১৬ নভেম্বর, ২০১৮ ১৭:৫৬
শেষ হল কঠিন চীবর দানোৎসব

লাখো পুণ্যার্থীর শ্রদ্ধায় সিক্ত রাঙামাটির ভিক্ষু সংঘ

ফাতেমা জান্নাত মুমু, রাঙামাটি:

লাখো পুণ্যার্থীর শ্রদ্ধায় সিক্ত রাঙামাটির ভিক্ষু সংঘ

লাখো পুণ্যার্থীর শ্রদ্ধায় সিক্ত রাঙামাটি রাজবন বিহারের ভিক্ষু সংঘ। আর মহাদানযজ্ঞ সম্পাদনের মধ্যদিয়ে এ মহোৎসব সম্পন্ন হয়েছে। শুক্রবার বিকাল ৩টায় কঠিন চীবর দানোৎসব উপলক্ষে রাঙামাটি রাজবন বিহারের ৩২ একর বিস্তৃত এলাকা পরিণত হয় লোকারণ্যে। 

এ মহা পুণ্যানুষ্ঠানে সদ্ধর্মানুরাগী অগণিত পুণ্যার্থীর পাশাপাশি ঢল নামে হাজার হাজার দর্শনার্থীর। সব ধর্ম, বর্ণ, সম্প্রদায়ের লক্ষাধিক নারী-পুরুষের মহা সম্মেলনে পুরো বিহার এলাকা জনসমুদ্রে পরিণত হয়। যেন তিল ধারণের জায়গাটুকু অবশিষ্ট ছিল না কোথাও। লাখো মানুষের কণ্ঠে সাধু, সাধু, সাধু ধ্বনিতে প্রকম্পিত হয় পুরো রাজবন বিহার।

রাজবন বিহার মাঠে আয়োজিত ধর্মীয় অনুষ্ঠানে পুণ্যার্থীদের উদ্দেশে দেশনা দেন রাজবন বিহারের আবাসিক প্রধান শ্রীমৎ প্রজ্ঞালংকার মহাস্থবিরসহ শীর্ষ বৌদ্ধ ভিক্ষুরা। পঞ্চশীল প্রার্থনা করেন রাঙামাটি রাজবন বিহারের প্রধান পৃষ্ঠপোষক ও রাঙামাটি চাকমা সার্কেল চিফ ব্যারিষ্টার দেবাশীষ রায়। এসময় রাঙামাটি চাকমা সার্কেল চিফের সহধর্মীনি ইয়েন ইয়েন, রাজবন বিহার উপাসক-উপাসিকা পরিষদের সিনিয়র সভাপতি গৌতম দেওয়ান উপস্থিত ছিলেন। 

পরে পরিনির্বাণগত বনভান্তের উদ্দেশে ২৪ ঘণ্টার মধ্যে তৈরি চীবর ভিক্ষুসংঘের হাতে তুলে দেন দেবাশীষ রায়।  
সমবেত পুণ্যার্থীদের উদ্দেশে সর্বজনপূজ্য মহাসাধক শ্রীমৎ সাধনানন্দ মহাস্থবির বনভান্তের হিতোপদেশ উদ্ধৃতি দিয়ে শ্রীমৎ প্রজ্ঞালংকার মহাস্থবির গণমানুষকে সব সময় সৎ ও ন্যায়নীতির পথ অবলম্বন করে হিংসা-বিদ্বেষ, স্বার্থপরতা, লোভ-লালসা, ক্ষমতার গর্ব, বর্বরতা ও পাশবিকতার বিপরীতে বুদ্ধের প্রেম, সাম্য, মৈত্রী, ক্ষমা, ত্যাগ, অহিংসা, আত্মসংযম ও করুণার বশবর্তী হয়ে বিশ্বমানবের সুখ-শান্তি ও কল্যাণে ব্রত থাকার পরামর্শ দেন।  
এছাড়া পুর্ণ্যাথীদের উদ্দেশ্যে বৌদ্ধ আর্যপুরুষ মহাসাধক শ্রীমৎ সাধনানন্দ মহাস্থবির বনভান্তের সকল প্রাণীর হিতার্থে দেশনা (রেকর্ডীন)  শুনানো হয়।

বৃহস্পতিবার চরকায় সুতা কেটে শুরু হওয়া এ ধর্মীয় মহোৎসব শুক্রবার সন্ধ্যায় প্রদীপ প্রজ্জ্বলন ও ফানুস উত্তোলনের মধ্য দিয়ে শেষ হয়। সকাল থেকে উদযাপিত হয় ভিক্ষুসংঘের পিন্ডদান, বুদ্ধপূজা, কল্পতরু শোভাযাত্রা, পঞ্চশীল প্রার্থনা, চীবর উৎসর্গ, সংঘদান, অষ্ট পরিস্কার দান, ধর্মসভা, ধর্মীয় দেশনা।

প্রসঙ্গত, মহামতি গৌতম বুদ্ধের জীবদ্দশায় তার প্রধান সেবিকা মহাপুণ্যবতী বিশাখা প্রবর্তিত হাজার বছরের নিয়মে রাঙামাটি রাজবন বিহারে প্রথম কঠিন চীবর দানোৎসব আয়োজন করা হয় ১৯৭৩ সালে । 

বিডি প্রতিদিন/১৬ নভেম্বর ২০১৮/হিমেল

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর