২১ মার্চ, ২০১৯ ১৯:৩৫

পাবনায় আধিপত্য বিস্তারের জেরে কৃষকলীগ নেতার বাড়িতে হামলা

পাবনা প্রতিনিধি

পাবনায় আধিপত্য বিস্তারের জেরে কৃষকলীগ নেতার বাড়িতে হামলা

পাবনার সুজানগরে আধিপত্য বিস্তারকে কেন্দ্র আওয়ামী লীগের দু’পক্ষের দ্বন্দ্বে হামলা, বাড়িঘর, ভাংচুর ও লুটপাটের ঘটনা ঘটেছে। নির্বাচনের দিন গত সোমবার দিবাগত রাতের এ ঘটনায় এক নারীসহ বেশ কয়েকজন আহত হয়েছেন। এ ব্যপারে থানায় লিখিত অভিযোগ দেওয়ার তিনদিন পার হলেও পুলিশ মামলা নিচ্ছে না বলে অভিযোগ ভুক্তভোগীদের। 

সুজানগর উপজেলার সাতবাড়িয়া ইউনিয়ন কৃষক লীগের সভাপতি দুলাল হোসেন জানান, সাতবাড়িয়া ইউনিয়ন আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক কামরুজ্জামান দয়াল দীর্ঘদিন ধরে স্থানীয় একটি মসজিদ নির্মাণে বাধা দিয়ে এলাকাবাসীকে ভয়ভীতি প্রদর্শন করে আসছেন। এছাড়া, দলীয় প্রভাবে সরকারী অনুদানের অর্থ আত্মসাৎ ও বিভিন্ন অনিয়ম করে আসছেন। এসবের প্রতিবাদ করায় দয়াল আমাকে এবং আমার পরিবারের উপর ক্ষিপ্ত ছিল। 

সোমবার ভাটপাড়ায় উপজেলা নির্বাচনের দিন দয়ালের একজন ক্যাডার উদ্দেশ্যমূলক ভাবে আমার চাচাতো ভাইকে কটুক্তি করে ঝগড়া বাধিয়ে দেয়। স্থানীয়রা তাৎক্ষণিক বিষয়টির সমাধান করলেও, দয়ালের নেতৃত্বে চল্লিশ-পঞ্চাশ জনের সশস্ত্র ক্যাডার বাহিনী রাতে আমার এবং পার্শ্ববর্তী আরো কয়েকটি বাড়িতে হামলা করে। তারা হাতবোমা নিক্ষেপ করে, ঘরের বেড়া কেটে ঘরে প্রবেশ করে বাড়ির লোকজনকে এলোপাথারি পিটিয়ে আলমারি ভেঙে নগদ টাকা ও প্রায় পাঁচ ভরি স্বর্ণালঙ্কার নিয়ে যায়। এ সময় আমার মা আনোয়ারা বেগম বাধা দিলে তাকে চাপাতি দিয়ে কুপিয়ে আহত করে।

আহত দুলালের মা আনোয়ারা খাতুন বলেন, স্বাধীনতা যুদ্ধের সময়ও এতো সন্ত্রাসী কর্মকান্ড ও তান্ডবলীলার স্বাকার হতে হয়নি। আমি বৃদ্ধ মানুষ বার বার অনুরোধ করেও তাদের নির্যাতন থেকে রেহাই পাই নাই। আমরা এর দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দাবি করি। 

সাতবাড়িয়া ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের ধর্মবিষয়ক সম্পাদক আইয়ুব আলী জানান, দয়াল বাহিনীর অত্যাচারে আমরা অতিষ্ঠ হয়ে উঠেছি। ক্ষমতার দম্ভে অন্ধ হয়ে এলাকায় রামরাজত্ব কায়েম করেছে। দলের ভাবমূর্তি নষ্ট করার প্রতিবাদ করায় আমাদের উপর নির্যাতন শুরু করছে।

আইয়ুব আলী আরো বলেন, সোমবারের ঘটনার পর আমরা থানায় মামলা দিতে গেলে পুলিশ মামলা গ্রহণ করেনি। স্থানীয় নেতারাও বিষয়টি সমাধানে উদ্যোগ নেননি। দয়ালের হুমকীতে এখন আমাদের এলাকায় টিকে থাকাই কঠিন হয়ে পড়েছে।

সাতবাড়িয়া ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মুক্তিযোদ্ধা শামসুল আলম বলেন, সোমবার দু’পক্ষের উত্তেজনা দেখা দেয়ায় আমি নিজে ঘটনাস্থলে উপস্থিত হয়ে সংসদ সদস্য মহোদয়ের সাথে পরামর্শ করে ঘটনাস্থলে গিয়ে দুলাল ও তার সমর্থকদের সরিয়ে দিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের চেষ্টা করি। কিন্তু, দয়াল অপর পক্ষের অনুপস্থিতির সুযোগে আমার নিষেধ অমান্য করে সশস্ত্র লোকজন নিয়ে বোমাবাজি করে দুলালের বাড়িতে আক্রমণ করে।
 
শামসুল আলম বলেন, দলের মধ্যে ভুল বোঝাবুঝি বা দ্বন্দ্ব থাকতে পারে, তাই বলে দলের লোকজনের বাড়িতে হামলা, লুটপাট কখনোই সমর্থনযোগ্য নয়। এভাবে চলতে থাকলে এলাকায় আওয়ামী লীগ অস্তিত্ব সংকটে পড়বে।

তবে হামলায় জড়িত থাকার অভিযোগ অস্বীকার করে সাতবাড়িয়া ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক কামরুজ্জামন দয়াল বলেন, সোমবার দুলালের বাড়িতে কারা হামলা করেছে আমার জানা নেই। দুলাল ও তার লোকজন উদোর পিন্ডি বুদোর ঘাড়ে চাপিয়ে আমাকে ফাঁসানোর ষড়যন্ত্র করছে।

মামলা গ্রহণ না করার অভিযোগ সম্পর্কে পাবনার পুলিশ সুপার শেখ রফিকুল ইসলাম পিপিএম বলেন, হামলা ও বাড়িঘর ভাংচুরের ঘটনায় মামলা না নেয়ার অভিযোগ সত্য নয়। দু’পক্ষ নিজেদের মধ্যে মীমাংসা করার কথা বলে থানায় মুচলেকা দিয়েছে। এ ঘটনার দ্রæত নিষ্পত্তি না হলে আমরা আইনগত পদক্ষেপ নেব।

 

বিডি-প্রতিদিন/আব্দুল্লাহ তাফসীর

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর