শেরপুরের নালিতাবাড়ীতে বন্যার কারণে গবাদিপশু নিয়ে বিপাকে পড়েছে বন্যার্তরা। এ ছাড়াও গো-খাদ্যের সংকট দেখা দিয়েছে। প্রাণীসম্পদ বিভাগ থেকেও এখন পর্যন্ত কোনো বরাদ্দ মেলেনি। কৃষকরা সরকারের সহায়তার জন্য দাবি জানিয়েছেন।
উপজেলা প্রাণিসম্পদ ও কৃষকরা জানান, গত বৃহস্পতিবার রাত থেকে ভারী বৃষ্টি ও ভারতের মেঘালয় রাজ্য থেকে নেমে আসা ভোগাই ও চেল্লাখালী নদীতে পাহাড়ি ঢল নামে। এতে ভোগাই ও চেল্লাখালী নদীর বিভিন্ন অংশ ভেঙে ও বাধ উপচে ঢলের পানি উপজেলার কমবেশি সকল ইউনিয়ন প্লাবিত হয়। এতে দিশেহারা মানুষ বন্যায় বাড়িঘর প্লাবিত হওয়ায় সড়কে, আশ্রয়কেন্দ্রে ও উঁচু স্থানে এনে রাখা হয়েছে গরুগুলোকে।
কয়েকদিন হয়ে যাওয়ায় মানুষ গবাদিপশু নিয়ে বিপাকে পড়েছেন। গো-খাদ্যের চরম সংকট দেখা দিয়েছে। অনেক পরিবারের সংগ্রহে থাকা গো-খাদ্য বন্যার পানিতে নষ্ট হয়ে গেছে। এমন পরিস্থিতিতে গরু-ছাগল সঙ্গে রাখা বাড়তি ঝামেলা মনে করছেন তারা। ফলে গৃহপালিত এসব প্রাণী কম দামে বিক্রি করে দিতে চাইছেন অনেকে।
সড়কের এক পাশে পলিথিনের চাদুয়া টানিয়ে আবার ব্রিজের উপর কয়েকশ গরু-ছাগল রেখেছেন। কয়েকজন কৃষক জানান, বন্যার পানিতে ঘরবাড়ি ডুবে যাওয়ায় সবাই আশ্রয় নিয়েছেন সড়কের পাশে খুপরি তুলে। বানের স্রোতে বসতঘরে সম্পূর্ণ বিধ্বস্ত হওয়া পরিবারগুলো সড়কে আশ্রয় নিয়ে মানবেতর দিনযাপন করছেন। এ ছাড়া কোনো কোনো পরিবারের ঘরে থাকার মতো পরিবেশ হলেও গবাদিপশু নিয়ে বিপাকে। পানিতে পচে গেছে সব গো-খাদ্য। নিজেরা একবেলা খেতে পারলেও পশুগুলোর মুখে তুলে দিতে পারছেন না কিছুই। পথের দুই ধারে বিভিন্ন স্থানে গবাদিপশু বেঁধে রাখতে দেখা গেছে। পাশের গ্রামগুলোতে এখনো বন্যার পানি আছে। তাই মানুষ যেমন ঘরে ফিরতে পারছেন না। নেই গবাদিপশু চরানোর জায়গাও।
কলসপাড় ইউনিয়নের ঘোগড়াকান্দী গ্রামে যাওয়ার পথে জাকির হোসেন ও আমজাদ আলী বলেন, বোবা প্রাণীগুলোর জন্য এখন যত চিন্তা। এখনো বাড়ির আঙিনায় পানি। খড় পচে গেছে। এখন এগুলোকে কী খাওয়াব জানি না। সরকার থেকেও কোনো সহায়তা পাইনি। একদিকে গো-খাদ্যের সংকট, অন্যদিকে থাকার জন্য ঘর তুলতে হলে টাকার দরকার। সরকার যদি সহায়তা না করে, তাহলে গরু বিক্রি ছাড়া আর কোনো উপায় নেই।
উপজেলায় ছোট বড় খামারে মোট ৬৫ হাজার গবাদিপশু রয়েছে। এর মধ্যে ২৫৭টি গবাদিপশু ও ২৬৪টি হাস-মুরগির খামার ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।
উপজেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা মো. ফয়েজুর রহমান বলেন, গত শনিবার প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তর ও উপজেলা প্রশাসনের কাছে খাদ্যের চাহিদা দিয়ে চিঠি পাঠিয়েছি। এর মধ্যে গবাদিপশুর জন্য ২৫০ মেট্রিক টন ও হাস-মুরগির জন্য ১১৪ মেট্রিক টন। বরাদ্দ পেলে ক্ষতিগ্রস্ত কৃষকদের মাঝে দেওয়া হবে।
বিডি প্রতিদিন/এমআই