ব্রাহ্মণবাড়িয়ার আখাউড়ায় কমতে শুরু করেছে ভারত থেকে আসা পাহাড়ি ঢলের তীব্রতা। সে সাথে বিভিন্ন এলাকা থেকে পানি কমতে শুরু করেছে। শুক্রবার সকাল থেকে আখাউড়ার গাজীবাজার, মোগড়া, মনিয়ন্দসহ বিভিন্ন গ্রামের ডুবে থাকা বাড়িগুলো থেকে পানি নামতে শুরু করেছে।
২৪ ঘণ্টার ব্যবধানে দুপুর নাগাদ দেড় থেকে দুই ফুট পানি কমে গেছে। অনেকে আশ্রয় কেন্দ্র থেকে বাড়ি ফিরতে শুরু করেছেন। দুই-একদিনের মধ্যে পরিস্থিতি স্বাভাবিক হওয়ার আশা করা হচ্ছে।
এদিকে পানি কমলেও স্রোতের তোড়ে আখাউড়া-কসবা সড়কের দেবগ্রাম ও নয়াদিল এলাকাকে ভাগ করা একটি ছোট্ট সেতুর একপাশ ধসে যায়। এ অবস্থায় বৃহস্পতিবার রাত থেকে আখাউড়ার সঙ্গে কসবা উপজেলার সড়ক যোগাযোগ বন্ধ হয়ে যায়। এছাড়া পৌরএলাকার দেবগ্রামে নতুন নির্মাণ হওয়া আরেকটি সেতুর সড়কের পাশ থেকে মাটি সরে গেছে। দ্রুত পানি না কমলে এটি ঝুঁকির মধ্যে পড়ে যাবে। দু’টি সেতুর কাছে বৈদ্যুতিক খুঁটি থাকায় ওই এলাকাসহ আশে পাশে বিদ্যুৎ সরবরাহ বন্ধ রাখা হয়েছে। তবে হাওড়া নদীর একটি বাঁধের তিনটি অংশ ভেঙে যাওয়ায় এখনও আখাউড়ার বিভিন্ন পয়েন্ট দিয়ে পানি ঢুকছে। এখন পর্যন্ত আখাউড়া ও কসবায় ৬০টির বেশী গ্রাম পানিতে প্লাবিত হয়েছে। পানিবন্দি হয়ে আছে দুই হাজার পরিবার।
স্থলবন্দর এলাকার কাস্টমস ও ইমিগ্রেশনে গিয়ে দেখা গেছে সেখানেও পানি একেবারেই কমে গেছে। ইমিগ্রেশন কর্মকর্তা মো. দেলোয়ার হোসেন জানান, কম্পিউটারসহ ইলেকট্রনিক ডিভাইস ঠিকঠাক থাকলে কর্তৃপক্ষের সঙ্গে আলোচনা করে দু’একদিনের মধ্যে কার্যক্রম শুরু করা যাবে।
এদিকে সরকারি সহযোগিতার পাশাপাশি শুক্রবার অনেক বেসরকারি সংগঠনকেও ত্রাণ কাজে এগিয়ে আসতে দেখা যায়। অনেকে আবার বাড়ি বাড়ি গিয়ে খাবারসহ নিত্য প্রয়োজনীয় দ্র্রব্যাদি পৌঁছে দিয়েছেন।
আখাউড়ার মোগড়া ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান মো. আব্দুল মতিন ও দক্ষিণ ইউনিয়নপরিষদ চেয়ারম্যান মো. জালাল উদ্দিন জানান, তাদের দুই ইউনিয়নের বেশির ভাগ এলাকাতেই পানি কমে গেছে। এখন আর কেউ আটকে থাকার মতো অবস্থায় নেই। পর্যাপ্ত ত্রাণ সুবিধাও পাওয়া যাচ্ছে বলে তারা জানান।
আখাউড়া উপজেলা নির্বাহী অফিসার গাজালা পারভীর রুহি জানান, মঙ্গলবার থেকে দেখা দেওয়া বন্যায় মোট ৪৭ গ্রাম প্লাবিত হয়। এতে এক হাজার ছয়শ’র বেশি পরিবার পানিবন্দি হয়ে পড়েন। তবে বৃহস্পতিবার রাত থেকেই পানি নামতে শুরু করে। শুক্রবার সকাল থেকে বিভিন্ন এলাকায় পানি কমে যাওয়ার বিষয়টি নিশ্চিত হয়েছেন। পানির তোড়ে ভেঙ্গে যায় উপজেলার গাজির বাজার এলাকার একটি অস্থায়ী সেতু। এতে করে আখাউড়া-আগরতলা সড়কে যান চলাচল বন্ধ হয়ে যায়। এছাড়াও প্রায় ১০টি ব্রীজ আংশিক ক্ষতিগ্রস্ত হয়। ক্ষতিগ্রস্ত লোকদেরকে উপজেলার ১১টি আশ্রয় কেন্দ্রে সরিয়ে নেয়া হয়। পানি কমতে থাকায় শুক্রবার ৪টি আশ্রয় কেন্দ্রে থাকা লোকজন নিজ নিজ বাড়িতে ফিরে গেছে। প্রশাসনের পাশাপাশি বিভিন্ন সামাজিক-সাংস্কৃতিক সংগঠন পর্যাপ্ত পরিমাণে সহায়তা দিচ্ছেন বলে তিনি জানান।
জেলা পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী মনজুর রহমান জানান, গতকাল রাত থেকে এখন পর্যন্ত হাওড়া নদীর পানি ৯ সেন্টিমিটারের মত কমেছে। এখন পানি বিপদ সীমার ৩৫ সেন্টিমিটার নিচে অবস্থান করছে। ইতিমধ্যে বিভিন্ন গ্রাম থেকে পানি কিছুটা কমতে শুরু করেছে। ভারতে বৃষ্টিপাত না হলে ২/৩ দিনের মধ্যে পানি সরে যাবে।
বিডি প্রতিদিন/হিমেল