চাঁদপুরে পদ্মা-মেঘনা নদীতে ইলিশ সম্পদ বৃদ্ধির লক্ষে ১৩ অক্টোবর থেকে ২২ দিন প্রজনন মৌসুমে জেলেদের সকল প্রকার মাছ ধরা নিষিদ্ধ করেছে সরকার। জেলেরা নদীতে নামবে না প্রতিশ্রুতি দিলেও পার্শ্ববর্তী জেলার জেলেরা যাতে এখানে এসে মাছ ধরতে না পারে প্রশাসনের কাছে সেই দাবি জেলেদের।
মৎস্য বিভাগ বলছে, জেলে পরিবার প্রতি এবার ২৫ কেজি করে চাল বরাদ্দ দেয়া হয়েছে। মা ইলিশ নিরাপদে ডিম ছাড়ার সুযোগ পেলে প্রায় ৪০ হাজার কোটি জাটকা জনতায় যুক্ত হওয়ার সম্ভাবনার কথা জানিয়েছেন মৎস্য বিজ্ঞানী। চাঁদপুর মৎস্য বিভাগের তথ্য মতে, ৪৪ হাজার ৩৫ জন নিবন্ধিত জেলে রয়েছে। তবে আইন লঙ্ঘনকারীদের বিরুদ্ধে মৎস্য আইনে ১থেকে সর্বোচ্চ ২ বছর সশ্রম কারাদন্ড কিংবা ৫ হাজার টাকা জরিমানা অথবা উভয়দন্ডে দন্ডিত হওয়ার বিধান রয়েছে।
আশ্বিন মাসে অমাবস্যা ও ভরা পূর্ণিমায় মা ইলিশ প্রচুর ডিম ছাড়ে। ইলিশের ডিম পরিপক্কতা ও প্রাপ্যতার ভিত্তিতে এবং পূর্বের গবেষণার অভিজ্ঞতা কাজে লাগিয়ে মা ইলিশ রক্ষা কার্যক্রম হাতে নেওয়া হয়েছে। এবছর ১৩ অক্টোবর থেকে ০৩ নভেম্বর পর্যন্ত ২২ দিন নদীতে সকল প্রকার মাছ শিকার বন্ধ থাকবে। নির্দিষ্ট এই সময়ে মা ইলিশ ডিম ছাড়ার জন্য সাগর থেকে উপকূলীয় অঞ্চল চাঁদপুরের পদ্মা-মেঘনা নদীতে চলে আসে। মা ইলিশকে অবাধে ডিম ছাড়ার সুযোগ দিতেই এই নিষেধাজ্ঞা জারি করা হয়।
জেলে খলিল শেখ ও সফিক আখন্দ বলেন, ইলিশসহ সব ধরনের মাছ শিকারে নিষেধাজ্ঞা থাকায় ইতোমধ্যে নৌকা সহ মাছ ধরার সরঞ্জামাদি জেলেরা তীরে উঠিয়েছে। এসময়ে তারা জাল আর নৌকা মেরামতে সময় কাটাবে। মতলব উত্তরের ষাটনল থেকে দক্ষিণে লক্ষীপুর জেলার চর আলেকজান্ডার পর্যন্ত চাঁদপুরের ৬০ কিলোমিটার এলাকা এই অভিযানের আওতায় রয়েছে। নির্দিষ্ট এই সময়ে সরকার মাছ ধরা, পরিবহন, বিক্রি ও মজুদ সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ করেছে। প্রশাসনিক কর্মকর্তা সহ জেলেদের নিয়ে মৎস্য বিভাগ একাধিক উদ্বুদ্ধকরন সভা সেমিনার করেছে। অভিযান চলাকালীন সময়ে জেলেরা নদীতে নামবে না, এমন আশ্বাস দিলেও পার্শ্ববর্তী জেলা থেকে কোন জেলে এখানে এসে যাতে মাছ ধরতে না পারে সরকারের কাছে দাবী জেলেদের। এছাড়াও পরিবার পরিজন নিয়ে তাদের অভাব অনটনের কথাও জানান অসহায় জেলেরা।
চাঁদপুর জেলা মৎস্য কর্মকর্তা গোলাম মেহেদী হাসান বলেন, ইলিশের প্রধান প্রজনন মৌসুমে মা ইলিশ সংরক্ষন অভিযান আগামী ১৩ অক্টোবর থেকে ০৩ নভেম্বর পর্যন্ত ২২ দিন। এসময়ে ইলিশ আহরন, পরিবহন, ক্রয়-বিক্রয় সবকিছু বন্ধ থাকবে। তারই আলোকে জেলা টাক্সফোর্স কমিটির মিটিং, পত্র-পত্রিকা ও মাইকিং, লিফলেট এর মাধ্যমে প্রচারনা চালিয়ে যাচ্ছি এবং নদী অববাহিকার ইউনিয়নগুলোতে গিয়ে উদ্বুদ্ধকরন সভা করেছি মা ইলিশ না ধরার জন্য। আশা করছি এবারও জেলেরা আইনের প্রতি সন্মান দেখিয়ে নদী জাল ও জেলে শূন্য থাকবে। এই ২২দিনের অভয়াশ্রম চলাকালে জেলে পরিবার প্রতি ২৫ কেজি করে ভিজিএফ এর চালের ডিও লেটার দেয়া হয়ে গেছে এবং এগুলো ১২ তারিখের মধ্যে বিতরন শেষ হবে।
চাঁদপুর মৎস্য গবেষনা ইনষ্টিটিউটের বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা আবু কাউছার দিদার বলেন, ইলিশ আমাদের প্রাকৃতিক সম্পদ। এর বিচরন, আহরন, প্রাপ্যতা পারিপার্শ্বিক নিয়ামকের উপর নির্ভর করে। জাটকা সংরক্ষন, মা ইলিশ সংরক্ষন ও সেঞ্চুরী ডেভেলপমেন্ট এই ৩টি ইস্যু নিয়ে গবেষনালব্ধ ফলাফল থেকে ম্যানেজমেন্ট হয়ে আসতেছে। তারই ধারাবাহিকতায় প্রতি বছর লুনার পিউরিডিসিটি প্লাস (জিএফআই) এর মাধ্যমে মা ইলিশের সর্বোচ্চ প্রজনন মৌসুমটা নির্ধারন করে থাকি। তারই ধারাবাহিকতায় এবার ১৩ অক্টোবর থেকে ৩ নভেম্বর মা ইলিশ সংরক্ষনকাল নির্ধারন করা হয়েছে। এসময় দেশের নদ-নদীগুলোতে অনুকূল পরিবেশ থাকলে বিগত বছরের (৫২.৪ পার্সেন্ট স্পেন রেট ছিল) ন্যায় যার ধারাবাহিকতায় প্রায় ৪০ হাজার কোটি জাটকা জনতায় যুক্ত হবে। তারই ধারাবাহিকতায় গত মার্চ-এপ্রিলে নদ-নদীগুলোতে জাটকার প্রাচুর্যতা ছিল ( সিপিইউ পাসেন্ট ১০০ মিটার নেটে) প্রায় ২৩ কেজি থেকে ২৪ কেজির মতো। সেই ধারাবাহিকতায় যদি পরিবেশটা অনুকূলে থাকে এবং কোন অসাধু জেলে মা ইলিশ নিধনে না নামে, তাহলে প্রজননের ধারাবাহিকতা এবং জাটকার সংখ্যাও উত্তরোত্তর বৃদ্ধির দিকে থাকবে বলে জানিয়েছে এই মৎস্য বিজ্ঞানী।
বিডি প্রতিদিন/এএম