফরোজ। এছাড়া ছিলেন তিনবাংলার কবি-সংগঠক শিশিরবিন্দু বিশ্বাস। স্বাগত বক্তব্যে কর্মশালা কমিটির সচিব কবি সেলিনা সাথী। ধন্যবাদ দেন অধ্যাপক মোস্তফা ফিরোজ, মারুফ খান, হাবিবুল্লাহ বিশ্বাস।

মখদুম আজম মাশরাফী দ্বিতীয় সম্মাননাটি পান জেলা পরিষদে। এটি ‘তিস্তা নদীজল সংহতি সভা’ সম্মাননা। তুলে দেন জেলা পরিষদ চেয়ারম্যান বীর-মুক্তিযোদ্ধা জয়নাল আবেদীন। তিনি বলেন, রাজনীতিতে সংস্কৃতির আলো যেন নিভে গেছে। ঠকবাজি আর দ্রুতপ্রাপ্তির প্রচেষ্টায় রাজনীতি আজ কলুষিত। এজন্য ভালো মানুষের প্রতিনিধিত্ব নিশ্চিৎ করতে হবে।

উল্লেখ্য, ১৫ বছর বয়েসে মুক্তিযুদ্ধ করেছেন মখদুম আজম মাশরাফী। ক্লাসের কৃতী ছাত্র ছিলেন বরাবরই। ডোমার হাইস্কুল ও ঢাকা কলেজ থেকে যথাক্রমে মাধ্যমিক, উচ্চ মাধ্যমিক। এমবিবিএস করেছেন রংপুর মেডিকেল কলেজ থেকে। চিকিৎসা পেশায় বিভিন্ন দেশে দীর্ঘদিন কাজ করেছেন। বর্তমান অবস্থান অস্ট্রেলিয়ার নান্দনিক শহরতলী পার্থ। কবি-কথাকার হিসেবে গ্রন্থ রয়েছে অর্ধ ডজন। বিতার্কিক হিসেবে রেডিও-টিভিতে সক্রিয় ছিলেন। ছাত্রজীবনে রাজনীতিতে ছিলেন সতত প্রতিশ্রুতিশীল। বাংলাদেশ ছাত্র ইউনিয়নের ডোমার থানা’র নিবেদিতপ্রাণ সম্পাদক ছিলেন। তারুণ্যের সেই রাজনীতির নেশা এখনও কাটেনি। মুক্তিযুদ্ধে অর্জিত স্বাধীন দেশকে স্বনির্ভরতা দিতে এখনও বদ্ধপরিকর। মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় জাতীয় সংসদে প্রতিনিধিত্ব করতে আগ্রহী। 

অস্ট্রেলিয়া প্রবাসী মাশরাফী তৃতীয় সম্মাননাটি পান ডোমার চাকদাপাড়া মন্দিরের সুসজ্জিত মঞ্চে। ‘প্রাক মহালয়া’ উপলক্ষে ‘সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি উৎসবে’র আয়োজনে। শহীদ ধীরাজ-মিজান স্মৃতি পাঠাগার-এর ‘সম্পাদক সম্মাননা’ সেটি। তুলে দেন সম্পাদক-সংগঠক, সাবেক কমিশনার ময়নুল হক। সভাপতিত্ব করেন মন্দির-সভাপতি সংস্কৃতিসেবী মনোরঞ্জন রায়। স্বাগত বক্তব্য রাখেন মন্দির-সম্পাদক বাবু জগদীশ রায়। 

উৎসবে প্রধান অতিথি ছিলেন অতিরিক্ত সচিব লেখক গোলাম শফিক। বিশষ অতিথি সর্বকবি ডা. রওনক আফরোজ, ড. তপন বাগচী, শিশিরবিন্দু বিশ্বাস। অনুষ্ঠান উদ্বোধক ছিলেন কবি-কথাকার সালেম সুলেরী। তিনি বলেন, আমরা অতিথিরা সবাই আজ সম্মাননা পেলাম। কিন্তু এখানে একটি সম্মাননা বিশেষ বা অতীব গুরুত্বপূর্ণ। যা তুলে দেওয়া হয়েছে কবি-মুক্তিযোদ্ধা ডা. মখদুম আজম মাশরাফীকে। আমরা ভবিষ্যতে এখানে হয়তো সম্মানিত প্রেসিডেন্টকে পাবো। মাননীয় প্রধানমন্ত্রী-মন্ত্রী-এমপি বা চেয়ারম্যান পাবো। কিন্তু একবার একজন মুক্তিযোদ্ধা প্রয়াত হলে আর তা পাবো না। অর্থাৎ ‘মুক্তিযোদ্ধা’কে আমাদের মাঝে পাওয়া এক দুর্লভ বিষয়। আসুন সকলে মাশরাফীর দীর্ঘ আয়ুর জন্য প্রার্থনা করি। মুক্তিযোদ্ধাদের স্বপ্ন বাস্তবায়নে দেশ-ভূখণ্ডকে সুনিপুণভাবে গড়ে তুলি।

বিডি-প্রতিদিন/১৬ অক্টোবর, ২০১৮/মাহবুব

 

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর