১৯ ফেব্রুয়ারি, ২০১৯ ১৮:০০
নরসিংদীতে ৭ দিনব্যাপী বাউল মেলা

গানে গানে মানববন্দনা

সঞ্জিত সাহা, নরসিংদী

গানে গানে মানববন্দনা

নরসিংদী শহরের মেঘনা নদীর তীর ঘেঁষে প্রাচীন শ্রী শ্রী বাউল ঠাকুরের আখড়া ধাম। বাউল সম্প্রদায়ের নিয়ম অনুযায়ী প্রায় ৭শ বছর ধরে মাঘী পুর্ণিমা তিথীতে অনুষ্ঠিত হচ্ছে ৭ দিনব্যাপী মেলা। রবিবার থেকে শুরু হওয়া মেলা চলবে আগামী শনিবার পর্যন্ত। মঙ্গলবার ছিল দেবতা ব্রহ্মার মহাযজ্ঞানুষ্ঠান। 

মুন্সীগঞ্জ, ময়মনসিংহ, কুমিল্লা, গাজীপুর, ব্রাহ্মণবাড়িয়াসহ ভারতের আগরতলা থেকে আসা কয়েকশত বাউল অনুসারী ও হাজারো পূর্ণাথী এতে অংশ নেন। তারা পূণ্য লাভের আশায় মেঘনায় গঙ্গাস্নান করে আখড়ার জগন্নাথ ঠাকুর ও বাউল ঠাকুরের সমাধি মন্দিরে ঘি বাতি প্রজ্জ্বলন করে মহাযজ্ঞে অংশ নেন।

বাউল আখড়ার আট চালা বৈঠক ঘরে চলছে বাউলদের বৈঠক। বাউল সাধকরা এ আসরে বাউল গান শুনিয়েছেন। আত্মশুদ্ধি আর আত্মমুক্তির জন্য এ মেলায় আসেন তারা এবং তুলে ধরেন মানব প্রেমের গান। শুনিয়েছেন ‘এ কি আনন্দ গৌর চন্দ্র, চরণে বন্দী মনরে’, ‘সদায় আনন্দ গৌর নিতাই প্রেম গাঁথা রশিকের অন্তরের গাঁথা’, দয়াল নিতাই তুমি হইলানা কেন আমার- বইে ভাঙ্গা নাইয়ের বেপারী’ গানগুলো। গানের ফাঁকে বাউল দর্শন ব্যাখ্যা করে শুনিয়েছেন উপস্থিত ভক্ত ও পূর্ণার্থীদের। 

জানতে চাইলে অজিত কুমার বাউল বলেন, আমাদের লোভ, হিংসা, ভোগ সকল ত্যাগ করে এখানে বসতে হয়। এখান থেকে মানুষ হয়ে যাতে ফিরে যেতে পারি, মানুষ হয়ে সারা জীবন যাতে কর্ম করে যেতে পারি এবং আবার যেন মানুষ হয়েই পৃথিবীতে জন্ম নিতে পারি এটাই আমাদের সাধনা।

বাউল ঠাকুরের আখড়াবাড়ি সূত্রে জানা গেছে, প্রায় ৭০০ বছর আগে নরসিংদীতে এক বাউল ঠাকুর ছিলেন। সেই বাউল ঠাকুরের স্মরণে তার আখড়াধামে অনুষ্ঠিত হয়ে আসছে এই বাউল মেলা। তবে কে প্রথম এখানে বাউল মেলার আয়োজন করেন তার প্রকৃত তথ্য জানা নেই কারো। সর্বশেষ ব্রিটিশ শাসনামল থেকে এখন পর্যন্ত মেলার আয়োজন করছেন স্বর্গীয় নদীরাম বাউল। পরবর্তী সময় তার নাতি মনীন্দ্র চন্দ্র বাউল মেলার আয়োজন করে। বর্তমানে প্রাণেশ কুমার ঝন্টু বাউল নরসিংদীর বাউল আখড়াবাড়ির সেবায়েত তত্ত্বাবধায়ক হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন।

বাউল আখড়ার সেবায়েত ডা. প্রানেশ কুমার বাউল ঝন্টু বলেন, দেশ-বিদেশ থেকে বিপুল সংখ্যক বাউল এ মেলায় যোগ দিয়েছেন। মঙ্গলবার দেবতা ব্রহ্মার মহাযজ্ঞানুষ্ঠানে বাউলদের পাশাপাশি পূর্ণার্থীরা অংশ নেন। বুধবার জাতি বর্ণ নির্বিশেষে সবাই কলা পাতায় মহাপ্রসাদ গ্রহণ করবেন এবং এই মিলনমেলা আগামী শনিবার পর্যন্ত চলবে।

অনুষ্ঠানকে ঘিরে মেঘনা নদীর পার ঘেষে জমে উঠেছে বিশাল মেলা। মেলায় কুটির শিল্প, মৃৎশিল্প, কাঠ-বাঁশ ও মাটির তৈরি কুটির শিল্পসামগ্রী লৌহজাত সামগ্রী, ইলেকট্রনিক সামগ্রী, মিষ্টির দোকানসহ অগণিত দোকানে মহিলা-শিশুসহ বিভিন্ন বয়সের মানুষ ভিড় জমাচ্ছে। এছাড়াও বিনোদনের জন্য রয়েছে চরক-দোলাসহ নানা রাইড।

বিডি প্রতিদিন/এনায়েত করিম

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর