ময়মনসিংহের হালুয়াঘাটে টানা ২৪ ঘণ্টার ভারি বর্ষণে ও উজান থেকে নেমে আসা পাহাড়ি ঢলে তলিয়ে গেছে হালুয়াঘাট পৌরশহর ও বেশ কয়েকটি ইউনিয়ন। শহরের বিভিন্ন বাসা-বাড়ি ও দোকানপাটে পানি উঠেছে। এছাড়া হালুয়াঘাট-ময়মনসিংহ আঞ্চলিক সড়কের বিভিন্নস্থান তলিয়ে যাওয়ায় সড়কে যান চলাচল ব্যাহত হচ্ছে। ফলে চরম ভোগান্তিতে পড়েছে হাজারো পরিবার। এছাড়া ভারী বৃষ্টিপাতে তলিয়েছে উপজেলার কয়েক হাজার একরের সদ্য রোপনকৃত আমন ধানের ক্ষেত।
জানা যায়, গত শুক্রবার রাত ৭টা থেকে হালুয়াঘাটে ভারী বৃষ্টিপাত শুরু হয়ে টানা ২৪ ঘণ্টা বৃষ্টি অব্যাহত থাকে। সেই ভারী বর্ষণ ও উজান থেকে নেমে আসা ঢলের পানি দ্রুত নামতে না পারায় পৌর শহরের বিভিন্ন বাসা-বাড়ি, ব্যবসা প্রতিষ্ঠান ও খাদ্যগুদামের ৩টি লেয়ারে পানি প্রবেশ করেছে। কৃষি অফিসের তথ্যমতে প্রায় ২২৮ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত রের্কড করা হয়।
সরেজমিন দেখা গেছে, আঞ্চলিক মহাসড়কের পাশে হালুয়াঘাট থানা, উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স, উপজেলা পরিষদ, খাদ্য গুদাম, ফায়ার সার্ভিস স্টেশনের সামনের অংশ, জয়িতা প্রাঙ্গণসহ পৌরশহরের বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠান পানিতে তলিয়ে আছে। পানি উঠায় ব্যাহত হচ্ছে যানবাহন চলাচল। পানি ঠেলে চলতে গিয়ে বিকল হচ্ছে যানবাহন। মানুষজন পানি মাড়িয়ে চলাচল করছেন। আবার অনেকেই পানি কবলিত এলাকা ছেড়ে পরিবার পরিজন নিয়ে নিরাপদ আশ্রয়ে যেতে রাত থেকেই ছিল উপচেপড়া ভিড়। যে যেভাবে পেরেছেন আশ্রয়কেন্দ্রসহ আত্মীয়-স্বজনদের কাছে ঠাঁই নিয়েছেন। তাৎক্ষণিক পরিস্থিতি মোকাবেলায় উপজেলা প্রশাসন ৪টি আশ্রয়কেন্দ্রের ব্যবস্থা করেছেন। সহযোগিতায় পাশে থাকতে গঠন করা হয়েছে বিভিন্ন টিম। প্লাবিত এলাকাগুলোতে পানিবন্দি মানুষদের উদ্ধার করতে হালুয়াঘাট ফায়ার সার্ভিস ও পুলিশ কাজ করে যাচ্ছে। সামাজিক প্রতিষ্ঠান ও ব্যক্তি সহায়তায় দেয়া হচ্ছে শুকনো খাবার। সবমিলিয়ে চরম দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে উপজেলাবাসীকে।
ভুক্তভোগীরা অভিযোগ করে বলছেন, দূষণ আর নদী-নালা ভরাট হয়ে যাওয়ায় পানি প্রবাহের পথ বন্ধ হয়ে পড়েছে। ফলে বিভিন্ন সময় বৃষ্টি ও উজান থেকে নেমে আসা ঢলের পানি দ্রুত নামতে না পেরে শহরে জলাবদ্ধতা সৃষ্টি হয়। এছাড়া পৌরশহরে অপর্যাপ্ত ড্রেনেজ ব্যবস্থার কারণেও অল্প বৃষ্টিতে কৃত্রিম জলাবদ্ধতা দেখা দেয়। বছরের পর বছর এই অবস্থা চলতে থাকলেও পৌর কর্তৃপক্ষ জলাবদ্ধতা নিরসনে কার্যকর কোনো পদক্ষেপ নেয়নি। ফলে স্থানীয়দের বার বার খেসারত দিতে হচ্ছে।
হালুয়াঘাট ডি.এস আলিম মাদরাসার আশ্রয়কেন্দ্রে ঠাঁই পাওয়া কাশেম আলী জানান, এই বয়সেও এমন পানি দেখতে হবে এমনটি ভাবিনি। পরিস্থিতির শিকার হয়ে পরিবার পরিজন নিয়ে আজ আশ্রয়কেন্দ্রে আসতে হল। সাথে করে কিছুই আনার সুযোগ পায়নি।
কৃষি অফিসের তথ্যমতে, এ বছর উপজেলার ১২টি ইউনিয়ন ও ১টি পৌরসভাসহ মোট রোপা আমন আবাদ করা হয়েছিল ২৪ হাজার ৯শত ৫ হেক্টরে জমিতে। তার মধ্যে বন্যা পরিস্থিতিতে পূর্ণ নিমজ্জিত ৪১শ হেক্টর ও অর্ধ নিমজ্জিত ৩৫শ হেক্টর। পাশাপাশি ভেসে গেছে মাছের ঘেরসহ সবজি আবাদ।
এ ব্যাপারে জানতে হালুয়াঘাট পৌর প্রশাসক ও সহকারী কমিশনার (ভূমি) জান্নাত মুঠোফোনে জানান, পৌরসভার পক্ষ থেকে আশ্রয়কেন্দ্রে আশ্রিত ৬শত পরিবারকে খাদ্য সহায়তা দেয়া হয়েছে। অবস্থা নিরুপণ করে অন্যান্য ব্যবস্থা প্রক্রিয়াধীন বলে জানান তিনি।
বন্যা পরিস্থিতি মোকাবেলাকল্পে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মো. এরশাদুল আহমেদ বলেন, আকস্মিক বন্যায় পৌরসভাসহ বেশ কয়েকটি ইউনিয়ন প্লাবিত হয়েছে। উপজেলাবাসীকে সহযোগিতা করতে বিভিন্ন ধরনের টিম গঠন করা হয়েছে। প্লাবিত এলাকার লোকজনের নিরাপদ আশ্রয় পেতে আশ্রয়কেন্দ্র খোলা হয়েছে। তাদেরকে সহযোগিতা করতে সব ধরনের পদক্ষেপ গ্রহণ করা হচ্ছে।
বিডি প্রতিদিন/হিমেল