বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের অসহযোগ কর্মসূচির কারণে কার্যত স্থবির হয়ে পড়েছে দেশের উত্তরাঞ্চল। রাজশাহী ও রংপুর বিভাগের ১৬ জেলা বড় বাস-ট্রাক-মিনিট্রাক চলাচল বন্ধ রয়েছে। রাস্তায় চলছে ছোট যানবাহন। সাধারণ মানুষের বাহন এখন সিএনজিচালিত অটোরিকশা আর ব্যাটারিচালিত রিকশা।
শহরের সাতমাথায় জরুরি দরকারি লোজকন ছাড়া কেউ চলাচল করছেন না।
সেখানে থাকা একাধিক গণমাধ্যমকর্মী জানিয়েছেন, সকাল থেকেই আওয়ামী লীগ, এর সহযোগী ও অঙ্গ সংগঠনের লোকজন সাতমাথায় জড়ো হচ্ছে। তারা আন্দোলনকারীদের প্রতিহতের ঘোষণা দিয়েছেন। বগুড়ার প্রাণ কেন্দ্র হলেও সেখানে কোনও দোকানপাট খোলেনি। রিকশা ছাড়া কোনও যানবাহনও দেখা যাচ্ছে না সাতমাথায়।
কাহালু সড়কের শহরদিঘী এলাকায় সকাল থেকে সড়কে গাছের গুড়ি-বাঁশ ফেলে দখল করেছে স্থানীয় শিক্ষার্থী ও লোকজন।
স্থানীয় বাসিন্দা আরিফুল ইসলাম জানান, বগুড়া শহর থেকে তিনমাথা হয়ে এই সড়ক দিয়ে সাধারণত কাহালু উপজেলার সাথে মানুষের যোগাযোগ হয়। কিন্তু সকাল থেকে রাস্তা ব্লক করে বসে পড়েছেন শিক্ষার্থী ও স্থানীয় লোকজন। বাঁশ-গাছের পাশাপাশি সড়কে তারা টায়ার জ্বালিয়ে আগুন লাগিয়ে দিয়েছে। এ কারণে জরুরি সেবার যানবাহন ছাড়া রাস্তা দিয়ে কেউ চলাচল করতে পারছে না।
জেলার মহাসড়কে বড় যান চলাচলও দেখা যায়নি। উত্তরবঙ্গ পরিবহন মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক আমিনুল ইসলাম বলেন, উত্তরবঙ্গে প্রায় ৫০ হাজারের উপরে যানবাহন চলাচল করে। রাস্তায় গাড়ি চলাচল করার কারণে গত ১২ ঘণ্টার মধ্যে আমাদের আটটি গাড়ি ভাঙচুর করা হয়েছে। এই কারণে উত্তরবঙ্গের কোনও সড়কে আর বড় যানবাহন চলাচল করছে না। মানে পরিস্থিতি স্বাভাবিক না হলে আমরা আর গাড়ি চালাব না।
পরিবহন সমিতি সূত্রগুলো বলছে, উত্তরবঙ্গের ১৬ জেলায় একদিন যানবাহন চলাচল বন্ধ থাকলে অন্তত ১৫ কোটি টাকা ক্ষতি হয়। বেকার হয়ে পড়েন ২ লাখের বেশি শ্রমিক।
নির্ভরযোগ্য সূত্র বলছে, বগুড়ার চারমাথায় সকাল থেকে শত শত আন্দোলনকারী অবস্থান নিয়েছে মহাসড়কে। দুপুরের আগেই তারা শহরের সাতমাথার দিকে যাবেন। বগুড়া শহরের ঢোকার প্রায় প্রতিটি রাস্তায় এখন আন্দোলনকারীরা ব্লক করে রেখেছেন।
বগুড়ার শাজাহানপুর এলাকায় সিএনজিচালিত অটোরিকশার চালক এরশাদ জানান, এই পরিস্থিতির মধ্যে গাড়ি বের করার কথা কল্পনাও করা যায় না। ভাঙচুর করলে তো সব শেষ হয়ে যাবে। তখন কীভাবে সংসার চলবে। এই কারণে বাড়িতে বসে আছি। দেখা যাক, পরিস্থিতি শান্ত হয় কি না।
উত্তরাঞ্চলের প্রাণ কেন্দ্র বগুড়া। রাজশাহী বিভাগের নওগাঁ, জয়পুরহাটসহ রংপুর বিভাগের পরিবহন ব্যবসায়িক কেন্দ্রবিন্দুও বগুড়ায়। ভৌগোলিক কারণে উত্তরের অন্যান্য জেলার চেয়ে বগুড়ার গুরুত্ব বেশি।
বগুড়া জেলা মোটর মালিক গ্রুপ সূত্রে জানা গেছে, বগুড়া থেকে প্রায় দেড় হাজার বাস দেশের বিভিন্ন জেলায় চলাচল করে। শিক্ষার্থী আন্দোলনের কারণে সব ধরনের গণপরিবহন বন্ধ আছে।
জেলা মটর মালিক সূত্র বলছে, সাধারণত বগুড়া থেকে প্রতিদিন প্রায় ৭০০ দূরপাল্লার বাস চলাচল করে। এর সাথে রয়েছে ট্রাক, কাভার্ডভ্যানসহ আরও অনেক যানবাহন। রাত থেকে বন্ধ রাখতে হয়েছে সব যানবাহন।
চলমান আন্দোলনের অংশ হিসেবে নওগাঁর কাজীর মোড়ে অবস্থান নিয়েছেন শিক্ষার্থীরা। সকাল থেকেই তার এক দফা দাবি বাস্তবায়নে স্লোগান দিচ্ছেন। কাজীর মোড়ে অবস্থান নেওয়ার কারণে শহরে যানচলাচল কার্যত বন্ধ রয়েছে। খোলেনি বড় দোকানপাটও। গলির মধ্যে জরুরি প্রয়োজনীয় দু’ চারটি দোকানপাট খোলা রয়েছে বলে জানান নওগাঁর লাটার মোড়ের বাসিন্দা আরমান হোসেন।
সড়ক ও জনপথ বিভাগের একটি সূত্র বলছে, মোড় ব্যবহার করে দেশের রাজশাহী ও রংপুর বিভাগের ১৬ জেলা এবং ও দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের অর্থাৎ খুলনা বিভাগের আরও ৬ জেলার মানুষ যাতায়াত ও পণ্য পরিবহন হয়। বঙ্গবন্ধু সেতু দিয়ে প্রতিদিন গড়ে অন্তত ২৮ হাজার যানবাহন চলাচল করে।
বিডি প্রতিদিন/একেএ