ফেনীতে স্মরণকালের সবচেয়ে ভয়াবহ বন্যায় আড়াই হাজারেরও বেশি পোলট্রি ও ডেইরি শিল্পের উদ্যোক্তা ক্ষতির মুখে পড়েছেন। অনেক খামারির সহায়-সম্পত্তি বন্যার পানিতে নিমজ্জিত হয়েছে। মুরগির খামার করে স্বাবলম্বী হয়েছিলেন শাহাদাত হোসেন। কিন্তু স্মরণকালের ভয়াবহ বন্যায় মুরগি মারা যাওয়ায় তার প্রায় ১ কোটি ২০ লাখ টাকার ক্ষতি হয়েছে বলে তিনি দাবি করেছেন।
সোনাগাজী উপজেলার মঙ্গলকান্দি ইউনিয়নের আকিলপুর গ্রামের শাহাদাত হোসেন সৌদি আরবে ১২ বছরের প্রবাস জীবন শেষে ২০০৯ সালে দেশে এসে উদ্যোক্তা হওয়ার স্বপ্ন দেখেছিলেন। সে স্বপ্ন বাস্তবায়নে ধার-দেনা, ব্যাংক ঋণ ও নিজের সঞ্চয় করা ৪০ লাখ টাকা দিয়ে একটি পোলট্রি খামার দিয়ে ব্যবসা শুরু করেন। নিজ প্রচেষ্টায় মেধা-যোগ্যতায় পর্যায়ক্রমে ব্যবসা বড় হয়। পোলট্রি ব্যবসায় আধুনিক প্রযুক্তি ব্যবহার করে সফলতা আসতে শুরু করায় পর্যায়ক্রমে বাড়তে থাকে তার খামারের সংখ্যাও। বড় হতে থাকে তার ব্যবসা। পোলট্রি ব্যবসাকে ঘিরে ব্যস্ত হয়ে উঠেন তিনি। সেই সঙ্গে তার খামারে এলাকার অনেক বেকার যুবকের সৃষ্টি হয় কর্মসংস্থানও।
রাণী এগ্রোর স্বত্তাধিকারী শাহাদাত হোসেন বলেন, সাম্প্রতিক ভয়াবহ বন্যায় ভেসে গেছে আমার অনেক স্বপ্ন। বন্যার কারণে আমার পিলেট মুরগি সবগুলা মারা গেছে, অনেকগুলা লেয়ার মুরগিও মারা গেছে। বন্যায় খাদ্য সংকট ও রোগ বালাইয়ের কারণে লেয়ার মুরগির ডিম উৎপাদন অনেক কমে গেছে। ৮টি মুরগির খামারের মধ্যে ২টি খামার ব্যবহারের অনুপযোগী হয়ে পড়েছে। মুরগির সঙ্গে কিছু খাবার ও জিনিসপত্র পানিতে নষ্ট হয়ে গেছে। তিনি আরো বলেন, পোলট্রি ব্যবসায় আমার প্রায় ১ কোটি ২০ লাখ টাকার ক্ষতি হয়েছে। এ ক্ষতি কিভাবে কাটিয়ে উঠবো বুঝতে পারছি না। এখন যদি সরকারি অনুদান-প্রনোদনা অথবা স্বল্প সুদে ক্ষুদ্র ঋণের সুযোগ দেওয়া হয়, তাহলে এ ক্ষতি কাটিয়ে উঠতে পারবো।
উপজেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা ডা. নেভু লাল দত্ত বলেন, বন্যায় সোনাগাজীতে পোলট্রি খামারিদের ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে, যা পুষিয়ে উঠতে অনেক সময় লাগবে। ক্ষতিগ্রস্ত খামারীদের তালিকা প্রস্তুত করে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষ বরাবর সুপারিশ করা হয়েছে।
উপজেলা নির্বাহী অফিসার কামরুল হাসান বলেন, অতীতে এমন ভয়াবহ বন্যা এই উপজেলার কেউ দেখেনি। বন্যায় এই উপজেলার মানুষ অনেক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। বিশেষ করে শাহাদাত হোসেন এর মত অসংখ্য মুরগির খামারি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন। আমরা ক্ষতিগ্রস্ত সবার তথ্য অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের কাছে জানাব। আশা করি সরকার এসব খামারিদের পাশে দাঁড়াবেন। তাহলে এসব উদ্যোক্তা ঘুরে দাঁড়াতে পারবে।
বিডি প্রতিদিন/হিমেল