২২ অক্টোবর, ২০১৮ ১৯:৪২

নারায়নগঞ্জে নিহত সেই ৪ জনের বাড়ি পাবনায়, এলাকায় শোকের মাতম

পাবনা প্রতিনিধি

নারায়নগঞ্জে নিহত সেই ৪ জনের বাড়ি পাবনায়, এলাকায় শোকের মাতম

নিহত সেই ৪ জন

নারায়নগঞ্জে নিহতদের মধ্যে চার যুবকের বাড়ি পাবনা সদর উপজেলার ধর্মগ্রাম মধ্যপাড়ায়। তাদের একজন গত পনের বছর ধরে ঢাকায় একটি বাস চালালেও, অন্য তিনজন স্থানীয় বেকারী শ্রমিক ছিলেন বলে স্বজন ও স্থানীয়দের দাবি। এ ঘটনায় স্বজনদের মধ্যে ও এলাকায় শোকের ছায়া নেমে এসেছে। 

নিহতরা হলেন, ওই গ্রামের মৃত সোলায়মান খোন্দকারের ছেলে ফারুক খোন্দকার (৩৫), খাইরুল ইসলাম সরদারের ছেলে সবুজ সরদার (৩০), লোকমান হোসেনের ছেলে জহুরুল ইসলাম (৩৫) ও রতনের ছেলে লিটন (৩২)। তাদের বিরুদ্ধে এলাকায় কোন অভিযোগ না থাকলেও সেখানে তারা কেন এ ধরনের হত্যাকান্ডের স্বীকার হলেন প্রশ্ন সবার, তবে স্বজন ও স্থানীয়রা সুষ্ঠু বিচার দাবি করেছেন। 

নিহত ফারুক খোন্দকারের স্ত্রী (বড়) নাজমা খাতুন বলেন, তার স্বামী দীর্ঘ পনের বছর ধরে গাউছিয়া এলাকায় একটি বাসা ভাড়া করে বসবাস করতেন এবং গেন্ডারী এক্সপ্রেসের একটি বাস চালাতেন। ১০ দিন আগেও তিনি বাড়ি এসেছিলেন, সে যদিও সেখানে আরেকটি বিয়ে করেছিলেন, তবুও আমাদের সাথে যোগাযোগ রাখতেন।
  
নিহত ফারুকের মা রাজেদা বেগম কান্না জড়িত কন্ঠে বলেন, আমার একমাত্র সন্তানকে এভাবে কারা হত্যা করেছে, আমি তার বিচার চাই। আমার ছেলে কোন দিন কারও সাথে খারাপ ব্যবহারও করেন নাই, আমি এই ঘটনার সুষ্ঠু বিচার চাই। 

নিহত সবুজের মা আমবিয়া খাতুন বলেন, আমার ছেলে এখানকার আজাদ বেকারীতে কাজ করতো। বেড়ানোর কথা বলে গত সোমবার তার দুই খালাতো ভাই লিটন ও জহুরুলের সাথে বাড়ি থেকে বের হয়। পরে তারা আমাদের জানায় যে, ওরা ফারুকের বাসায় গিয়ে উঠেছে। হঠাৎ সেই বাড়ি থেকে সাদা পোশাক পরা ডিবি পুলিশের পরিচয়ে তাদের তুলে নিয়ে যায়। তবে কারা কেন তাদের তুলে নিয়ে যায়, আমরা কিছুই বলতে পারছি না। পরে নারায়নগঞ্জে গুলিবিদ্ধ অবস্থায় লাশ পাওয়া যায়। প্রথমে স্থানীয়রা মৃতদেহ গুলোর ছবি দেখে সনাক্ত করেন। আমার ছেলে তো কোন ধরনের অপকর্মের সাথে জড়িত নয়, কেন কিভাবে তাদের হত্যা করা হয়েছে কিছুই জানি না বলে কান্নায় ভেঙ্গে পরেন।
 
সবুজের স্ত্রী ছুম্মা খাতুন এক বছরের সন্তানকে নিয়ে আহাজারী করছেন, তার স্বামীকে কারা হত্যা করেছেন। সে তো বেকারীতে কাজ করতো, শুধু বেড়ানোর কথা বলেই বাড়ি থেকে বের হয়েছে।   

এলাকাবাসী আলাউদ্দিনসহ একাধিক লোকজন বলেন, এরা সবাই হত দরিদ্র লোক, সবাই ছোট ছোট কাজ করে কোন ভাবে জীবন নির্বাহ করতেন। বিশেষ করে লিটন, জহুরুল ও সবুজ তিনজনই বেকারীতে কাজ করতেন। মাঝে মধ্যে রিক্সা ভ্যানও চালাত, বেড়াতে গিয়ে কেন তারা এই ধরনের হত্যাকান্ডের স্বীকার হলো আমাদের বোধগম্য নয়। তবে যতটুকু শুনেছি ফারুকের বাসায় তারা তিনজনই ঢাকায় গিয়ে অশ্রয় নেয়। ফারুকের স্ত্রী প্রথমে আমাদের জানায় যে, সাদা পোষাকের লোকজন তাদের ধরে নিয়ে গেছেন। তারপর ফারুকের গাড়ির মহাজন শাহফুজের সঙ্গে কথা বললে তিনি আমাদের পুলিশ ধরে নিয়ে যাওয়ার কথা বলেন। তবে কি কারনে তাদের নিয়ে গেছেন, সেটা তিনি নিশ্চিত করতে পারেন নাই। এখন সেই লোকের ফোনও বন্ধ পাওয়া যাচ্ছে। 

এ বিষয়ে আতাইকুলা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মাসুদ রানা সেই ৪ জনের নিহতের বিষয়টি নিশ্চিত করে বলেন, আমার থানায় তাদের বিরুদ্ধে কোন ধরনের অভিযোগ নেই, তবে তারা এলাকায় থাকতেন না। ঢাকা নারায়নগঞ্জ ও তার আশে পাশে তারা বিভিন্ন অপকর্ম করে বেড়াতেন বলে আমরা শুনেছি। তবে কিভাবে তারা মারা গেছেন বিষয়টি আমার জানা নেই।

প্রসঙ্গত, গত শনিবার রাতে নারায়নগঞ্জ জেলার আড়াইহাজার এলাকায় ঢাকা-সিলেট মহাসড়কের পাশে গুলিবিদ্ধ অবস্থায় তাদের মৃতদেহ পাওয়া যায়।  

 

বিডি-প্রতিদিন/আব্দুল্লাহ সিফাত তাফসীর 

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর