২৩ জানুয়ারি, ২০১৯ ১৪:৫৫

অন্তঃসত্ত্বাকে নির্যাতনের অভিযোগে এসআইয়ের বিরুদ্ধে মামলা

দুটি তদন্ত কমিটি গঠন

মেহেরপুর প্রতিনিধি:

অন্তঃসত্ত্বাকে নির্যাতনের অভিযোগে এসআইয়ের বিরুদ্ধে মামলা

প্রতীকী ছবি

মেহেদী হাসান বাকের নামের এক যুবককে ধরতে গিয়ে তাকে না পেয়ে তার অন্তঃসত্ত্বা স্ত্রীর উপর নির্যাতন, ভাঙচুর, নগদ টাকা, স্বর্ণালংকার লুটের অভিযোগে লস্কর লাজুল ইসলাম ওরফে জিয়া নামের এক পুলিশ কর্মকর্তার বিরুদ্ধে আদালতে মামলা হয়েছে। অভিযুক্ত পুলিশ কর্মকর্তা জিয়া মেহেরপুর সদর থানার উপ-পরিদর্শক (এসআই) হিসেবে কর্মরত রয়েছেন।
 
বুধবার দুপুরে বাকের হোসেনের স্ত্রী মারিয়া খাতুন বাদী হয়ে মেহেরপুরের সিনিয়র জুডিশিয়াল ২য় আদালতের বিচারক মো. হাদিউজ্জামানের আদালতে এসআই জিয়ার বিরুদ্ধে একটি মামলা দায়ের করেছেন। যার পিটিশন নম্বর -৮/১৯। মামলাটি আমলে নিয়ে অতিরিক্ত পুলিশ সুপারকে তদন্তের নির্দেশ দিয়েছেন।

অপরদিকে, মেহেরপুরের পুলিশ সুপার এ ঘটনায় অতিরিক্ত পুলিশ সুপার শেখ জাহিদুল ইসলামকে প্রধান করে তিন সদস্যের আরো একটি তদন্ত কমিটি গঠন করেছেন। তদন্ত কমিটিকে ৩ দিনের মধ্যে প্রতিবেদন জমা দিতে বলা হয়েছে। কমিটির অন্য সদস্যরা হলেন, জেলা গোয়েন্দা পুলিশের (ডিবি) ওসি ওবাইদুর রহমান, ডিআইও ওয়ান ফারুক হোসেন।

মামলার বিবরণে বাকেরের অন্তস্বত্তা স্ত্রী মারিয়া খাতুন বলেন, গত মঙ্গলবার দুপুরে আমি বাড়িতে একা ছিলাম এবং দুপুরের রান্না করছিলাম। এমন সময় এসআই জিয়া আরো দুই জন পুলিশ কনষ্টেবল নিয়ে বাড়ির দরজায় ডাকাডাকি শুরু করেন। বাড়িতে কেউ নাই বলাতে তিনি ক্ষিপ্ত হয়ে টিনের দরজায় লাথি মারলে দরজা খুলে যায়। তখন তিনি ভিতরে প্রবেশ করেন। এসময় গালিগালাজ করতে করতে ঘরের মধ্যে ঢুকে ঘরের আসবাবপত্র তছনছ করা শুরু করেন। চেয়ার টেবিলসহ বিভিন্ন জিনিস ভাঙচুর করে এবং আলামারিতে থাকা নগদ টাকা ও স্বর্ণালংকার লুট করে। পরে রান্না ঘরে মোটরসাইকেল দেখে চাবি চায়। চাবি দিতে না চাইলে তখন তাকে ধাক্কা দিয়ে ফেলে দেয় এবং বিভিন্ন হুমকি দেয়। এক পর্যায়ে চাবি দিলে ১ লাখ ৮০ হাজার টাকা মূল্যের এ্যাপাচি আরটিআর ব্রান্ডের মোটরসাইকেলটি নিয়ে বাড়ি থেকে বেরিয়ে যান এবং বলেন টাকা নিয়ে গিয়ে মোটরসাইকেল ফেরত নিয়ে আসতে।

এজাহারো ওই নারী আরো জানান, ড্রেসিং টেবিলের ড্রয়ারে থাকা নগদ ৮৫ হাজার টাকা, ৯১ হাজার টাকা মূল্যে স্বর্ণালংকার লুট করে নিয়ে গেছেন।

এ ব্যাপারে মেহেদী হাসান বাকের বলেন, সোহেল নামের এক অটোচালকের সাথে পূর্বের একটি বিরোধ থেকে সে থানায় আমার বিরুদ্ধে একটি অভিযোগ দায়ের করে। সেই অভিযোগের প্রেক্ষিতে এসআই জিয়া আটক করতে আসেন।

তিনি অভিযোগ করে জানান, অপরাধ করলে আমি করেছি। আমার স্ত্রী কোন অপরাধ করেনি। আমার বাড়ি ঘর কোন অপরাধ করেনি। আমার বাবাও একজন পুলিশ কর্মচারী। পুলিশ কর্মকর্তা হিসেবে এ ধরণের ব্যবহার তিনি করতে পারেন না। আমরা এ ঘটনার বিচার চাই।

প্রতিবেশী আনজিরা খাতুন জানান, তিন পুলিশ এসে বাড়ির ভিতরে সবকিছু ভেঙে মোটরসাইকেলটি নিয়ে চলে গেলো। যাওয়ার সময় আজে বাজে গালিগালাজ করেছে। বাকেরের পোয়াতি (অন্ত:স্বত্ত্বা) বউকে ধাক্কা দিয়ে ফেলে দিয়েছে।

বাকেরের নানী সফুরা খাতুন জানান, বার বার করে মোটরসাইকেলটি না নিয়ে যাওয়ার জন্য হাতজোড় করলাম তবুও শুনলো না ওই পুলিশটা। মোটরসাইকেল নিয়ে গেল আবার টাকা নিয়ে গিয়ে ছাড়িয়ে আনতেও বললো।

এদিকে অভিযুক্ত এস আই লস্কর লাজুল ইসলাম জিয়া বলেন, তাঁর বিরুদ্ধে করা সকল অভিযোগ মিথ্যা ও ভিত্তিহীন। তবে স্বীকার করে তিনি বলেন, বাড়িতে একটি অনটেষ্ট (লাইসেন্স বিহীন) মোটরসাইকেল ছিল সেটি নিয়ে এসেছি। মোটরসাইকেল কোন অপরাধে নিয়ে আসলেন এমন প্রশ্নে তিনি কোন জবাব দেননি।

মেহেরপুরের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার ও পুলিশ প্রশাসনের তদন্ত কমিটির প্রধান শেখ জাহিদুল ইসলাম জানান, তদন্ত করে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

প্রসঙ্গত, মেহেদী হাসান বাকেরের পিতা সামসুল ইসলাম একজন পুলিশের কনস্টেবল। তিনি রংপুরে কর্মরত রয়েছেন।

বিডি প্রতিদিন/হিমেল

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর