শুক্রবার, ৩১ অক্টোবর, ২০১৪ ০০:০০ টা
গল্প

কচুপাতার পানি

জসীম আল ফাহিম

কচুপাতার পানি

কচুপাতার ওপর একটুখানি পানি টলমল করছিল। সকালবেলা এক পশলা বৃষ্টি হয়ে গেছে। হতে পারে এটা বৃষ্টির পানি। দেখতে যেমন স্বচ্ছ টলমলে, বৃষ্টির পানি ছাড়া আর কী-ই বা হতে পারে? পানিটুকুর ওপর রোদের আলো পড়ায় মুক্তোদানার মতো ঝলমল করছিল।

নিজের এমন ঝলমলে টলমলে রূপ দেখে পানিটুকু রীতিমতো মুগ্ধ গর্বিত। মনে মনে ভাবে সে, খুব চমৎকার তো! কী অপূর্বই না আমি! কী আমার রূপ! কী আমার সৌন্দর্য! এমন রূপ সৌন্দর্য বোধহয় জগতে আর কারও নেই। ভেবে পানিটুকু বাতাসের মৃদু দোলায় কচুপাতার ওপর কয়েকবার গড়াগড়ি খেল। গড়াগড়ি খেয়ে হেসে কুটিকুটি হলো।

সে পথ ধরেই যাচ্ছিল এক কালো কাক। কচুপাতার পানিটুকুর দিকে কাক বেচারার চোখ পড়ল। ঝলমলে টলমলে পানিটুকু দেখে তার মন আনন্দে ভরে গেল। মুগ্ধ হয়ে সে বিড়বিড় করে বললো, বাহ্! চমৎকার পানি তো! খুবই সুন্দর কচুপাতার পানি! তারপর সে পানিটুকুকে খুশি করার জন্য খাক্ খাক্ ডেকে গান গেয়ে ওঠল। কিন্তু ঝলমলে পানিটুকু কাকের দিকে ফিরেও তাকালো না। মন খুলে বললো না কোনো কথা।

বলবেই বা কী করে। কাক হলো কালো কুৎসিত এক পাখি। কচুপাতার ঝলমলে পানিটুকুর কী কুৎসিত পাখির সাথে কথা বলা মানায়? না বন্ধুত্ব করা মানায়? কোনোটাই মানায় না। শেষে কাক বেচারা কিছুক্ষণ খাক্ খাক্ ডেকে নিরাশ হয়ে উড়ে গেল।

তার কিছু সময় পর সে পথ ধরে যাচ্ছিল একটি টুনটুনি পাখি। কচুপাতার ওপর ঝলমলে একটুখানি পানি দেখে তার দুই চোখও ছানাবড়া! ফ্যাল ফ্যাল করে তাকালো সে পানিটুকুর দিকে। পানিটুকুর সৌন্দর্য দেখে তার মনটাও খুশিতে দুলে উঠল। পরে সে মনের খুশিটুকু 'টুনটুন টুইস টুইস' করে প্রকাশ করলো। কিন্তু কচুপাতার পানি টুনটুনি পাখির গানেও কান দিলো না। নিজেকে নিয়েই সে ব্যস্ত হয়ে রইলো।

তারপর কচুপাতার পানিটুকুর সাথে এক সোনাব্যাঙের দেখা হলো। সোনাব্যাঙকে দেখে তো পানিটুকু খুব খুশি। ভাবলো, এতো দেখছি ভারি সুন্দর! একেবারে সোনাবরণ! এর সাথেই বন্ধুত্ব করা যায়। পরে পানিটুকু সোনাব্যাঙকে ডেকে বললো, ভাই সোনাব্যাঙ!

তুমি খুব সুন্দর! তোমার মতো এমন সুন্দর আমি কাউকে দেখিনি আমি তোমার বন্ধু হতে চাই। আমাকে তোমার বন্ধু করে নাও।

কচুপাতার পানির কথা শুনে সোনাব্যাঙ মনে মনে ভাবলো, এক ফোঁটা পানির শখ কত দেখো। সোনাব্যাঙের বন্ধু হতে চায়। বোকা জলবিন্দু কোথাকার। বন্ধুত্বের তুই কী বুঝিস? বন্ধু হতে কেন চাস? কিন্তু সোনাব্যাঙটি মনের কথা

মুখে প্রকাশ করলো না। মুখে শুধু বললো, ঠিক আছে। তোমাকে বন্ধু করে নিলাম। পরে মনে মনে সোনাব্যাঙ আরও যেন কী বললো ঠিক বোঝা গেল না।

সেই থেকে প্রতিমুহূর্তেই সোনাব্যাঙের সাথে কচুপাতার পানিটুকুর দেখা হতো। কথা হতো। হতো খোশগল্প! সোনাব্যাঙটিকে দেখলেই কচুপাতার পানিটুকু খুশিতে পাতার ওপর গড়াগড়ি খেতো। ঝলমল করে জ্বলতো আর টলমল করে হাসতো। এভাবেই সোনাব্যাঙ আর কচুপাতার পানিটুকুুর সময় কাটছিল।

সে পথ ধরেই উড়ে যাচ্ছিল সাতরঙে রঙিন এক অপরূপ প্রজাপতি। প্রজাপতি বাতাসে দুলে দুলে নেচে নেচে যাচ্ছিল। প্রজাপতির এমন রূপশোভা দেখে কচুপাতার পানি একেবারে আশ্চর্য হয়ে গেল। বিড়বিড় করে বললো, বাহ্ অপূর্ব তো! এমন সুন্দর প্রাণীও যে পৃথিবীতে আছে জানতাম না তো! একেই তো আমার চাই। আমার যে রূপশোভা তা আর কারো সাথে মানায় না। একমাত্র এই প্রজাপতির সাথেই মানায়।

কচুপাতার পানিটুকু প্রজাপতির সৌন্দর্যে মুগ্ধ হয়ে পরমুহূর্তে ভুলে গেল তার পুরনো বন্ধু সোনাব্যাঙের কথা। সোনাব্যাঙ কিন্তু কচুপাতার পানিটুকুকে ভোলেনি। মনে রেখেছে। কচুপাতার পানিটুকু অপরূপ প্রজাপতিকে উদ্দেশ করে বললো, প্রজাপতি তুমি অপূর্ব! তোমার মতো সুন্দর প্রাণী সৃষ্টিজগতে আমি আর দেখিনি। আমি তোমার বন্ধু হতে চাই। আমাকে বন্ধু করে নাও।

কচুপাতার পানিটুকুর আহ্বানে সাড়া দিতে গিয়ে প্রজাপতিটি একেবারে তার কাছাকাছি উড়ে এলো। তারপর তার অপূর্ব পাখা দুটো ঝাপটাতে ঝাপটাতে এসে কচুপাতাটির ওপর প্রাণ অফুরান ছড়িয়ে বসলো। কিন্তু নাজুক কচুপাতাটি প্রজাপতি এবং পানিটুকুর ভার সইতে পারলো না। ওদের ভার সইতে না পেরে একপাশে কাত হয়ে গেল বেচারা। কচুপাতাটিকে এভাবে নুয়ে পড়তে দেখে সুন্দর প্রজাপতিটি হঠাৎ উড়াল দিলো। ঠিক তখনই কচুপাতায় লাগলো এসে দোলা। আর পানিটুকু তাল সামলাতে পারলো না বলে তার অধপতন হলো।

সোনাব্যাঙটি কিন্তু হাঁ-করে কচুগাছটির তলেই দাঁড়িয়ে ছিল। ফলে অধপতিত পানিটুকু এসে পড়লো একেবারে তার মুখে। স্বচ্ছ ঠাণ্ডা পানিটুকু সোনাব্যাঙের মুখে পড়তেই সে আর দেরি করলো না। খাবার মনে করে একেবারে গিলে ফেললো।

 

 

 

সর্বশেষ খবর