ময়মনসিংহের হালুয়াঘাটে ৬ দিন আগের ভারী বর্ষণ ও পাহাড়ী ঢলে এখনো পানিবন্দী হয়ে আছে প্রায় ৬টি ইউনিয়নের নিন্মাঞ্চলের মানুষ। খেয়ে না খেয়ে নিরাপদ স্থানে আশ্রয় নিয়ে দিন কাটাচ্ছে এসব উপজেলার হাজারও মানুষ।
বন্যাকবলিত এলাকার মানুষ এখন লড়াই করছে বাঁচার জন্য । কেউ না খেয়ে অভুক্ত, কারোর জীবন বাঁচানোর সংগ্রাম আধা পেট খেয়ে। ঘরবাড়ি পানিতে ডুবে যাওয়ায় অনেকেই স্থানীয় প্রশাসনের চালু করা আশ্রয়কেন্দ্রে আশ্রয় নিয়েছেন। বন্যার পানিতে তলিয়ে আছে রোপা আমনের উঠতি ফসল। ভেসে গেছে সবজি আবাদসহ মাছের ঘের।
আশ্রয় নেওয়া বানভাসি মানুষগুলোর এখন দুঃখের সীমা নেই। কর্মহীন হয়ে পড়েছেন অনেক পরিবার। সত্তোর্ধ সখিনা ও হাজেরা তাদেরই দু’জন। বিশেষ করে বয়োবৃদ্ধ মানুষগুলোর অবস্থা খুবই করুণ।
রাক্ষুসে এ বন্যায় গত ৬দিন ধরে উপজেলার নড়াইল ইউনিয়নের বাঘমার সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে ১৫টি পরিবারের সাথে আশ্রয়কেন্দ্র্রে তারাও আজ আশ্রিত। আজ বেলা ১১টার দিকে উপজেলার আলিশা বাজার রাস্তার একপাশে দেখা মেলে তাদের। দু’জনের স্বামী মারা গেছেন অনেক আগেই। সন্তানরা বিয়ে করে পৃথক সংসার করছেন। চোখে মুখে হতাশার ছাপ। বার্ধক্য বাসা বেঁধেছে শরীরে। কিন্তু পেট তো ক্ষুধা মানে না।
বয়সও দেখে না। তাই কষ্ট মাড়িয়ে তীর্থের কাকের মত নদীরঘাটে বসে আছেন ত্রাণের আশায়।
এ দুজনের মধ্যে সখিনা বেগম আক্ষেপ করে বলেন, বাপ আজ ছয়দিন ধইরা (ধরে) বাড়ি ছাড়া। এই পানিতে বাড়িঘর সব তল (তলিয়ে) করইয়া ফালাইছে। নাওয়া খাওয়া নাই ঠিক মত। হুন্না খাওন (শুকনো খাবার) আর কত খাওন যায়। আমরার (আমাদের) লাইগা কিছু একটা বাও ব্যবস্থা করুইন।
তাদের বিষয়ে কথা হয় স্থানীয় রাজীব নামে এক স্কুল শিক্ষকের সাথে। তিনি জানান, গত ৬ দিন ধরে বাঘমার সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের অস্থায়ী আশ্রয়কেন্দ্রে আছেন এ দু’জনসহ অন্যরা। রান্নাবান্না করে খাবার খাওয়ার মত পরিস্থিতি নেই তাদের। এলাকাবাসীর সহায়তায় শুকনো খাবার ও দুই থেকে তিন বেলা খিচুড়ি রান্না করে খাবার দেয়া হয়েছিল। ত্রাণ সহযোগিতা ওইভাবে দেয়া সম্ভব হয়নি।
সহযোগিতার বিষয়ে স্থানীয়রা জানান, সরকারের পাশাপাশি বন্যাদুর্গত এলাকায় বানভাসি মানুষের পাশে দাঁড়িয়েছে নানা শ্রেণি-পেশার মানুষ ও বিভিন্ন সংগঠন। তবে চিহ্নিত দুর্গত এলাকায় সেসব ত্রাণ তেমন যাচ্ছে না। পছন্দসইভাবে বিতরণ হচ্ছে বেশি। ফলে দুর্গম গ্রামে ত্রাণের জন্য হাহাকার করছে মানুষ। খাদ্য, সুপেয় পানি আর চিকিৎসা সামগ্রী দ্রুত পৌঁছানো না গেলে এসব এলাকার মানুষ আরও বিপর্যয়ে পড়ার শঙ্কা রয়েছে।
উপজেলা নির্বাহী অফিসার (ইউএনও) মোহাম্মদ এরশাদুল আহম্মেদ ও প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা স্বাক্ষরিত সর্বশেষ তথ্য অনুযায়ী এসব ক্ষতি মোকাবেলায় উপজেলা প্রশাসন পাশাপাশি ত্রাণ ও দূর্যোগ কার্যালয় উপজেলার ১২টি ইউনিয়নে বন্যা দুর্গতদের মাঝে ২৫ মেট্রিক টন চাল, নগদ তিন লাখ টাকা ও ২হাজার প্যাকেট শুকনো খাবার বিতরণ করেছেন বলে উপজেলা ওয়েব পোর্টালে তথ্য চলমান রাখেন।
বিডি প্রতিদিন/আশিক