খাগড়াছড়িতে স্মরণকালের ভয়াবহ বন্যায় পাঁচটি উপজেলা প্লাবিত। এ নিয়ে গেলো ৫০ দিনে চারবার ডুবলো চেঙ্গী ও মাইনি নদীর নিম্নাঞ্চালের সহস্রাধিক পরিবার। বৃহস্পতিবার ভোরে হঠাৎ করে আবারো ভারী বর্ষণে চেঙ্গী নদীর পানি বৃদ্ধি পেয়ে আশ্রয়কেন্দ্র থেকে বাড়িতে ফিরে ফের পানিতে ডুবলো বন্যার্ত মানুষ।
সরজমিন ঘুরে দেখা যায়, খাগড়াছড়ি পৌর শহরের সাতটি সড়ক মহিলা কলেজ সড়ক, সবজি বাজার, গঞ্জপাড়া সড়ক, শান্তিনগর, শব্দ মিয়া পাড়া সড়ক খালপাড় এবং মুসলিম পাড়াসহ সাতটি সড়ক পানিতে থৈ থৈ। এসব সড়ক পানির নিচে থাকলেও বৃহস্পতিবার সন্ধ্যা নাগাদ পানি কিছুটা কমতে থাকায় সড়ক যোগাযোগ স্বাভাবিক হতে থাকে। চেঙ্গী নদীর পানি বুধবার কমে যাওয়ায় আশ্রয়কেন্দ্রগুলো থেকে পরিবারগুলো ফিরে গিয়ে ঘর পরিষ্কার কাজে ব্যস্ত ছিল। রাতে প্রচন্ড ভারী বৃষ্টি হওয়ায় সকাল বেলায় উঠে দেখে আবারো পানি। ফের আশ্রয়কেন্দ্রে স্থান হয় পরিবারগুলোর।
এদিকে সাজেক সড়ক ৩ দিন ধরে বন্ধ রয়েছে। নতুন করে ডুবেছে দীঘিনালা লংগদু ও বাঘাইছড়ি সড়ক। জেলার মাটিরাঙ্গা উপজেলার এলাকার তাইন্দং তবলছড়িসহ সীমান্তবর্তী এলাকাগুলো পানিতে ডুবে গেছে। একইভাবে পানছড়ি উপজেলার বেশ কয়েককটি গ্রাম পানিতে ডুবে গেছে। ফেনী নদীর পানি বৃদ্ধি পেয়ে রামগড় উপজেলায় বেশ কয়েককটি গ্রাম পানিতে ডুবে গেছে। দীঘিনালা উপজেলায়ও মাইনি নদীর পানি বৃদ্ধি পেয়ে মেরং ইউনিয়নের সবকটি গ্রাম পানিতে নিমজ্জিত।
পরিস্থিতির ভয়াবহতা বুঝে বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর খাগড়াছড়ি রিজিয়ন কমান্ডার ব্রি. জেনারেল শরীফ আমান হাসান এবং সদর কমান্ডার লে: কর্ণেল আবুল হাসনাত জুয়েল মাঠে নেমে পড়েন। তারা বেশকিছু এলাকায় আটকেপড়া শিশু-নারী ও বয়োবৃদ্ধ মানুষকে নৌকায় করে নিরাপদ স্থানে সরিয়ে আনেন। সেনাবাহিনীর পাশাপাশি রেড ক্রিসেন্ট সোসাইটির স্বেচ্ছাসেবকরাও জেলার সবকটি উপজেলার বন্যাক্রান্ত এবং পানিবন্ধী মানুষকে উদ্ধারের সাথে সাথে পৌঁছে দিচ্ছেন সেনাবাহিনীসহ বিভিন্ন সরকারি-বেসরকারি ও দাতা প্রতিষ্ঠানের দেয়া ত্রাণসামগ্রীও। নতুন করে সড়ক ডুবেছে খাগড়াছড়ি গেইট, কলেজ রোড, মহালছড়ি সড়ক, দীঘিনালা লংগদু, বাঘাইছড়ি সাাজেক সড়ক। জেলার মাটিরাঙ্গা উপজেলার এলাকার তাইন্দং তবলছডড়িসহ সীমান্তবর্তী এলাকাগুলো পানিতে ডুবে গেছে। শহরে খাগড়াছড়ি পৌরসভার পাশাপাশি জেলা বিএনপি ও খাগড়াছড়ি মানবকল্যাণ সংস্থাসহ বিভিন্ন সংগঠন এখন বন্যার্তদের মাঝে খিচুড়ি শুকনা খাবার বিতরণ করছে।
পানিবন্দীরা জানান, বারবার শহরের মধ্যে পানি উঠার কারণ হচ্ছে নদী-নালা, খাল, ড্রেন সংস্কার না করার ফলে। আর টানা যে হারে বৃষ্টি হচ্ছে পানি নিষ্কাশনের ব্যবস্থা থাকলে হয়তো পরিস্থিতি এতোটা ভয়াবহ হতো না।
খাগড়াছড়ি জেলা ও দায়রা জজ আব্দুল্লাহ আল মামুন সন্ধ্যায় পৌর শহরের বিভিন্ন স্থানে শুকনো খাবার বিতরণ শুরু করেছে। একই ভাবে জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ সহিদুজ্জামান জানান, জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে পুরো জেলায় প্রায় বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারের মাঝে শুকনো খাবার পৌঁছে দেওয়া হয়েছে। পানিবন্দী পরিবারের জন্য শুকনো খাবার মজুদ রাখা আছে। প্রয়োজন অনুযায়ী সরবরাহ করা হবে।
পৌর প্রশাসক ও উপ-পরিচালক (স্থানীয় সরকার) নাজমুন আরা সুলতানা জানান, খাগড়াছড়ির ১০৯টি আশ্রয় কেন্দ্র খুলে দেওয়া হয়েছে। পাহাড়ের পাদদেশে যাদের বসবাস তাদেরকে নিরাপদে আশ্রয় কেন্দ্রে আশ্রয় নেওয়ার জন্য মাইকিং করা হচ্ছে।
খাগড়াছড়ি পৌরসভার পাশাপাশি জেলা বিএনপি, জেলা জামায়েতে ইসলামী ও খাগড়াছড়ি মানবকল্যাণ সংস্থ, বিন্দ্যানন্দসহ বিভিন্ন সংগঠন এখন বন্যার্তদের মাঝে খিচুড়ি ও শুকনা খাবার বিতরণ করছে। সেনাবাহিনী ও বিভিন্ন স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন পানিবন্দি মানুষদের উদ্ধারে কাজ করছে।
বিডি প্রতিদিন/এএম