২২ মার্চ, ২০১৯ ১৬:৫৭

মুক্তিযুদ্ধ; পিঠে বুলেট নিয়ে বেঁচে আছেন যে নারী

নেত্রকোনা প্রতিনিধি:

মুক্তিযুদ্ধ; পিঠে বুলেট নিয়ে বেঁচে আছেন যে নারী

মহান মুক্তিযুদ্ধের স্মৃতি বহন করে বেঁচে আছেন এক নারী সালেহা আক্তার। যার বয়স এখন ৬০। তিনি যুদ্ধকালীন সময়ে শিশু বয়সে পিঠে বুলেটবিদ্ধ হয়। পিঠে সেই বুলেট নিয়েই জীবনের এতোগুলো বছর পার করেছেন।

প্রায় ভুলেই গিয়েছিলেন সেই বুলেটের কথা। কিন্তু পিঠে যখন তীব্র ব্যথা অনুভূত হয় তখন মনে করিয়ে দেয় সেই ভয়াল যুদ্ধকে। তারপরও কোন সনদধারী মুক্তিযোদ্ধা নন তিনি।

নেত্রকোনা জেলা শহরের বর্তমান কুরপাড় নিবাসী লক্ষীগঞ্জ ইউনিয়নের বাইশধার গ্রামের নুরুল হক বকুলের স্ত্রী সালেহা আক্তার। তিনি দীর্ঘদিন ধরে বিভিন্ন অর্থোপেডিক্সের কাছে চিকিৎসা নিতে গিয়ে রঞ্জন রশ্মিতে ধরা পরে বুলেটের চিহ্ন।

বুলেটবিদ্ধ সালেহার সাথে কথা বলে জানা যায়, ১৯৭১ সালের বেশ ক’টি যুদ্ধের বর্ণনা। এর মাঝে মদন মুক্ত হওয়ার আগে টানা ১৭২ ঘণ্টার যুদ্ধ হয়েছিলো থেমে থেমে। ৩০ অক্টোবর রাত থেকে শুরু হয়ে যুদ্ধ চলে ৬ নভেম্বর পর্যন্ত। বাজিতপুর গ্রামসহ বেশ কয়েকটি পয়েন্টে বিভিন্ন বাড়িতে মুক্তিযোদ্ধারা থাকতেন। আর সেই মুক্তিযোদ্ধাদের সহয়তাকারী নারী মুক্তিযোদ্ধা মিরাশির সাথে সহচর ছিলেন সালেহা। তার কাজ ছিলো থানার দিকে নজর রাখা।

মিলিটারিরা কোথায় যাওয়া আসা করে এসব খবর মুক্তিযোদ্ধা মিরাশি এবং এখলাছ আহমেদ কোরাইশিসহ অন্যদের কাছে পৌঁছে দিতেন তিনি। এরই ধারাবাহিকতায় একদিন বাড়ির উঠানেই গুলিবিদ্ধ হন সালেহা। পরে সকলেই তাকে ভেতরে নিয়ে চিকিৎসা সেবা দেন। কিন্তু গ্রামের মানুষ সেই গুলি আর বের করতে পারেনি। কিন্তু বয়স বাড়ার সাথে সাথে তার যন্ত্রণাও বাড়তে থাকে।

সালেহার বড় ছেলে মো. রাসেল বলেন, আমরা ছোটবেলায় শুনেছি মায়ের আহত হওয়ার গল্প। কিন্তু এখনো যে বুলেট আছে তা জানলাম ডাক্তারের কাছে গিয়ে। তাছাড়া নারীরা  তো এমনিতেই অবহেলিত। তারা বড় বড় অবদান রাখলেও তা বেশি একটা সামনে আসে না।

তিনি বলেন, আমাদের মা মুক্তিযুদ্ধে এমন একটি স্মৃতি বহন করে আছে যার জন্য আমরা গর্বিত। আমাদের অর্থকড়ির অভাব নেই। কিন্তু আমরা চাই আমাদের মায় স্বীকৃতি পাক।

এ ব্যাপরে মুক্তিযুদ্ধ ইউনিটের কয়েকবারের সাবেক ডেপুটি কমান্ডার মুক্তিযোদ্ধা এখলাছ আহমেদ কোরাইশি সত্যতা নিশ্চিত করেন। তিনি বলেন, তখনকার দিনে সালেহা ছিল অত্যন্ত সাহসী একটি শিশু। আমি তাকে বকাঝকা করতাম যে সে এত ছোট তারপরও কেনো আসো। সে আমাদেরকে দেখতে আসতো আমাদের সাথে যুদ্ধ করা মিরাশির সাথে।  

বিডি প্রতিদিন/হিমেল

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর