বারবার প্রাকৃতিক দুর্যোগ এবং সাগরের উত্তাল ঢেউয়ের তাণ্ডবে প্রতিনিয়ত ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে পর্যটন কেন্দ্র কুয়াকাটা সৈকত। ক্রমশ বদলে যাচ্ছে এর মানচিত্র। চলতি বর্ষা মৌসুমে সৈকতের জিরো পয়েন্ট এলাকার দুই দিকে ঝুঁকি বিবেচনায় জরুরি মেরামতের উদ্যোগ নেয় পানি উন্নয়ন বোর্ড। ইতিমধ্যে জিওব্যাগ ও টিউব স্থাপনের কাজ শুরু হয়েছে।
এর আগে, ২০২৩-২৪ অর্থ বছরে ২ কোটি ৯৫ লাখ টাকা ব্যয়ে সৈকতের ভূভাগ ঘেঁষে ১৫০০ মিটার সৈকত প্রাথমিক সুরক্ষায় জিওব্যাগ এবং টিউব স্থাপন করে পানি উন্নয়ন বোর্ড। এই কাজের শেষের দিকে ঘূর্ণিঝড় রেমালে তা ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে বলে জানা গেছে।
সরেজমিন ঘুরে দেখা যায়, ওইসব জিওব্যাগ এবং টিউব ঢেউয়ের তাণ্ডবে ক্ষতবিক্ষত হয়ে বালু বেড়িয়ে যায়। এতে প্রাথমিক সৈকত সুরক্ষা প্রকল্পের ৭০ ভাগ ক্ষতি হয়। ফলে ঝুঁকির মধ্যে রয়েছে সৈকতের কোল ঘেঁষে অবস্থিত মসজিদ, মন্দির, মার্কেট, আবাসিক হোটেলসহ জেলা প্রশাসনের ট্যুরিজম পার্ক, ট্যুরিস্ট পুলিশ বক্স ও পৌরসভা কর্তৃক নির্মাণাধীন মেরিন ড্রাইভ সড়ক।
এ ছাড়া সমুদ্রের অস্বাভাবিক ঢেউয়ের কারণে ইতিমধ্যে সাগর গর্ভে দুই তৃৃতীয়াংশ ঝাউবন বিলীন হয়ে গেছে। এতে সৈকত প্রাকৃতিক সৌন্দর্য হারাচ্ছে। দ্রুত সময়ের মধ্যে বালুক্ষয় রোধ করতে না পারলে আগামী এক বছরের মধ্যে পুরো ঝাউবন সমুদ্রে বিলীনের আশঙ্কায় রয়েছে। তাই সবুজ বেষ্টনী খ্যাত ঝাউবন ও সৈকত রক্ষায় সরকারকে কার্যকরী পদক্ষেপ নেওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন পর্যটন সংশ্লিষ্ট ব্যবসায়ীরা।
স্থানীয়রা জানান, সৈকতে অসংখ্য ধূসর রঙের শ্যাওলা ধরা জিওব্যাগ ও টিউবে পর্যটকরা হাটতে গিয়ে পা পিছলে আহত হচ্ছেন। আবার জোয়ারের সময় ওইসব জিওব্যাগ ও টিউবের কারণে সৈকতে ঘূর্ণি স্রোতের সৃষ্টি হয়। ফলে শিশু-কিশোর নিয়ে গোসল করতে গিয়ে বিপদের শঙ্কায় পড়েন অনেক পর্যটক। আর এসব ভোগান্তির কারণে পর্যটকরা কুয়াকাটার প্রতি আগ্রহ হারিয়ে ফেলছে।
সৈকতের ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীরা জানান, পানি উন্নয়ন বোর্ডের সর্বশেষ গৃহীত প্রকল্পটি প্রাথমিক সৈকত সুরক্ষায় অনেক উপকার হয়েছে। অন্যথায় সৈকতের পাশে থাকা ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান ইতিমধ্যে সমুদ্র গর্ভে বিলীন হয়ে যেত।
কুয়াকাটা হোটেল ওনার্স অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক মোতালেব শরীফ জানান, সৈকত রক্ষায় স্থায়ী পদক্ষেপ নেওয়ার জন্য জরুরি ভিত্তিতে সরকারি ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের হস্তক্ষেপ কামনা করেছেন।
পানি উন্নয়ন বোর্ড কলাপাড়া সার্কেলের নির্বাহী প্রকৌশলী মো. রাকিব হোসেন সাংবাদিকদের জানান, ঘূর্ণিঝড় রেমালে যে সব স্থানে বেশি ক্ষতি হয়েছে, সেসব জায়গায় জরুরি মেরামতের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। পরে গুরুত্ব বিবেচনায় পদক্ষেপ নেওয়া হবে।
তিনি আরও জানান, স্থায়ী প্রকল্প প্রস্তাবনা মন্ত্রণালয় পাঠানো হয়েছে। অর্থের জোগান দিতে বাংলাদেশ ব্যাংকের কাছে চিঠি দেওয়া হয়েছে।
বিডি প্রতিদিন/এমআই