বেশ কয়েক বছর থেকে রংপুর অঞ্চলের মানুষের প্রাণের দাবি তিস্তা মহাপরিকল্পনা বাস্তবায়ন। তিস্তা নদীর দুইপাড়ের লাখ লাখ মানুষের দুঃখ, দুর্দশা লাঘব করতে পারে একমাত্র মহাপরিকল্পনা বাস্তবায়নে। এই পরিকল্পনা বাস্তবায়ন হলে তিস্তাপাড়ের মানুষের পানির জন্য অন্যের মুখাপেক্ষী হয়ে থাকতে হবে না। সেই সাথে পাল্টে যাবে দেশের আর্থ সামাজিক অবস্থা। তাই এই অঞ্চলের মানুষ প্রতীক্ষা করছেন তিস্তা মহাপরিকল্পনা বাস্তবায়ন আঁধার কেটে কবে আলোর মুখ দেখবে।
গত ১৬ জুলাই কোটাবিরোধী আন্দোলনে বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী আবু সাঈদ পুলিশের গুলিতে নিহত হন। সম্প্রতি আবু সাঈদের কবর জিয়ারত করতে এসেছিলেন অন্তর্বর্তীকালীন সরকারপ্রধান ড. মুহাম্মদ ইউনূস। রংপুরে সফরে বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ে কোটাবিরোধী আন্দোলনের ছাত্রদের সাথে মতবিনিময় করেন প্রধান উপদেষ্টা। এ সময় ছাত্ররা তিস্তা মহাপরিকল্পনা বাস্তবায়নসহ রংপুরের বিভিন্ন সমস্যা তুলে ধরেন। প্রধান উপদেষ্টা রংপুরের সমস্যাগুলো লিখিত আকারে ছাত্রদের দিতে বলেন।
এছাড়া বাংলাদেশ ভারতের অভিন্ন নদী তিস্তা ও গঙ্গার পানি বণ্টন ইস্যুতে একটি বন্ধুত্বপূর্ণ সমাধান খুঁজতে চায় বাংলাদেশ। তবে একই সঙ্গে এই ইস্যুতে ভারতের সঙ্গে বন্ধুত্বপূর্ণ সমাধান সম্ভব না হলে আন্তর্জাতিক আইনের দ্বারস্থ হতে পারে বাংলাদেশ। ভারতীয় সংবাদ সংস্থা পিটিআইকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে এমনটাই জানিয়েছেন বাংলাদেশের অন্তর্বর্তী সরকারের পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন উপদেষ্টা সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান। যা গণমাধ্যমে প্রকাশ পেয়েছে। সৈয়দা রিজওয়ানা হাসানর তিস্তা ইস্যু নিয়ে এমন মন্তব্য করায় তিস্তা পাড়ের মানুষ নতুন করে আশার আলো দেখতে শুরু করেছেন।
জানা গেছে, তিস্তা মহাপরিকল্পনায় রয়েছে ডালিয়া পয়েন্ট থেকে ব্রক্ষ্মপুত্রের সংযোগস্থল পর্যন্ত নদী খনন করা। নদীর দুই তীর রক্ষা বাঁধ, নদী ড্রেজিং করে যে মাটি উত্তোলন হবে সেই মাটি নদীর দুপাশে ভরাট করে ইপিজেট, সোলার পাওয়ার প্লান্টসহ বিভিন্ন উন্নয়নমূলক কাজ করা হবে। এতে হাজার হাজার মানুষের কর্মসংস্থান হবে। এই পরিকল্পনা বাস্তবায়নে চীনের আগ্রহ ছিল। পরিকল্পনার অংশ হিসেবে ২০২২ সালে ঢাকায় নিযুক্ত চীনা রাষ্ট্রদূত লি জিমিং তিস্তার ডালিয়া পয়েন্ট ও রংপুরের গঙ্গাচড়া উপজেলার লহ্মীটারী ইউনিয়নের সেতুর উপর তিস্তা নদী পরিদর্শন করেন। সে সময় চীনা রাষ্টদূতের এলাকা পরিদর্শনের ফলে তিস্তা পাড়ের মানুষ আঁধার কেটে আলোর হাতছানি দেখেছিলেন। পরে সেই পরিদর্শন ও পরিকল্পনা আলোর মুখ দেখেনি।
বিগত সরকারও তিস্তা মহাপরিকল্পনা বাস্তবায়ন নিয়ে আশার বাণী শুনিয়েছিলেন। সেটিও আলোর মুখ দেখেনি।
শুকনো মৌসুমে তিস্তার চারিদিকে দেখা যায় ধু-ধু বালুচর। পানির অভাবে তিস্তা নদীর আশপাশের এলাকায় পানি অনেক নিচে নেমে যায়। ভারত তিস্তার উজানে গজলডোবায় বাধ দিয়ে একতরফা পানি প্রত্যাহারের কারণে তিস্তা প্রকল্পে প্রতিবছরই পানির ঘাটতি দেখা দেয়। আবার বর্ষাকালে প্রবল পানির তোড়ে ব্যারেজ ও আশপাশের অঞ্চল ঝুঁকির মুখে পড়ে। তখন ডালিয়া ব্যারেজের ৪৪টি গেট রাতদিন খুলে রেখেও পানি সরানো কঠিন হয়ে পড়ে। ফলে শুকনো ও বর্ষা দুই মৌসুমে তিস্তা অববাহিকার মানুষের সময় কাটে দীর্ঘশ্বাসে। শুকনো মৌসুমে ভারতে পানির ওপর নির্ভরতা থাকায় তিস্তা অববাহিকার ৫ জেলা নীলফামরী, লালমনির হাট, রংপুর, কুড়িগ্রাম ও গাইবান্ধা জেলায় পানির জন্য হাহাকার দেখা দেয়।তিস্তা নিয়ে মহাপরিকল্পনা বাস্তাবায়ন হলে শুকনো মৌসুমে ভারতে কাছে পানির জন্য হাত পাততে হবে না।
তিস্তা বাঁচাও নদী বাঁচাও সংগ্রাম পরিষদের সভাপতি নজরুল ইসলাম হক্কানি ও সাধারণ সম্পাদক শফিয়ার রহমান বলেন, তিস্তাপাড়ের মানুষের দুঃখ লাঘবে যত দ্রুত সম্ভব তিস্তা মহাপরিকল্পনা বাস্তবায়ন কাজের উদ্বোধন করা উচিত। এ প্রকল্পে সাড়ে ৮ হাজার কোটি টাকা লাগবে। অন্তর্বর্তী সরকারের পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন উপদেষ্টা সৈয়দা রিজওয়ানা হাসানের সাক্ষাৎকার প্রসঙ্গে তারা বলেন, ভারত শুধু তিস্তা নয়। অন্যান্য নদ-নদীর পানি প্রত্যাহার করে বাংলাদেশে মরুকরণ করছে। তাই পানির ন্যায্য হিস্যার জন্য বাংলাদেশের আন্তর্জাতিক আদালতে যাওয়া উচিত।
বিডি প্রতিদিন/এএ