২৩ জানুয়ারি, ২০১৯ ১৩:৫০

টেকনাফে বড় আকারের ইলিশের মণ ১৪ হাজার টাকা

টেকনাফ (কক্সবাজার) প্রতিনিধি

টেকনাফে বড় আকারের ইলিশের মণ ১৪ হাজার টাকা

কক্সবাজারের টেকনাফ উপকূলের সমুদ্রে জেলেদের জালে ধরা পড়ছে প্রচুর পরিমাণ ইলিশ। তবে দাম আগের তুলনায় অনেক কম। ইলিশে পচন ধরার শঙ্কায় জেলেরা কম দামে বিক্রি করতে বাধ্য হচ্ছেন বলে দাবি করেছেন ফিশিং ট্রলারের মালিকেরা। তাদের হিসেবে গত কয়েক দিনে ২৫০ মেট্রিক টনের বেশি মাছ ধরা পড়েছে।

জেলেরা বলছেন, হঠাৎ করে প্রচুর পরিমাণ ইলিশ মাছ ধরা পড়ায় স্থানীয়ভাবে কমে গেছে চাহিদা। এ ছাড়া লবণ ও বরফের দাম বেড়ে যাওয়ায় সংরক্ষণের খরচও বেড়ে গেছে। এ কারণে অনেক ব্যবসায়ী মাছ সংরক্ষণ করছেন না। এসব কারণে মাছের দাম কমে গেছে।

তারা বলছেন, আগে প্রচুর পরিমাণ ইলিশ ধরা পড়লেও দাম কম ছিল না। তবে এবারই বেশি ইলিশ ধরা পড়ার সঙ্গে সঙ্গে দামও অর্ধেকে নেমে এসেছে।

টেকনাফ সদরের মহেশখালীয়াপাড়া, তুলাতুলি, লম্বরী, সাবরাংয়ের শাহপরীর দ্বীপ, মুন্ডার ডেইল, বাহারছড়া, হাদুরছড়া, শামলাপুরের সাগরপাড়ে গিয়ে দেখা যায়, মাছ ধরার ফিশিং ট্রলার ও ঝুড়িতে পরিমাণের তুলনায় সামান্য কিছু বরফ দিয়ে ইলিশ ভর্তি করে রাখা হয়েছে। আবার কোথাও কোথাও মাছে পচন ধরে দুর্গন্ধ ছড়িয়ে পড়েছে।

জেলেদের সাথে কথা বলে জানা যায়, চলতি মৌসুমে তেমন ইলিশ ধরা না পড়লেও হঠাৎ করে গত কয়েকদিনে প্রতিটি ট্রলারে জেলেরা ৫ থেকে ১০ মণ পর্যন্ত ইলিশ মাছ পেয়েছেন। গত কয়েকদিনে প্রতি মণ ছোট (৪০০-৬০০ গ্রাম) ইলিশ বিক্রি হয়েছে ১০ থেকে ১২ হাজার টাকা। প্রতি কেজি পড়ছে ৩০০ থেকে ৩৫০ টাকা।

বড় (৭০০-৮০০ গ্রামের বেশি) ইলিশ বিক্রি হয়েছে মণ প্রতি ১৪ থেকে ১৬ হাজার টাকা। প্রতি কেজি পড়ছে ৩৫০-৪০০ টাকা। তবে গত সপ্তাহে আগেও ছোট আকারের ইলিশ মাছ প্রতি মণ ১৬ থেকে ২০ হাজার টাকায় বিক্রি হয়েছে। আরও বড় আকারের ইলিশ বিক্রি হয়েছে প্রতি মণ ২৬ থেকে ৩২ হাজার টাকায়।

মুন্ডার ডেইলের জেলে আবুল কাসেম জানান, গত দুদিন বেশি মাছ ধরা পড়েছে। অনেকে জালের কিছু অংশ কেটে সমুদ্রে ফেলে দিয়ে এসেছেন। অনেকে জাল থেকে মাছ খুলতে না পারায় জাল-মাছ একসঙ্গে কূলে টেনে নিয়ে আসেন। কিন্তু দাম কমে যাওয়ায় তিনি হতাশা ব্যক্ত করেন।

শাহপরীর দ্বীপ এলাকার জেলে নুর মোহাম্মদ, ফিশিং ট্রলার নিয়ে কূলে ফিরে আসার পর বরফ দিতে না পারায় রোদের তাপে অনেক মাছ পচে গেছে।

উপজেলা মৎস্য কর্মকর্তার কার্যালয় সূত্রে জানা যায়, ইলিশের প্রজনন মৌসুমে মা মাছ ধরা বন্ধ থাকায় সাগরে মাছের উৎপাদন বেড়েছে। গত দুই সপ্তাহে টেকনাফ উপকূলে ৪০০ মেট্রিক টন ইলিশ ধরা পড়েছে। এর মধ্যে গত দুই দিনের ৩০০ মেট্রিকটন মাছ জেলা ও বিভাগীয় শহরে সরবরাহ করা হয়েছে।

টেকনাফ বাসস্টেশন এলাকার পাইকারি ব্যবসায়ী মোহাম্মদ রফিক সওদাগর বলেন, মাছ কিনে বরফ ও লবণ দিয়ে দেশের বিভিন্ন বাজারে পাঠান। মাছ সহজলভ্য হলেও বরফ ও লবণের দাম বেশি। এ ছাড়া শ্রমিকের সংকটও আছে। এ কারণে তারা ইলিশ সংরক্ষণ করতে পারছেন না।

পাইকারি ব্যবসায়ীদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, মৌসুমের শুরুতে বড় এক খণ্ড বরফের দাম ছিল ১৮০ থেকে ২০০ টাকা পর্যন্ত। বর্তমানে একই আকারের বরফের দাম ২৫০ টাকা। খোলা লবণও কেজি প্রতি ৪০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। ফলে মাছ থাকলেও সংরক্ষণ খরচ বেশি পড়ছে।

জানতে চাইলে টেকনাফ উপজেলা মৎস্য কর্মকর্তা মো. দেলোয়ার হোসেন জানান, স্থানীয় জেলেরা ইলিশ ধরার ব্যাপারে সরকারি নিষেধাজ্ঞা মেনে চলায় ও মৎস্য বিভাগের তৎপরতার কারণে এবার বেশি ইলিশ পাওয়া যাচ্ছে।

বিডি প্রতিদিন/ফারজানা
 

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর