বগুড়া পৌরসভায় রাজনৈতিক প্রতিহিংসার কারণে বেড়েছে জনদুর্ভোগ। টানা ১৫ বছর আওয়ামী লীগ সরকার ক্ষামতায় থাকলেও সংস্কার ও পুরনায় নির্মিত হয়নি পৌরসভার সড়কগুলোর।
বৃহৎ এই পৌরসভায় ৪৫০ কিলোমিটার পাকা সড়কের অধিকাংশই এখন ক্ষতবিক্ষত। এসব সড়ক সংস্কার ও ও পুনরায় নির্মাণ না করায় এখনো বেহাল অবস্থায় হয়ে আছে সড়কগুলি। বর্ষকালে কাঁদাপানি, আর শুষ্ক মৌসুমে ঝাঁকুনি। গর্ত আর খানাখন্দকে পড়ে বেশিরভাগ দিন কেউ না কেউ আহত হচ্ছেন। বেহাল সড়কের কারণে যানবাহন বিকল হয়ে যাচ্ছে। এসব সড়ক দিয়ে চলাচল করতে গিয়ে দুর্ভোগে পড়তে হচ্ছে পৌরসভাবাসীকে। একই সাথে ভয়াবহ যানজট যেন পিছু ছাড়ছে না। আবার সড়কের উপর যত্রতত্র ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকে ময়লা আবর্জনা। থাকে ইচ্ছেমত পার্কিং। ফলে চরম দুর্ভোগ আর ভোগান্তিতে শহরবাসি।
বগুড়া পৌরসভা সুত্রে জানা যায়, বগুড়া পৌরসভাটি ১৮৭৬ সালে প্রতিষ্ঠত হয়। কালক্রমে আয়তন বাড়তে বাড়তে এখন ৬৯ দশমিক ৫৬ বর্গ কিলোমিটার। ২১টি ওয়ার্ড নিয়ে গঠিত বগুড়া পৌরসভা প্রায় ৭০ বর্গ কিলোমিটার। জনসংখ্যা রয়েছে প্রায় ১০ লাখ। দেশের কুমিল্লা, সিলেট, ময়মনসিংহ ও বরিশাল সিটি কর্পোরেশনের চেয়ে আয়তনে এবং জনসংখ্যায় বড় বগুড়া পৌরসভা।
‘ক’ শ্রেণীর এই পৌরসভাটি আয়তন বড় হলেও বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচির আওতায় অন্যান্য পৌরসভার মতই বরাদ্দ পেয়ে থাকে। কিন্তু আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে কুমিল্লা, সিলেট, ময়মনসিংহ ও বরিশাল সিটি কর্পোরেশন করা হলেও তৎকালীন সরকারের পতিত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার হস্তক্ষেপে বগুড়াকে সিটি করর্পোরেশন করা হয়নি।
অথচ বগুড়াকে উত্তরাঞ্চলের রাজধানী বলা হয়। শিক্ষা, শিল্প ও ব্যবসা-বাণিজ্যে বগুড়া অন্যান্য জেলা শহরের চাইতে অনেক বৃহৎ ও ঐতিহ্যবাহী। সকল সুবিধা থাকার পরেও বগুড়া রাজনৈতিক প্রতিহিংসার বলি হয়েছে।
জানা যায়, এই পৌরসভায় ৪৫০ কিলোমিটার পাকা সড়কের অধিকাংশই এখন ক্ষতবিক্ষত। পৌরসভার আওতাধীন কার্পেটিং রাস্তা আছে ৩১০ কিলোমিটার। এছাড়া কাঁচা সড়ক, সিসি, আরসিসি, সোলিংসহ অন্যান্য রাস্তা রয়েছে আরো প্রায় ১০৩০ কিলোমিটার। সব মিলিয়ে প্রায় ১৩৪০ কিলোমিটারের রাস্তা রয়েছে পৌরসভাটিতে। যার বড় অংশ সড়ক এখন ভাঙ্গা। বগুড়া পৌর এলাকার গোহাইল সড়ক, কারমাইকেল সড়ক, মালতিনগর, বউবাজার, আজিজুল হক কলেজ থেকে নুরানী মোড় সড়ক, হাড্ডিপট্টি থেকে বাদুরতলা সড়ক, জহরুলনগর, জাহেদ মেটাল মোড়, নিশিন্দারা সড়ক, কামারগাড়ি-হাড্ডিপট্টিসহ শহরের ছোট-বড় সড়কগুলো এখন খানাখন্দকে ভরা। সড়কের পাশের ড্রেনও নষ্ট হয়ে পড়েছে। এসব পথ দিয়ে চলাচল করতে গিয়ে প্রায়ই দুর্ঘটনা ঘটছে। পথচারীরা যানবাহনে চলাচল করতে গিয়ে দুর্ভোগের শিকার হতে হয়।
এদিকে শহরের কাঁঠালতলায় সড়কের ওপর বাজার বসায় এবং ময়লা-আবর্জনার স্তূপ করে রাখায় পথচারীদের বছরজুড়েই যাতায়াতে ভোগান্তি পোহাতে হচ্ছে। পুরো সড়ক দখল করে আছে ব্যবসায়িরা।
বগুড়া শহরের হাড্ডিপট্টি এলাকার ভাঙাড়ি ব্যবসায়ী মিঠু মিয়া জানান, হাড্ডিপট্টি থেকে বাদুরতলা পর্যন্ত প্রায় ১ কিলোমিটার সড়ক এখনও পাকা করা হয়নি। পুরো সড়কটি কাঁচা এবং ভাঙ্গা। দীর্ঘ ২০ বছর যাবৎ বেহাল অবস্থায় রয়েছে এই সড়কটি। অথচ এই সড়ক দিয়ে দিনে শত শত বাস-ট্রাকসহ অন্যান্য যানবাহন চলাচল করে। পথচারীরা পাঁয়ে হেটে চলাচল করতে পারে না। বর্ষার সময় সড়কে কাঁদা জমে চলাচলের অযোগ্য হয়ে পড়ে। সড়কটি পৌরসভা এলাকায় হলেও আজ পর্যন্ত কোন কাজ হয়নি। দিনে চলাচল করলেও রাতে আলো কম থাকায় গর্তে পড়ে অনেকেই আহত হয়। ফলে এই এলাকার ব্যবসায়ীসহ সর্বস্তরের মানুষের ভোগান্তির শেষ নেই। দীর্ঘদিন ধরে সড়কটি এবড়ো থেবড়ো থাকলেও কাজের কাজ কিছুই হয়নি। সড়কটি পাকাকরণ হলে এলাকাটি আরো উন্নয়ন হবে।
বগুড়া শহরের বাসিন্দা আমিনুল হক আরজু জানান, পৌর এলাকার বেশিভাগ সড়কের বেহাল অবস্থা। খানাখন্দকে ভরে গেছে। সামান্য বৃষ্টি হলে সড়কে পানি জমে যায়। পৌরসভার সড়কসহ ড্রেনেজ ব্যবস্থার উন্নয়ন করা জরুরী। পৌরসভা থেকে সে বিষয়ে কোন পদক্ষেপ নেয়া হচ্ছে না। এছাড়া ড্রেনের পানি প্রবাহিত হওয়ার কারণে সড়কে খানাখন্দকে ভরে যাচ্ছে। এর সাথে সড়কের উভয়পাশ দখল করে নেওয়ায় পথচারিদের পড়তে হয় নানা বিড়ম্বনায়।
বগুড়া পৌরসভার নির্বাহী প্রকৌশলীর কার্যালয় সূত্র থেকে জানা যায়, শহরের প্রায় ২৬৬ কিলোমিটার পাকা সড়ক রয়েছে। সড়কগুলো মেরামতে পর্যাপ্ত বরাদ্দ পাওয়া যায় না। বগুড়া পৌরসভার বেশিরভাগ সড়ক মেরামত করা প্রয়োজন। শহরের বেশ কিছু সড়কের অবস্থা খুব খারাপ হলেও স্বল্প বরাদ্দ দিয়ে বিপুল পরিমাণ সড়ক সংস্কার করা যাচ্ছেনা। কোন কোন সড়ক নির্মাণের পর সংস্কার হয়নি। অনেকস্থানে বা সড়কের পাশে ড্রেন নির্মাণ করা হয়নি। তারপরও যতটা সম্ভব হয় পৌরসভা থেকে সড়কগুলো সংস্কার করা হয়ে থাকে।
বগুড়া সরকারি আজিজুল হক কলেজের ইংরেজী বিভাগের প্রভাষক মাহবুবর রহমান মন্টু বাংলাদেশ প্রতিদিনকে জানান, আমাদের পাশের জেলাগুলোও অনেক উন্নত হয়েছে। নতুন রাস্তাঘাট, অবকাঠামো হয়েছে। আমরা কেন পিছিয়ে থাকবো। আমরা চাই বগুড়া আরও এগিয়ে যাক। কারন ভৌগলিক কারনে বগুড়া উত্তরাঞ্চলের যে কোন জেলার চেয়ে সব কিছুতে অগ্রাধিকার পাওয়ার কথা থাকলেও তা হয়নি। রাজনৈতিক প্রতিহিংসার কারণে বগুড়া উন্নয়ন থেকে পিছিয়ে রয়েছে। বিশেষ করে বগুড়া শহরের যানজট নিরসন এবং পৌর এলাকার সড়কগুলো সংস্কার জরুরি।
বগুড়া জেলা প্রশাসক হোসনা আফরোজা জানান, উন্নয়নে পিছিয়ে পড়া বগুড়াকে এগিয়ে নেয়ার জন্য সকলের সহযোগিতা প্রয়োজন। যেগুলো উন্নয়ন হওয়ার কথা ছিল সেগুলো কেন হয়নি বিয়ষটি খতিয়ে দেখা হবে।
বিডি প্রতিদিন/আশিক