২০ নভেম্বর, ২০১৮ ১৫:৩৫

ফুজাইলের জীবনযুদ্ধ

ফুলপুর (ময়মনসিংহ) প্রতিনিধি

ফুজাইলের জীবনযুদ্ধ

ফুজাইল এক সম্ভাবনাময় শিশুর নাম। কলম ও কাজ নিয়ে জীবনযুদ্ধে অবতীর্ণ এই শিশু জয়ী হতে চায়। তার বাড়ি ময়মনসিংহের ফুলপুর উপজেলার পয়ারী ইউনিয়নের গুপ্তেরগাঁও গ্রামে। আমুয়াকান্দায় বাগানবাড়ি রোডে তাদের নিজেদের একটি ঘর থাকলেও মা শরিফা বেগম ঢাকায় একটি গার্মেন্টস-এ কাজ করায় সে তার চাচার ঘরে থাকে। চাচা রাজন একজন ফেরিওয়ালা। বাজারে বাজারে ঘুরে বড়া বিক্রি করেন তিনি। ফুজাইল (৮) সকাল বেলায় এমবিশন স্কুলের আমুয়াকান্দা শাখায় কেজিতে পড়ে। আর সন্ধ্যা হলে চাচার সাথে ফেরি করে। বড়া বানায়। বড়া বিক্রি করে। সে অত্যন্ত মেধাবী, মায়াবী ও সুন্দর চেহারার অধিকারী। খুবই হাসিখুশি ও মিশুক।

এমবিশন স্কুলের প্রধান শিক্ষক কামাল মাহমুদ ও আমুয়াকান্দা শাখা প্রধান মাহবুব জানান, ফুজাইল খুবই ভাল ছাত্র। ওকে সবাই আদর করে। এতিম ও গরিব বলে তার কাছ থেকে বেতনও কম নেওয়া হয়।

২০১৬ সনে এক মর্মান্তিক সড়ক দুর্ঘটনায় ফুজাইলের বাবা রমজান আলী মারা যান। রমজান একজন দিনমজুর ছিলেন। গ্রামে সামান্য জায়গাজমি যা ছিল, তা বিক্রি করে আমুয়াকান্দা বাজার সংলগ্ন পয়ারী-বাগান বাড়ি রোডে এক শতাংশ জমি কিনেন। আর একটি পিক-আপ কিনে নিজেই  চালাতেন। পরে কুরবানীর ঈদের মাত্র তিন দিন আগে কুমিল্লার চৌদ্দগ্রামে মুখোমুখি সংঘর্ষে সর্বনাশা ট্রাক তার জীবন কেড়ে নেয়। ঈদানন্দ আর ভাগ্যে জুটেনি ফুজাইলদের। শুধু তাই নয়, এরপর থেকে যতবার ঈদ আসে, বাসায় কান্নার রোল পড়ে যায়।

ফুজাইল বলে, বাবার কথা মনে হলে কান্না ধরে রাখতে পারি না। তিনি আমাকে খুব আদর করতেন।

ফুজাইলের বাবা মারা যাওয়ার পর আয় রোজগার বন্ধ হয়ে যায়। পরিবারে নেমে আসে নানা কষ্ট। পেটের দায়ে বাড়ি ছাড়েন ফুজাইলের মা শরিফা বেগম। ঢাকায় এক গার্মেন্টস-এ কাজ নেন তিনি। ফলে অল্প বয়সেই ফুজাইলকে হারাতে হয় মায়ের সংশ্রব। ফুজাইলের সামনে তখন বিরাজ করে কঠিন চ্যালেঞ্জ। কিন্তু ফুজাইল ভেঙে পড়ার কেউ নয়। কলম ও কাজ নিয়ে জীবনযুদ্ধে জড়িয়ে পড়ে সে। সে সকালে স্কুল করে আর সন্ধ্যায় ফেরিওয়ালা চাচা রাজনের কাজে সাহায্য করে। এভাবেই তার এগিয়ে চলা।

জানতে চাইলে ফুজাইলের চাচা রাজন জানান, ভাতিজা যাতে কষ্ট না পায় সেভাবেই রাখি। কোন কাজের চাপ দেওয়া হয় না। তার বাবার আদর দিয়ে লালন-পালন করে আসছি। মাঝে মাঝে ফুজাইল তাকে একটু সাহায্য করে বলেও তিনি জানান।

তুমি কি হতে চাও জানতে চাইলে ফুজাইল এ প্রতিবেদককে জানান, ভবিষ্যতে আমি মাওলানা হতে চাই। মাওলানা হয়ে দেশ ও দশের উপকারে কাজ করবে বলেও সে জানায়।

স্কুল পড়ুয়া ফুজাইলের মুখে এমন কথা শুনে আশ্চর্যবোধ করলে তার চাচা রাজন জানান, তার বাবারও এমনই প্রত্যাশা ছিল।

মোবাইলে ফুজাইলের মায়ের সাথে কথা হলে তিনি বলেন, ছেলের ভবিষ্যতের জন্যেই ঢাকায় থাকি, কষ্ট করি। এ সময় নানা কষ্টের কথা তুলে ধরে তিনি ছেলের জন্য দোয়া চান।

ফুলপুর ডিগ্রি কলেজের মনোবিজ্ঞান বিভাগের সহকারি অধ্যাপক সাখাওয়াত হোসেন বলেন, ফুজাইল সম্ভাবনাময় একটি ছেলে। তার যত্ন নেওয়া উচিত।  

বিডি প্রতিদিন/ফারজানা

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর