অন্তর্বর্তীকালীন সরকার কোন নতজানু পররাষ্ট্রনীতিতে বিশ্বাস করে না, বাংলাদেশের যে ন্যয্য প্রাপ্তি সেই ন্যয্যতা ও সমতার ভিত্তিতে অন্যান্য দেশের সাথে আমরা সম্পর্ক গড়ব বলে জানিয়েছেন তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা নাহিদ ইসলাম। শনিবার সকালে রংপুরের বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রধান ফটকের উদ্বোধন ও র্যালি শেষে সাংবাদিকদের তিনি এসব কথা বলেন তিনি।
নাহিদ বলেন, মাত্র দুই মাস হয়েছে আমরা এখানে এসেছি তাই আমাদেরকে সেই সময় দিতে হবে কাজ করার। দেশের আইন-শৃঙ্খলার পরিবর্তনসহ দেশের বর্তমান কিছু ইস্যু আছে। আহতদের স্বাস্থ্যসেবার বিষয়টি আমাদেরকে দেখতে হচ্ছে। আমরা অবশ্যই ধীরে ধীরে সকল বিষয়ের উপর মনোনিবেশ করব।
তিনি বলেন, ভারত চায় যে বাংলাদেশে একটা উগ্রবাদ চলছে এটা দেখাতে। এতে তার দেশে যে উগ্রবাদ সেটি পুষ্ট হয়, মূলত সেই অপপ্রচার সব সময়ই ছিল। কিন্তু আমাদের দেশেও যেগুলো অনাকাঙ্খিত ঘটনা ঘটছে আমাদের নিজেদেরও উচিত নিজেদের দিকে তাকানো এবং সেই বিষয়গুলো যেন কখনো না ঘটে এবং ঘটলে আমরা দ্রুত সেটার আইনি পদক্ষেপ নেয়া- সে বিষয়টাও আমরা নজরে রাখছি।
নাহিদ জানান, ফেসবুকে প্রচুর গুজব রটানো হচ্ছে, ফেক আইডি খুলে আন্দোলনের মিথ্যা তথ্য ছড়ানো হচ্ছে এবং পতিত যে ফ্যাসিবাদী শক্তি, রাজপথে থেকে পরাজিত হয়ে তারা এখন অনলাইনে তাদের শক্তি প্রদর্শন করছে।
তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা নাহিদ ইসলাম আরও বলেন, আমি মনে করি যে, আমাদেরকে অবশ্যই সত্যটা তুলে ধরতে হবে, যেটা সত্য, যেটা আসলেই দেশে ঘটছে এটা যদি আমরা তুলে ধরে দেশের মানুষের কাছে প্রচার করতে পারি, পুরো পৃথিবীর কাছে প্রচার করতে পারি এতোটুকুই আমাদের জন্য যথেষ্ট হবে।
শহীদ আবু সাঈদ প্রসঙ্গে নাহিদ বলেন, আমার জন্য সৌভাগ্যের যে, আমাদের সহযোদ্ধা শহীদ আবু সাঈদ যে বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র ছিলেন, যে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাঙ্গনে তিনি লড়াই করতে গিয়ে শহীদ হয়েছেন, রক্ত দিয়েছেন এবং যে রক্তের বিনিময়ে আজকে আমরা স্বাধীনতা ভোগ করছি, এই সময়টাতে ছাত্রদের প্রতিনিধি হিসেবে আমরা সরকারের কাজ করছি এবং সেই দায়িত্বের জায়গা থেকেই আমরা বিশ্ববিদ্যালয়ে আমন্ত্রিত হয়েছি। সেই বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের আজকে ১৬ তম প্রতিষ্ঠা বার্ষিকী। সেই ১৬ তম প্রতিষ্ঠা বার্ষিকীতে আমি আমন্ত্রিত হয়ে নিজেকে সৌভাগ্যবান মনে করছি এবং আজকের এই দিনে গভীরভাবে স্মরণ করছি শহীদ আবু সাঈদকে। আরো স্মরণ করছি এই জুলাই বিপ্লবের সকল শহীদদের এবং আহতদেরকে ।
নাহিদ বলেন, আমরা আজকে এই প্রতিষ্ঠা বার্ষিকীতে শপথ নিতে চাই, এই আবু সাঈদেরা যে কারণে শহীদ হয়েছেন, গণঅভ্যুত্থানের যে আকাঙ্খা তারা ধারণ করেছিল, সেই একই আকাঙ্খা ধারণ করে আমরা বাংলাদেশকে সামনের দিকে এগিয়ে নিয়ে যাব। যে বিশ্ববিদ্যালয়ের তিনি শিক্ষার্থী ছিলেন সেই বিশ্ববিদ্যালয় ও বাংলাদেশের একটি গুরুত্বপূর্ণ জায়গায় থাকবে এবং আবু সাঈদ কে আমরা এই বিশ্ববিদ্যালয় সহ পুরো ছাত্র সমাজ অগ্রসৈনিক হিসেবে স্মরণ করে যাব।
রংপুর প্রসঙ্গে তিনি বলেন, রংপুর বাংলাদেশের দীর্ঘ সময় ধরে অবহেলিত হয়ে আসছে। আপনারা দেখেছেন বাংলাদেশের বাজেট গুলোতে যেখানে রংপুরে অল্প পরিমাণ বাজেট রাখা হয় এবং তার দ্বিগুণ, তিনগুণ বাজেট রাখা হয় গোপালগঞ্জে। ফলে যে বৈষম্য আছে সেই বৈষম্যের বিরুদ্ধেই কিন্তু আমাদের এই লড়াইটি ছিল। আমাদের প্রধান উপদেষ্টা যে প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন আমরা অবশ্যই সেই অনুযায়ী কাজ করছি এবং রংপুরের যে বৈষম্য, অবহেলা এটি আমরা দূর করব এবং রংপুর জেলা বাংলাদেশে একটি উন্নত জেলা এবং একটি উন্নত বিভাগ হিসেবে দাঁড়াবে।
এর আগে তিনি বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রধান ফটকের উদ্বোধন করেন এবং বিশ্ববিদ্যালয়ের ১৬তম দিবসে এর উদ্বোধন করেন । পরে বিশ্ববিদ্যালয় চত্বরে আলোচনা সভায় প্রধান অতিথি হিসেবে যোগ দেন।
এ সময় বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. শওকত আলী, বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনের সদস্য অধ্যাপক তানজিম উদ্দিন খানসহ বিশ্ববিদ্যালয় ও স্থানীয় প্রশাসনের নেতৃবৃন্দ উপস্থিত ছিলেন। বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রধান ফটক নির্মাণে ২ কোটি ৯ লাখ টাকা ব্যয় ধরা হয়েছে।
এর আগে সকাল ১০টার দিকে তিনি সড়ক পথে ক্যাম্পাসে আসেন। জাতীয় সংগীত গাওয়া শেষে জাতীয় পতাকা ও বিশ্ববিদ্যালয়ের পতাকা উত্তোলন করা হয়। পরে তিনি বিশ্ববিদ্যালয় দিবস উপলক্ষে বর্ণঢ্য র্যালিতে অংশ নেন। সারাদিন বিভিন্ন কর্মসূচিতে ব্যস্ত থাকেন নাহিদ ইসলাম। বিকালে সার্কিট হাউজে সাংবাদিকদের সঙ্গে মত বিনিময় করবেন তিনি।
২০০৮ সালের ২০ অক্টোবর সাবেক তত্বাবধায়ক সরকারের সময় রংপুর বিশ্ববিদ্যালয় নামে যাত্রা শুরু করলেও ২০০৯ সালে আওয়ামী লীগ সরকার ক্ষমতায় এসে নাম বদল করে বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয় করা হয়।
বিডি প্রতিদিন/আশিক