পাঁচটি উপজেলার সমন্বয়ে গঠিত ঠাকুরগাঁও জেলা। সদর উপজেলা ব্যতীত চারটি উপজেলা ভারতের সীমান্ত ঘেঁষা। সাধারণ মানুষকে সে কারণে চিকিৎসাসহ নিত্য প্রয়োজনীয় কাজে আসতে হয় জেলা শহরে। জেলায় ২৫০ শয্যা বিশিষ্ট জেনারেল হাসপাতাল থাকলেও ব্যাঙের ছাতার মতো গড়ে উঠেছে বেসরকারি হাসপাতাল, ক্লিনিক ও ডায়াগনস্টিক সেন্টার। হাতে গোনা কয়েকটি প্রতিষ্ঠান ব্যাতিত বাকিগুলোর লাইসেন্স নবায়ন করা নেই। কয়েক বছর ধরে লাইসেন্স নবায়ন ছাড়াই নিয়মনীতির তোয়াক্কা না করে চলছে প্রতিষ্ঠানগুলো।
জেলার পৌরশহরের কয়েকটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠান ঘুরে দেখা যায়, নিয়ম নীতির কোন বালাই নেই প্রতিষ্ঠানগুলোতে। নীতিমালা অনুযায়ী ক্লিনিক ও হাসপাতালগুলোতে ২৪ ঘণ্টা একজন ডিগ্রিধারী চিকিৎসক ও নার্স থাকার কথা থাকলেও তাদের কোনো অস্তিত্ব দেখা মিলেনি। নির্দিষ্ট বেড অনুমোদন নিলেও তার চেয়ে বেশি বেড রাখা হয়। তাতেও বেশি মূল্যে থাকতে হয় রোগী ও স্বজনদের।
এছাড়াও অপারেশন ও সিজার করার কিছু সময় আগে ডেকে আনা হয় চিকিৎসককে। একই উপকরণ ব্যবহার করা হয় অধিকাংশ অপারেশনে। অনেক সময় থিয়েটারে থাকে আয়া ও ওটি বয়৷ অনেক সময় তারা সেলাই করার কারণে নানা জটিলতার মুখোমুখি হতে হয় রোগীকে৷
জেলা সিভিল সার্জন অফিসের দেয়া তথ্য মতে, জেলায় তালিকাভুক্ত বেসরকারি হাসপাতাল, ক্লিনিক ও ডায়াগনস্টিক সেন্টার রয়েছে ১৬৬টি। যার মধ্যে হাসপাতাল রয়েছে ৩৭টি ও বেসরকারি ক্লিনিক ও ডায়াগনস্টিক রয়েছে ১২৯ টি। নিয়ম মেনে পরিচালনা না করায় বন্ধ করে দেয়া হয়েছে ২২টি। আর ২৩-২৪ অর্থ বছরে লাইসেন্স নবায়ন এর আবেদন করেছে ৩৯ টি প্রতিষ্ঠান।
বাকি প্রতিষ্ঠানগুলোর নবায়ন করা রয়েছে পর্যায়ক্রমে ২০১৮-২০১৯ অর্থ বছর থেকে ২০২০-২০২১ এর আগে৷ তবে ৫ টি প্রতিষ্ঠান ছাড়া কোনটির নবায়ন করা পাওয়া যায়নি। সেই হিসেবে জেলায় কোন বেসরকারি হাসপাতাল, ক্লিনিক ও ডায়াগনস্টিক সেন্টারের লাইসেন্স নবায়ন নেই।
পৌরশহরের বেসরকারি ক্লিনিকে বোনকে সিজার করিয়েছিলেন সিরাজুল ইসলাম। তিনি বলেন, বোনের সিজার করার পর তারা পেটের ভিতরে গজ রেখে দিয়েছিল। পরে ইনফেকশন হবার কারণে দিনাজপুর গিয়ে আবার পুনরায় অপারেশন করাতে হয়েছিল। রোগীর অবস্থা অনেক ঝুঁকিপূর্ণ ছিল।
শরিফুল ইসলাম নামে এক ভুক্তভোগী বলেন, শহরের হাসান জেনারেল হাসপাতালে আমার স্ত্রী সিজার করিয়েছি। আগে তাদের সঙ্গে ১৩ হাজার ২০০ টাকা ঠিকঠাক হয়। অপারেশন শেষে তারা আমাকে ১৮ হাজার ২০০ টাকার জন্য চার্জ করেন এবং খারাপ আচরণ করেন। এ ঘটনায় আমি ভোক্তা অধিকারে লিখিত অভিযোগ দিয়েছি৷
স্থানীয় সমাজকর্মী জহির ইসলাম বলেন, প্রতি বছরে ভুল সিজারিয়ান অপারেশনের কারণে অনেক মায়ের মৃত্যু হয়। আবার অনেকে জটিলভাবে অসুস্থ হয়ে পড়েন। কিন্তু এসবের কোনো বিচার হয় না। টাকা আর রাজনৈতিক প্রভাবে এসব ধামা চাপা পরে যায়। এসবের সূরাহ হওয়া উচিত৷
২০১৮-১৯ অর্থ বছর থেকে লাইসেন্স নবায়ন করা নেই মাম হাসপাতাল ও ডায়াগনস্টিক সেন্টারের। প্রতিষ্ঠানটির স্বত্বাধিকারী মো বাবলু বলেন, আমরা টাকা জমা দিয়েছি। কিছু কাগজপত্র না দেয়ায় এখনো নবায়ন হয়নি। খুব দ্রুত সময়ের মধ্যে হবে আশা করছি।
বেসরকারি হাসপাতাল ক্লিনিক ও ডায়াগনস্টিক সেন্টার মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক আবু দাউদ সামসুজ্জোহা চৌধুরী বলেন, অনেকগুলো প্রতিষ্ঠানের কয়েক অর্থ বছর ধরে রিনিউ করা হয়নি। পরিবেশ ও মাদকদ্রব্যের ছাড়পত্র না পাওয়ার জন্য এমন হয়েছে। আমরা সকলের সাথে কথা বলেছি৷ এটি দ্রুত সমাধানের চেষ্টা করছি।
ঠাকুরগাঁওয়ের সিভিল সার্জন ডা. নুর নেওয়াজ আহমেদ বলেন, এ বিষয়ে অধিদপ্তরে কথা বলেছি। শহরের মাম, সেবা, ফ্রেন্ডস অ্যাপলোসহ অনেক প্রতিষ্ঠানের রিনিউ করা নেই। যেসব প্রতিষ্ঠানের রিনিউ করা নেই এবং অধিদপ্তরের নিয়ম মেনে চলে না সেগুলো আমরা বন্ধ করে দেব।
বিডি প্রতিদিন/হিমেল