কোটা সংস্কারের দাবীতে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র জনতা মাঠে থাকায় বগুড়ায় জনজীবন স্বাভাবিক হয়ে আসছে। ধীরে ধীরে খুলছে বিপনী বিতান, বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান, ব্যবসা বাণিজ্যের প্রতিষ্ঠানও খুলতে শুরু করেছে। রাবার বুলেট, টিয়ার শেলের মুহমুহ শব্দের আতঙ্কতা এখনো কেটে না ওঠায় বিপনী বিতানগুলোতে ক্রেতার সংখ্যা খুবই কম। অনেক ব্যবসায়ি ক্রেতার আসায় বসে আছেন। সকালে দোকানপাট, ব্যবসা-বাণিজ্য প্রতিষ্ঠান খোলা হলেও সন্ধ্যায় বন্ধ হয়ে যাচ্ছে আবার। রাত ৯টার পর থেকে লোকজন তেমন থাকছে না শহরে। ব্যবসায়িরা মনে করছেন, আগামী কয়েকদিনের মধ্যে আগের মতই সব স্বাভাবিক হয়ে যাবে।
জানা যায়, ছাত্র জনতার আন্দোলন থেমেছে। কিন্তু বগুড়া শহরের সাধারণ মানুষের মাঝে এখনো আতঙ্ক কাটেনি। কার্ফু ভেদ করে যে ছাত্র জনতা রাজপথে নেমেছিলো তাদের দমাতে পুলিশ যে রাবার বুলেট, যে টিয়ার শেল ছুঁড়েছে তার শব্দ এখনো অনেকেই কানে শুনতে পান। এখনো মানুষের মনে ভয় কাজ করে। আন্দোলনের বিজয়ের পরে ছাত্ররা মাঠে থাকায় ঘর থেকে লোকজন বের হচ্ছেন। খুলতে শুরু করেছে দোকান পাট, ব্যবসা বাণিজ্য প্রতিষ্ঠান, নিউ মার্কেট, বিপনী বিতান। শহরের প্রধান প্রধান সড়ক দিয়ে লোকজন চলাচল করছে। সকাল থেকে বিকাল পর্যন্ত লোকজন দেখা গেলেও সন্ধ্যার পর লোকজন কমতে থাকে। রাত ৯টার পর বিশেষ প্রয়োজনে লোকজন চলাচল করছেন। অথচ বগুড়া শহরে দিনরাত সমান করে লোজন চলাচল করতো। সারারাত ধরে চলাচল করা শহটিতে এখন কম সংখ্যাক লোজন চলাচল করছেন। বগুড়া সদর থানাসহ ১২টি থানায় সীমিত আকারে কাজ শুরু হওয়ায় সাধারণ মানুষ কিছুটা সাহস পেলেও পূর্নাঙ্গভাবে থানাগুলো চালু করার দাবী জানিয়েছেন।
রিক্সা চালক আব্দুস সোবহান জনান, ছাত্র আন্দোরনের আগের ট্রাফিক আর এখনকার ট্রাফিক এর মাঝে তফাৎ আছে। আগে ভুল হলেই লাঠি পেটা, থানায় আটক করে রাখতো। আর এখন ছাত্ররা শিখিয়ে দিচ্ছে। এভাবে এদিক দিয়ে চলাচল করেন। আর ট্রাফিক গালিগালাজ করতো, রিক্সা ভাংচুর করতো। শহরে যানবাহন কম, সে কারণে রিক্সায় করে মালামাল পরিবহন করা হচ্ছে। কিছু সিএনজি বের হয়েছে তারাও মালামাল ও কাঁচা পণ্য পরিবহন করছে। যাত্রী কম হলেও শহর ছাত্ররা থাকায় সাধারণ মানুষ ঘর থেকে বের হতে শুরু করেছে।
বগুড়া শহরের ফল বিক্রেতা মাহমুদ মিয়া জানান, আগে ফল বিক্রি করতেও চাঁদা দিতে হয়েছে। চাঁদা ছাড়া বসতে দিতো না। দিনে ৫০ থেকে ১০০ টাকাও দিতে হতো। এখন দিতে হয়না। আয় বেড়েছে। ছাত্ররা আসছে ফুটপাত ছেড়ে দিয়ে ব্যবসা করতে বলছে। কিন্তু শহরে লোকজন কম। ধীরে ধীরে লোজকন বাড়বে।
ফতেহ আলী বাজার এলাকার ব্যবসায়ি বিপুল মিয়া জানান, কাঁচাবাজার বন্ধ হয়নি। খোলা আছে। কিন্তু অন্যান্য দোকানে বেচাকেনা খুবই কম। ক্রেতা আসছে কম। বেশি প্রয়োজন ছাড়া কেউ কেনা কাটা করছে না। সন্ধ্যার তেমন ক্রেতাও আর বাজারে আসছে না। তিনি বলেন, আরো কয়েকদিন সময় লাগবে। তখন স্বাভাবিক হলে আগেরমত পরিবেশ ফিরবে। ব্যবসা বাণিজ্যও ঠিকঠাক চলবে।
বগুড়া শহরের নিউ মার্কেটের ব্যবসায়ি রাজীব জানান, গত কয়েকদিন ধরে কেনাবেচা খুবই কম। দোকানপাট খোলা রয়েছে কিন্তু লোকজন নেই। ক্রেতারা আসছে কম। সব দোকান পাট খুলে ফেললে ক্রেতারাও আসবে।
বগুড়া পৌরসভার মেয়র ও জেলা বিএনপির সভাপতি রেজাউল করিম বাদশা জানান, এখন অনেক এলাকা থেকেই ভয় কমে যাচ্ছে। মানুষজন বাহিরে আসছে। ব্যবসা প্রতিষ্ঠান খুলে বসেছে। পৌরসভা থেকে এবং দলীয় কর্মীদের দিয়ে বিভিন্ন স্থানে পাহাড়ার ব্যবস্থা করা হয়েছে। যেন কোন ব্যক্তি কোন লুটপাট, অগ্নিসংযোগ, বা নাশকতা কর্মকান্ডের সুযোগ না পায়। সেই হিসেবে বগুড়া পৌর এলাকায় এখন ধীরে ধীরে স্বাভাবিক হচ্ছে।
বিডি প্রতিদিন/এএম