টাঙ্গাইলে এক দফা দাবিতে বঙ্গবন্ধু সেতু-ঢাকা মহাসড়কে নগর জালফৈ এলাকায় অবরোধ করে বিক্ষোভ করেছে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনকারীরা। এসময় বিক্ষোভকারীরা জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদকের প্রাইভেটকারে আগুন লাগিয়ে পুড়িয়ে দিয়েছে। আগুন দিয়েছে সংসদ সদস্য ছোট মনিরের বাসভবনে। এ ছাড়া পেট্রল পাম্প, পৌরসভা কার্যালয়, আওয়ামী লীগ অফিসসহ অন্তত ২০টি মোটরসাইকেল আগুন দিয়ে পুড়িয়ে দিয়েছে।
রবিবার বিকেলের দিকে এ ঘটনা ঘটেছে। এ ছাড়া পুলিশের সাথে দফায় দফায় ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়ার ঘটনা ঘটেছে। এতে করে দুইজন গুলিবিদ্ধসহ অন্তত ৫০ জন আহত হয়েছে।
রবিবার বেলা ১১টায় টাঙ্গাইল প্রেসক্লাবের সামনের সড়ক অবরোধ করে কর্মসূচি শুরু করে আন্দোলনকারীরা। পূর্বঘোষিত কর্মসূচি অনুযায়ী শিক্ষার্থীদের সঙ্গে জেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক ফরহাদ ইকবালের নেতৃত্বে নেতাকর্মীরা ও জামায়াত-শিবিরের নেতাকর্মী এবং অভিভাবক, শিক্ষকসহ বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষ যোগ দেয়।
বিভিন্ন এলাকা থেকে খণ্ড খণ্ড মিছিল নিয়ে প্রেসক্লাবের সামনে সমবেত হয়। সেখানে রাজনৈতিক নেতাকর্মী এবং ছাত্র-জনতার ঢল নামে। অনেকের হাতে বিভিন্ন স্লোগান সংবলিত প্ল্যাকার্ড দেখা যায়। বেলা সাড়ে ১১টার দিকে জমায়েতস্থলে হঠাৎ খবর আসে শহরের বটতলায় দুই ছাত্রীকে মারধর করা হয়েছে। এ খবর পেয়ে লোকজন শহরের বটতলার দিকে বিক্ষোভ মিছিল নিয়ে যেতে থাকে। বিক্ষোভকারীরা বটতলাস্থ বিবেকানন্দ হাইস্কুল অ্যান্ড কলেজ ক্যাম্পাসে ঢুকে সেখানে ভাঙচুর চালায়। সেখানে রাখা জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও সাবেক এমপি অ্যাডভোকেট জোয়াহেরুল ইসলামের (ভিপি জোয়াহের) ব্যক্তিগত গাড়িতে আন্দোলনকারীরা আগুন ধরিয়ে দেয়। এ সময় আন্দোলনকারীদের হামলায় তার গাড়ি চালকসহ পাঁচজন আহত হয়।
পরে আন্দোলনকারীরা বিক্ষোভ মিছিল নিয়ে জেলা সদর রোড হয়ে সিঅ্যান্ডবি রোড দিয়ে পুরাতন বাসস্ট্যান্ডে যাওয়ার সময় অজ্ঞাত স্থান থেকে কে বা কারা মিছিলের উপর গুলি চালায়। গুলিতে কয়েকজন জন আহত হয়। পরে মিছিলটি পুরাতন বাসস্ট্যান্ড হয়ে থানাপাড়া রোডের দিকে যায়। বিক্ষোভকারীরা থানাপাড়ায় জেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক তানভীর হাসান ছোট মনিরের চারতলা ভবনে হামলা চালিয়ে প্রথমে ব্যাপক ভাঙচুর ও পরে আগুন ধরিয়ে দেয়। এ সময় ফায়ার সার্ভিসে ফোন করা হলেও তারা আসতে পারেনি। পরে আন্দোলনকারীরা মহাসড়কের দিকে চলে যাওয়ার পর স্থানীয়রা ভবনের আগুন নিয়ন্ত্রণে আনে।
এরপর বিক্ষোভকারীরা মিছিল নিয়ে পুনরায় বাসস্ট্যান্ড হয়ে বঙ্গবন্ধু সেতু-ঢাকা মহাসড়কের দিকে যাওয়ার সময় আবারও অজ্ঞাত স্থান থেকে কে বা কারা গুলি চালায়। এতেও কয়েকজন গুলিবিদ্ধ হয়। গুলিবিদ্ধ দুইজন আন্দোলনকারীকে টাঙ্গাইল জেনারেল হাসপাতালে চিকিৎসা দেওয়া হয়েছে। পরে বিক্ষোভকারীরা বঙ্গবন্ধু সেতু-ঢাকা মহাসড়কের নগর জালফৈ এলাকায় গিয়ে মহাসড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ করতে থাকে।
এ সময় মহাসড়কে যান চলাচল বন্ধ হয়ে যায়। বিক্ষোভের একপর্যায়ে আন্দোলনকারীরা আশেকপুর এলাকায় এমপি তানভীর হাসান ছোট মনিরের মালিকানাধীন পেট্রল পাম্পে হামলা চালিয়ে ব্যাপক ভাঙচুর ও আগুন ধরিয়ে দেয়। এদিন দুপুর ২টার পর আন্দোলনকারীরা মহাসড়ক ছেড়ে খণ্ড খণ্ড মিছিল নিয়ে শহরের দিকে চলে যাওয়ার পর যান চলাচল স্বাভাবিক হয়।
এদিন বিকাল পৌনে তিনটার দিকে একটি বড় বিক্ষোভ মিছিল আদালত চত্বরের দিকে যাওয়ার সময় পুলিশ বাধা দেয়। পুলিশের বাধা উপেক্ষা করে আদালত চত্বরের দিকে যাওয়ার চেষ্টা করলে পুলিশ ২-৩ রাউন্ড টিয়ারশেল ছুড়ে। এতে আন্দোলনকারীদের বিক্ষোভ মিছিলটি পিছু হটে নিরালামোড়ের দিকে যাওয়ার সময় বটতলাস্থ ‘রামকৃষ্ণ মিশন মঠ ও আশ্রমে’ ভাঙচুর চালায়। পরে তারা নিরালার মোড়ে পৌরভবনে আগুন লাগিয়ে দেয় এবং জেলা আওয়ামী লীগ কার্যালয়েও আগুন দেয়। পরে পুলিশ তাদের ছত্রভঙ্গ করতে কাঁদানে গ্যাস ও রাবার বুলেট ছুড়ে।
এদিকে, আন্দোলনকারীদের বিক্ষোভ মিছিল ও বিভিন্ন স্থানে ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগের কারণে শহরে থমথমে অবস্থা বিরাজ করছে। শহরের বাসিন্দারা আতঙ্কে রয়েছেন।
টাঙ্গাইলের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (অপরাধ) মো. শরফুদ্দিন জানান, একটি বিক্ষোভ মিছিল আদালত চত্বরের দিকে যাওয়ার পথে পুলিশ ২-৩টি টিয়ারশেল ছুড়ে মিছিলটি ফিরিয়ে দেয়। অন্য কোথাও পুলিশ কোনো অ্যাকশনে যায়নি। আন্দোলনকারীরা নির্বিঘ্নে বিক্ষোভ মিছিল করেছে। তবে জনসাধারণের জানমাল রক্ষায় বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ স্থানে অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে। এ ছাড়া র্যাব, বিজিবি ও সেনাবাহিনী শহরে টহল দিচ্ছে।
বিডি প্রতিদিন/এমআই