১৬ জানুয়ারি, ২০১৯ ১৩:০৮

ঠাকুরগাঁওয়ে অবৈধভাবে গড়ে উঠছে ইটভাটা

নিয়ম মানছে না কেউ, প্রশাসন নিরব

আব্দুল লতিফ লিটু, ঠাকুরগাঁও

ঠাকুরগাঁওয়ে অবৈধভাবে গড়ে উঠছে ইটভাটা

নিয়মনীতির তোয়াক্কা না করে ঠাকুরগাঁওয়ের পীরগঞ্জ উপজেলায় গড়ে উঠছে নতুন নতুন ইটভাটা। কাগজে কলমে কয়লা ব্যবহারের কথা থাকলেও বেপরোয়াভাবে পোড়ানো হচ্ছে কাঠ-খড়ি। ফলে ক্ষতির মুখে পড়ছে পরিবেশ। আর প্রশাসনের পক্ষ থেকে ব্যবস্থা না নেয়ার সুযোগে অবৈধভাবে লাখ লাখ টাকা আয় করছে ভাটা মালিকরা।

পীরগঞ্জ উপজেলার আয়তন ৩৫৩ বর্গ কিলোমিমিটার। আয়তনে ছোট হলেও প্রয়োজনের তুলনায় দিন দিন দীর্ঘ হচ্ছে ইটভাটার পরিসংখ্যান। ইটভাটার সংখ্যা বেড়ে যাওয়ায় পীরগঞ্জ উপজেলার হাজার হাজার গাছ কর্তনের পাশাপাশি নষ্ট হচ্ছে রাস্তাঘাট। এতে পরিবেশ বিপর্যয়ের পাশাপাশি সরকারও আর্থিকভাবে ক্ষতিগ্রস্থ হচ্ছে। প্রতি বছরেই ইটভাটা এলাকার রাস্তাগুলো মেরামত করা হচ্ছে এলজিইডির পক্ষ থেকে। আর দুর্বৃত্তরা রাতের আধারে গাছ কেটে বিক্রি করছে ভাটা মালিক ও স্থানীয় করাতকল মালিকদের কাছে। অন্যদিকে ইটভাটার অনেক মালিক আকারে ইট ছোট করে বিক্রি করায় প্রতারণার শিকার হচ্ছে ইট ক্রেতারা।

খোঁজ নিয়ে দেখা গেছে, প্রতিটি ইটের আকার হতে হবে সাড়ে ৯, সাড়ে ৪ এবং পৌনে ৩ ইঞ্চি  বা ১১৭ দশমিক ৫৬ ঘনইঞ্চি। সেই অনুপাতে ইট তৈরি না করে নিজের ইচ্ছেমত ফরমা তৈরি করে এই উপজেলার ভাটাগুলোতে বানানো হচ্ছে ইট। ইটভাটার মালিকরা চড়া দামে ইট বিক্রির পাশাপাশি আকারে ছোট করে মানুষের সাথে প্রতারণা করে আসছে বছরের পর বছর ধরে।

সরেজমিনে দেখা গেছে, অবৈধভাবে পৌরসভাসহ উপজেলার বিভিন্ন এলাকার শিক্ষা প্রতিষ্ঠান সংলগ্ন এবং ফলদ বৃক্ষ বাগানের পাশে ঘনবসতি এলাকায় কৃষি জমিতে ১৭টি ইটভাটা স্থাপন করা হয়েছে। ইট তৈরির কাঁচামাল হিসেবে কৃষি জমির উপরিভাগে টপসয়েল এর মাটি কেটে তৈরি করা হচ্ছে ইট। আর এসব ইটভাটার পাশে কয়লা দেখা গেলেও ইটভাটার জ্বালানি হিসেবে কয়লার বদলে পোড়ানো হচ্ছে কাঠ।

পীরগঞ্জ পৌর শহর সংলগ্ন গুয়াগাঁও, ভেলাতৈড় এবং উপজেলার চাপোড়, সিন্দুন্না ও লোহালী গ্রাম এলাকায় সবচেয়ে বেশি ইটভাটা স্থাপন করতে দেখা গেছে। ইট প্রস্তুত ও ভাটা স্থাপন সংক্রান্ত নিয়ন্ত্রণ আইন অনুযায়ী বসতবাড়ি, শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, সরকারি বা ব্যক্তি মালিকানাধীন বন, অভয়ারণ্য ও বাগানের নিকটবর্তী এলাকায় এবং কৃষি জমিতে ইটভাটা স্থাপনে নিষেধাজ্ঞা রয়েছে। এসব বিধিনিষেধ অমান্য করে ভাটার মালিকরা প্রশাসনিক কর্মকর্তাদের 'ম্যানেজ' করে নিষিদ্ধ এলাকায় ইটভাটা স্থাপন করে বীরদর্পে ইটশিল্পের ব্যবসা পরিাচলনা করছেন।

পীরগঞ্জ ইটভাটা মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক ও বিএসবি ব্রিক্স এর মালিক রেজুয়ানুল হক বিপ্লব জানান, পীরগঞ্জে ২০ ভাটার মধ্যে ১৫-১৭টি চালু আছে। কয়লার সরবরাহের অভাবের কারণে কাঠ পোড়ানো হচ্ছে। আর ইটের আকার ছোট করা হয় না বলে অস্বীকার করেন তিনি। তবে পূর্ণাঙ্গরূপে উপজেলার সকল ইটভাটার কাজপত্র নেই এটা সত্য বলে জানান তিনি।

এ বিষয়ে জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক আফতাব হোসেন জানান, ঘরবাড়ি, কলকারখানা ও ইটভাটা স্থাপনের কারণে প্রতিবছর ব্যাপক হারে ফসলি জমি কমে যাচ্ছে। যেসব কৃষি জমির উপরের জমির মাটি কেটে ইট তৈরির কাজে ব্যবহার করা হচ্ছে তা কমপক্ষে ১৫-২০ বছরের জন্য উৎপাদন ক্ষমতা হারাছে।

এ বিষয়ে পীরগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী অফিসার এ ডব্লিউ এম রায়হান শাহ্ জানান, প্রশাসন বৈধভাবে ভাটা চালানোর অনুমতি দিয়ে থাকে। যদি কোন ভাটা মালিক অবৈধভাবে ভাটা চালায় বা ইটের আকার ছোট করে প্রতারনা করে তাহলে তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হবে।

এ ব্যাপারে জেলা প্রশাসক ড.কেএম কামরুজ্জামান সেলিম জানান, ইটভাটায় কাঠ পোড়ানোর কোন নির্দেশনা নেই। যদি কেউ নির্দেশনা অমান্য করে তবে তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

বিডি প্রতিদিন/ফারজানা

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর