বাগেরহাটের রামপালে বিএনপি নেতা খাজা মঈনুদ্দিন আখতারকে বোমা মেরে হত্যার কারণ 'ইউনিয়ন পরিষদের নির্বাচন' ও 'পারিবারিক জমি সংক্রান্ত বিরোধ'কে কেন্দ্র করে হয়েছে। পুলিশের প্রাথমিক তদন্তে এ তথ্য উঠে এসেছে।
তবে শুক্রবার বিকাল পর্যন্ত এই হত্যাকাণ্ডে জড়িত কাউকে গ্রেফতার করতে পারেনি পুলিশ। রামপাল থানায় কোন মামলাও হয়নি।
ময়নাতদন্ত সম্পন্ন হওয়ার পর শুক্রবার বিকালে বিএনপি নেতাকে সোনাতুনিয়া মাঠে জানাজা শেষে পারিবারিক গোরস্থানে দাফন করা হয়েছে।ঘটনার পর এলাকায় থমথমে পরিস্থিতি বিরাজ করছে। এলাকায় অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে। বাগেরহাটের পুলিশ সুপার পংকজ চন্দ্র রায় ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছেন।
বৃহস্পতিবার রাত সাড়ে ৭ টার দিকে খুলনা-মোংলা মহাসড়কে রামপাল উপজেলার ভরসাপুর বাসস্ট্যান্ড এলাকায় বিএনপি নেতা খাজা মঈনুদ্দিন আখতার (৬০) নিহত হন। খাজা মঈনুদ্দিন আখতার রামপাল উপজেলা বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদক ও উজলকুড় ইউনিয়নের ৩ বারের নির্বাচিত সাবেক চেয়ারম্যান ছিলেন। তার বাড়ি রামপালের বামুনডহর গ্রামে। একদল সন্ত্রাসী তার উপর বোমা হামলা চালালে তিনি প্রাণ হারান।
নিহত বিএনপি নেতার স্ত্রী চম্পামালা বেগম বলেন, বোমা হামলার কয়েক মিনিট আগেও স্বামীর সাথে ভরসাপুর বাসস্ট্যান্ড এলাকায় তার কথা হয়। তাকে বাজার করার সাথে কথা বলে আমি ভ্যানযোগে ফয়লা এলাকায় চলে আসি। এর কিছুক্ষণ পর শুনি আমার স্বামীর ওপরে হামলা চালিয়েছে। আমার সাথে তার আর দেখা হয়নি। মামলা-হামলায় কারণে এখন তিনি রাজনীতিতে অনেকটাই নিষ্ক্রিয় ছিলেন। সব ধরনের বিরোধ থেকে নিজে দূরে থাকতেন। তিনি উজলকুড় ইউনিয়ন পরিষদের তিনবার নির্বাচিত চেয়ারম্যান ছিলেন। তার বাবা খাজা সোবাহান আলীও এখানকার চেয়ারম্যান ছিলেন। সামনে হজে যাওয়ার জন্য টাকা জমা দিয়েছিলেন। তাকে যারা হত্যা করেছে তাদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি জানিয়েছেন তিনি।
স্থানীয়রা বলেন, সন্ধ্যা সাড়ে সাতটার দিকে ভরসাপুর বাজার এলাকার কমল মার্কেটের সামনে হঠাৎ বিস্ফোরণের একটি বিকট শব্দ শুনতে পাই। ওই শব্দ পেয়ে ছুটে এসে দেখি কমলা মার্কেট এলাকা ধোঁয়ায় আচ্ছন্ন হয়ে গেছে। কিছুক্ষণ পর ধোঁয়া কমলে দেখি সাবেক চেয়ারম্যান মঈনুদ্দিন রক্তাক্ত অবস্থায় রাস্তার উপরে উপুড় হয়ে পড়ে আছেন। সবাই তাকে রাস্তা থেকে তুলে গাড়িতে করে খুলনা মেডিকেল করে হাসপাতালে পাঠিয়ে দেয়া হলে চিকিৎসরা তাকে মৃত ঘোষণা করেন। তিনি সাধারণ মানুষের বিপদে আপদে সবার পাশে ছুটে যেতেন। তার এই মৃত্যুতে আমরা বিষ্মিত। তার এমন মৃত্যু মেনে নেওয়া যায় না। হত্যাকারীদের অবিলম্বে গ্রেফতারের দাবি জানিয়েছেন তারা।
বাগেরহাট জেলা বিএনপির সহ-সভাপতি ড. শেখ ফরিদুল ইসলাম বলেন, খাজা মঈনুদ্দিন আখতার উপজেলা বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদক ও উজলকুড় ইউনিয়নের ৩ বার নির্বাচিত চেয়ারম্যান ছিলেন। এর আগেও তার উপর একাধিকবার সন্ত্রাসী হামলার ঘটনা ঘটে। কারা কি কারণে তার উপর বোমা হামলা চালিয়েছে তাদের খুঁজে বের করতে প্রশাসনের কাছে দাবি জানিয়েছেন এই বিএনপি নেতা।
শুক্রবার ঘটনাস্থল থেকে ফিরে বাগেরহাটের পুলিশ সুপার পংকজ চন্দ্র রায় বলেন, সাবেক ইউপি চেয়ারম্যান খাজা মঈনুদ্দিন আখতারকে ইউনিয়ন পরিষদের নির্বাচন ও পারিবারিক জমি সংক্রান্ত বিরোধের জেরে প্রতিপক্ষরা বোমা মেরে হত্যা করেছে বলে পুলিশের প্রাথমিক তদন্তে বেরিয়ে এসেছে। ওই দুইটি কারণকে গুরুত্ব দিয়ে ইতিমধ্যে পুলিশের একাধিক দল মাঠে কাজ শুরু করছে। এই তথ্যের ভিত্তিতে আমরা কাজ করছি। আশা করছি, এই তথ্যের ভিত্তিতে পুলিশ খুব শিগগির আসামিদের ধরতে পারবে এবং হত্যাকাণ্ডের রহস্য উন্মোচিত হবে বলে দাবি ওই পুলিশ কর্মকর্তার। থানায় এখনো মামলা হয়নি এবং কাউকে গ্রেফতার করা সম্ভব হয়নি।
বিডি প্রতিদিন/ফারজানা