২২ ফেব্রুয়ারি, ২০১৯ ২০:৫৫

চকবাজার ট্রাজেডি; শরীয়তপুরে দুই পরিবারে শোকের মাতম

শরীয়তপুর প্রতিনিধি:

চকবাজার ট্রাজেডি; শরীয়তপুরে দুই পরিবারে শোকের মাতম

পুরান ঢাকার চকবাজারের চুরিহাট্টা গলিতে অগ্নিদগ্ধ হয়ে শরীয়তপুরের দুই ব্যক্তি প্রাণ হারিয়েছেন। একজন ওই এলাকার ওয়াহেদ ম্যানশনের মদিনা ডেকোরেটর দোকানের শ্রমিক বিল্লাল হোসেন চৌকিদার (৪৫)। আরেক জন পাশের বড়কাটরা এলাকার একটি মাদরাসার শিক্ষক মুফতি ওমর ফারুক (৩৫)।

বিল্লাল হোসেন চৌকিদারের বাড়ি শরীয়তপুর সদর উপজেলার গ্রামচিকন্দি গ্রামে। আর ওমর ফারুকের বাড়ি নড়িয়া উপজেলার পদ্মার দুর্গম চরাঞ্চল চরআত্রা মুন্সিকান্দি গ্রামে। তাদের এ মর্মান্তিক মৃত্যুতে এলাকায় শোকের ছায়া নেমে এসেছে। শোকে মাতম হয়ে পরেছেন পরিবারের সদস্য ও আত্মীয় স্বজনরা।

নিহতের পরিবার ও স্থানীয় সূত্র জানায়, শরীয়তপুর সদর উপজেলার শৌলপাড়া ইউনিয়নের গ্রামচিকন্দি গ্রামের আদাল উদ্দিন চৌকিদারের ছেলে বিল্লাল হোসেন। বাব-মায়ের মৃত্যুর পর স্ত্রী ও  আট বছর বয়সি মেয়ে নিয়ে ঢাকার লালবাগ এলাকার শহীদ বাগে ভাড়ার বাসায় বসবাস করতেন। মেয়ে স্থানীয় একটি বিদ্যালয়ে ২য় শ্রেণির শিক্ষার্থী। শ্রমিকের কাজ করতেন চুরিহাট্টা গলির ওয়াহেদ ম্যানশনের মদিনা ডেকোরেটরের দোকানে। বুধবার কাজ শেষ করে রাতে বাড়ি ফেরার কথা ছিল বিল্লাল হোসেনের। আগুন ছড়িয়ে পরলে ভবনের ওই দোকানে আটকা পরেন তিনি। পরের দিন সেখান থেকে তার পুড়ে যাওয়া মরদেহ উদ্ধার করা হয়।

বিল­ালের চাচা সুলতান হোসেন বলেন, সংসারে একমাত্র উপার্জনক্ষম ব্যক্তি ছিল বিল­াল। তার করুন মৃত্যুতে স্ত্রী-সন্তান পাগল প্রায়। ঢাকার আজিমপুরে লাশ দাফন করা হয়েছে।

বিল্লালের স্ত্রী রুমা বেগম বলেন, বাসা থেকে রাত সাড়ে ৯টার দিকে কাজের উদ্দেশ্যে চকবাজার মদিনা ডেকেরেটর যায় আমার স্বামী। ঘটনার ১৫ মিনিট আগে তার সাথে আমি কথা বলি। যখন আগুন লাগে তখন বার বার ফোন দেই, আমার স্বামীর ফোন বন্ধ পাই। শুনেছি আগুনে পুড়ে যারা নিহত হয়েছে তাদের লাশ নাকি ঢাকা মেডিকেল কলেজ হামপাতালে নেয়া হয়েছে। দৌঁড়ে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে যাই। সেখানে আমার স্বামীর লাশ পাই।

নড়িয়া উপজেলার পদ্মা নদীর দুর্গম চরআত্রা ইউনিয়ন। ওই ইউনিয়নের চরআত্রা মুন্সিকান্দি গ্রামের করিম মাদবরের ছেলে মুফতি ওমর ফারুক। সে পাশের মুন্সিগঞ্জের একটি মাদ্রাসায় পড়ালেখা করেছে।  ঢাকার বড়কাটরা এলাকায় একটি মাদরাসায় শিক্ষকতা করতেন। গত বুধবার রাতে কাজ শেষে মাদরাসায় ফেরার পথে চকবাজারের চুরিহাট্টা গলিতে আটকা পরেন। উদ্ধার কর্মীরা সেখান থেকে তার পুড়ে যাওয়া মরদেহ উদ্ধার করেন। খবর পেয়ে গ্রাম থেকে পরিবারের সদস্যরা তার লাশ শনাক্ত করেন। বৃহস্পতিবার রাতেই তার লাশ মামা বাড়ি মুন্সিগঞ্জের লৌহজংয়ের দিঘিরপার গ্রামে দাফন করা হয়।

ওমর ফারুকের বাবা করিম মাদবর বলেন, আমার বাবার ছুটিতে বাড়ি আশার কথা ছিল। তার মাকে ডাক্তার দেখাতে ঢাকা নেয়ার কথা ছিল। বাবাতো আর বাড়ি আসল না, আর আসবোওনা। পুড়ে আঙ্গার হয়ে গেছে। আল­াহ কেন এমন করলা? অর মারে কি জবাব দিমু?

চরআত্রা মুন্সিকান্দি গ্রামের বাসিন্দা চিকিৎসক তৌহিদ মুন্সি বলেন, ছেলেটি অনেক ভাল ছিল। তার দুই বছর বয়সি একটি শিশু কন্যা রয়েছে। সে প্রায়ই আমার কাছে আসত। এভাবে সে মারা যাবে কল্পনাও করতে পারিনি। তার মৃত্যু মানতে পারছি না। খবর পেয়ে তার পরিবারের সদস্যদের নিয়ে ঢাকা মেডিকেলে ছুটে যাই। লাশ এনে দাফন করি।

শরীয়তপুরের জেলা প্রশাসক কাজী আবু তাহের বলেন, মর্মান্তিক দুর্ঘটনায় শরীয়তপুরের দুইজনের করুণ মৃত্যু হয়েছে। সরকার ঘোষিত সকল অনুদান তাদের পরিবার পাবে। এছাড়া জেলা প্রশাসন ওই দু'জনের পরিবারকে সব ধরনের সহায়তা দেবে।


বিডি প্রতিদিন/হিমেল

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর