গ্রাম বাংলার এক সময়ের অতি পরিচিত গাছ ধুতরা। ঝোপ-ঝাড়ে এই গাছটির দেখা মিলত। এর ফুল দেখতে অনেক সুন্দর। নগরায়ন ও ঝোপ-ঝাড় কমে যাওয়ায় ধুতরা গাছ এখন বিলুপ্তির পথে।
গাছটি সম্পর্কে জানা গেছে, ভেষজ এই উদ্ভিদটির ফুলের সৌন্দর্য অত্যন্ত আকর্ষণীয় ও মনোরম। বর্ষাকালে ধুতরা গাছে ঘণ্টাকৃতির ফুল ফোটা শুরু হলেও হেমন্ত কালজুড়ে গাছে ফুল দেখা যায়। গাছের শাখা-প্রশাখার অগ্রভাগে ফুল ধরে, সাদা জাতের ধুতরা গাছে সাদা ফুল এবং কালো জাতের ধুতরা গাছে সাদা-বেগুনি মিশ্র রঙের ঊর্ধ্বমুখী ফুল ফোটে। ফুলে মৃদু গন্ধ আছে। পড়ন্ত বিকাল থেকে সন্ধ্যায় গাছে ফুল ফোটে। দিনে রোদের আলোয় ফুল সংকুচিত হয়ে যায়। সন্ধ্যায় আবার পাপড়ি মেলে।
ধুতরার ভিতর অ্যাট্রোপিনসহ যে ৩টি বিষাক্ত উপক্ষার রয়েছে তা আর্সেনিকের মতো স্বাদগন্ধহীন। এদের প্রভাবে মানুষ বাস্তবতা ও কল্পনার মধ্যে প্রভেদ করার ক্ষমতা হারিয়ে ফেলে। এতে ভয়ানক চিত্তবিভ্রম, দৃষ্টিবিভ্রম ও দিকভ্রম দেখা দেয় এবং কখনো এমনভাবে স্মৃতিবিলোপ ঘটে যে আক্রান্ত ব্যক্তি অতীতের কথা ও ঘটনা স্মরণ করতে পারে না।
ধুতরা গাছ বহুবর্ষজীবী হলেও সাধারণত ৪-৫ বছরের বেশি জীবিত থাকে না। এরা রাস্তার ধারে, অনুর্বর মাটিতে, গার্বেজ ডাম্পে, গোয়াল ঘরের আশেপাশে ও পতিত জমিতে বেশ জন্মে। বাংলাদেশে সাধারণত দুরকম ধুতরা দেখা যায়, সাদা ও কালো ধুতরা। তবে এর সংখ্যা কমে গেছে।
বাংলাদেশে বিরল আরেক প্রকার ধুতরার কথা জানা যায় যেগুলো ভারতের বিহার ও উড়িষ্যা অঞ্চলে দেখা যায়। সাধারণ ধুতরা, গুল্মজাতীয় উদ্ভিদ যার উচ্চতা ৩-৪ ফুটের মধ্যেই সীমাবদ্ধ থাকে কিন্তু উল্লিখিত উদ্ভিদের উচ্চতা ১৫ থেকে ৩০ ফুট পর্যন্ত হতে পারে।
আয়ুর্বেদ মতে ধুতরা গাছের পাতা, ফলবীজ ও শিকড় ব্যবহার থেকে যে সব চিকিৎসার কথা জানা যায় তার মধ্যে রয়েছে ফোলা ও ব্যথা, টাক পড়া, চর্মরোগ, হাঁপানি, কুকুরের কামড়, পা-ফাটা, ছুলি, কানের যন্ত্রণা, ক্রিমি, স্তনের প্রদাহ, ফোড়া ও বাতের ব্যথা।
এ ছাড়া দক্ষিণ ভারতীয় সিদ্ধা চিকিৎসায় যে সব রোগের উল্লেখ আছে তার মধ্যে রয়েছে পার্কিনসনস্ ডিজিজ, নিউর্যালজিয়া, প্রদাহজনিত জ্বর, দাঁতের ব্যথা, চুল পড়া, খুশকি, অর্শ ইত্যাদি। ওষুধি গুণে সকল ধুতরাই প্রায় এক রকম, সবকটির ভেতরেই ওষুধের জন্য প্রয়োজনীয় উপক্ষার বা অ্যালক্যালয়েড (অ্যাট্রোপিন, স্কোপোল্যামাইন ও হাইওস্কায়ামাইন) থাকে যার সবকটিই তীব্র বিষ। কিন্তু এই ভেষজ বিষেই লুকিয়ে রয়েছে কঠিন অসুখ নিরাময়ের জন্য দরকারি ওষুধ।
বাংলা একাডেমির সহপরিচালক কৃষিবিদ আবিদ করিম মুন্না জানান, বহুগুণী ধুতরার ফুল, ফল, পাতা আর মূল থেকে কবিরাজেরা নানা পথ্য তৈরি করে থাকেন। ঝোপঝাড় কেটে পরিষ্কার করার কারণে ধুতরা গাছ দিনে দিনে হারিয়ে যাচ্ছে।
বিডি প্রতিদিন/জামশেদ