কুমিল্লায় বন্যাদুর্গত এলাকায় সমস্যা দীর্ঘায়িত হচ্ছে। সরকারি সহায়তার অর্থ শেষ হয়ে গেছে। বাইরে থেকে প্রচুর ত্রাণ আসলেও শৃঙ্খলার অভাবে সুষম বণ্টন হচ্ছে না। বেশ কিছু স্থানে বস্তির লোকজন বন্যার্ত বলে দাবি করে ত্রাণ নিচ্ছে। ত্রাণ নিয়ে যাচ্ছে ডাঙার লোকজনও। এদিকে গোমতীর বাঁধ দিয়ে অনবরত পানি প্রবেশ করায় এবং নতুন করে সালদা ও ঘুঙুর নদীর ভাঙনের কারণে কার্যত পানির ওপর ভাসছে বুড়িচং ও ব্রাহ্মণপাড়া উপজেলা। পানি ঢুকছে দেবিদ্বার উপজেলাতেও। বুড়িচং ও ব্রাহ্মণপাড়া প্লাবিত হওয়ার পর দেবিদ্বারে প্রতিদিন নতুন নতুন এলাকা প্লাবিত হচ্ছে। এদিকে কুমিল্লা জেলার দক্ষিণের লাকসাম, মনোহরগঞ্জ, চৌদ্দগ্রাম ও নাঙ্গলকোটের মানুষও পানিবন্দি। সেখানে সহায়তার দাবি এলাকাবাসীর।
গোমতী তীরবর্তী বিভিন্ন এলাকা সরেজমিন গিয়ে দেখা গেছে, বেশির ভাগ ত্রাণের গাড়ি শহরতলীর শাসনগাছা থেকে পালপাড়া ব্রিজ হয়ে কালখাড়পাড় এলাকা দিয়ে বুড়িচংয়ে প্রবেশ করে। কুমিল্লা নগরীর বস্তি থেকে আসা লোকজন এ রাস্তায় দাঁড়িয়ে থাকে। এছাড়া বন্যা দুর্গত নয়, এমন এলাকার লোকজনও ভিড় করছে এসব এলাকায়। যার কারণে ত্রাণবাহী গাড়িগুলো ঠিকভাবে সামনের দিকে অগ্রসর হতে পারে না। কিছু গাড়ি ভিড় ঠেলে একটু সামনে অগ্রসর হলেও নৌকার অভাবে গন্তব্যে খাবার পৌঁছে দিতে পারছে না। এ পরিস্থিতির মধ্যে পড়ে ত্রাণ নিয়ে আসা বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান ও সংগঠন বন্যাদুর্গত নয় বা বন্যায় সামান্য ক্ষতিগ্রস্ত লোকজনের হাতেই ত্রাণ তুলে দিচ্ছে। একেকজন একাধিকবার পাচ্ছেন,বঞ্চিত হচ্ছেন প্রকৃত দুর্গতরা।
বুড়িচং সদরের বাসিন্দা জহিরুল হক বাবু বলেন, সব জায়গায় শৃঙ্খলার অভাব। যাদের ত্রাণ দরকার তারা পাচ্ছে না। যারা পাচ্ছেন, তারা একাধিকবার পাচ্ছেন। ত্রাণের গাড়িগুলো সদর উপজেলা হয়ে সামনের দিকে অগ্রসর হলেই দুর্বৃৃত্তের কবলে পড়ছে। সড়কে প্রশাসনের সরব উপস্থিতি ও সেনাবাহিনীর নিয়ন্ত্রণ থাকলে যে পরিমাণ ত্রাণ আসছে, তা দিয়ে দুর্গত এলাকায় কয়েকদিন চলে যেত।
লাকসামের মনপাল গ্রামের অহিদুল ইসলাম ও জসিম উদ্দিন বলেন, স্থলভাগ থেকে গ্রাম কয়েক কিলোমিটার দূরে। গ্রাম এখন বিচ্ছিন্ন জনপদ। তাই গ্রামের দোকানে নিত্য প্রয়োজনীয় সামগ্রী আসছে না। কিছু পেলে দাম চড়া। এই গ্রামসহ আশপাশের গ্রাম গুলোতে সহযোগিতা প্রয়োজন।
বুড়িচংয়ের নির্বাহী কর্মকর্তা সাহিদা আক্তার বলেন, আমরা পানির ওপর ভাসছি। ইউনিয়ন পরিষদের সচিবদের দিয়ে দুর্গম এলাকায় খাবার দিচ্ছি। তারা বোট পরিচালনা করছে। এটা তাদের কাজ না। একাধিক স্থানে ত্রাণের গাড়ির ওপর দুর্বৃৃত্তরা হামলা করেছে। সেনাবাহিনী মাঠে কাজ করছে। তবে যে পরিমাণ সেনা সাপোর্ট দরকার, তা পাওয়া যাচ্ছে না।
ব্রাহ্মণপাড়ার দুলালপুর গ্রামের বাসিন্দা আনোয়ারুল হক বলেন, মাধবপুর ইউনিয়নের সামান্য কিছু অংশ ব্যতীত এ উপজেলার শতভাগ গ্রাম প্লাবিত হয়েছে। পর্যাপ্ত ত্রাণ পাচ্ছে না এ উপজেলার মানুষ।
ব্রাহ্মণপাড়ার নির্বাহী কর্মকর্তা স.ম আজহারুল ইসলাম বলেন, সরকারি বরাদ্দের টাকা শেষ। বুড়িচং হয়ে এখানে ত্রাণ পৌঁছানো সম্ভব না। যারা ত্রাণ কাজে সহায়তা করতে চান, তারা মুরাদনগরের কোম্পানীগঞ্জ হয়ে ব্রাহ্মণপাড়ায় ঢুকতে পারবেন।
বিডি প্রতিদিন/এএ