শুক্রবার, ২০ নভেম্বর, ২০১৫ ০০:০০ টা

ফুলপরীর গল্প

গল্প - হশাহজাহান আবদালী

ফুলপরীর গল্প

চাঁদের মতো মুখ। হাসিতে যেন মুক্তা ঝরে। দুঃখ পেলে সেই সুন্দর মুখটা হঠাৎ ম্লান হয়ে যায়। আর সে কিন্তু ঠিক মতো স্কুলে যায় এবং বাড়িতেও পড়াশোনা করে। মা-বাবার কথা মতো চলে। প্রতিবেশীর ছোট ছোট ছেলেমেয়ে অর্থাৎ যারা ওর সমবয়সী তাদের সাথেও খুব সখ্য। কারও সাথে রাগারাগি করে না। এজন্য সবাই তাকে খুব ভালোবাসে।

এই সুন্দর পরীর মতো মেয়েটার সাথে বাগানের গাছপালা আর ফুলদের ভারি ভাব। প্রতিদিন বিকেলে সে পাশের বনে চুপি চুপি চলে যায়। ফুল গাছে পানি দেয়। আর যে ফুলগুলো ফোটে থাকে তাদের সাথে কথা বলে। গোলাপ কুঁড়িটাকে বলে, শোনো বন্ধু, তুমি কাল সকালেই কত সুন্দর হয়ে ফুটে উঠবে। তোমার সৌরভ ছড়াবে। প্রজাপতি উড়ে উড়ে তোমাকে শুভেচ্ছা জানাবে। ছোট বেলি ফুলগুলোর কাছে গিয়ে বলে, বেলি ফুল বšু¬রা তোমরা ভারি সুন্দর, পবিত্র। তোমাদের রঙ সাদা। তোমরা সত্যিই অনন্য। আসলে সাদা রঙ হলো পবিত্রতার প্রতীক। আর তোমাদের গায়ে কী মধুর সুবাস। সেই সুবাস বাতাসে ভেসে যায় চারদিকে।

সে প্রতিদিন ফুল আর গাছদের সাথে কথা বলে এবং তাদের যতœ নেয়। সে কখনো পাতা-ছিঁড়ে না, ফুল ছিঁড়ে না। সে যখন ছোট ছিলো তখন তাদের ক্লাসের মিস গাছদের গল্প শোনাতেন। মিস বলতেন, গাছ আমাদের সবচেয়ে উপকারী বন্ধু। এই গাছ আমাদের ফুল ও ফল দেয়। এই গাছ আমাদের ঘরের আসবাবপত্র জোগায়। তাই গাছদের কষ্ট দিতে নেই। কখনোই গাছের পাতা ছিঁড়তে নেই, ফুল ছিঁড়তে হয় না।

মিস আরও বলেছিলেন, আমাদের হাত ধরে যদি কেউ জোরে টান দেয় তখন আমরা ব্যথা পাই। যদি কেউ আমাদের চিমটি কাটে তখন কষ্ট হয়। তেমনি গাছের ডালপালা আর পাতা হলো ওদের অঙ্গপ্রত্যঙ্গ। এসব টানলে, ছিঁড়লে ওরা আমাদের মতো কষ্ট পায়, আহত হয়।

মিসের এই কথাগুলো সুন্দর মেয়েটা মনে রেখেছে। শুধু মনেই রাখেনিঃগাছপালার সঙ্গে, ফুলের সঙ্গে তার সখ্যও গড়ে উঠেছে।

আরে নামই জানা হলো না মেয়েটার। নাম তার পরী। নামের সাথে যে রূপের আর গুণের মিলও থাকে তা পরীকে দেখেই বোঝা যায়। পরীদের ডানা থাকে। ইচ্ছে হলেই তারা উড়তে পারে। তবে নামটা পরী হলেও আসলে সে পরী নয়। সে মানুষ। তাই তার ডানা নেই। এজন্য উড়তেও পারে না। উড়তে না পারুক, ডানা না থাক, তবুও সে অনেকটা পরীরই মতো। এজন্য বাগানের ফুলগুলো, প্রজাপতিগুলো, পাখিগুলো আর গাছপালা তাকে আদর করে ডাকে ফুলপরী।

তোমরা হয়তো বলবে, না এসব পাতানো গল্প। পাখি গাছেরা কি কথা বলতে পারে?

এমন প্রশ্ন করতেই পারো, তবে একথাও ঠিক যে, গাছ, পাখি, ফুল, প্রজাপতিরাও কথা বলতে পারে। আর তাদের কথা সে-ই শুনতে পায় যে তাদের ভালোবাসে।

পরী ওদের খুব ভালোবাসে। এজন্যই সে তাদের ভাষা বোঝে। গাছের পাতা যখন বাতাসে নড়েচড়ে ওঠে, তখন সেই নড়াচড়ার মধ্যে পরী তাদের মনের কথা শুনতে পায়। ফুলগুলো যখন পাপড়ি মেলে দিয়ে হালকা হাওয়ায় থর থর করে কাঁপে পরী তখন তাদের কথা শুনতে পায়।

কী কথা শুনতে পায় পরী? পরী যে তাদের ভাষা বোঝে এটা সত্যি।

পরীর শোবার ঘরের জানালার পাশেই তাদের ফুল বাগান। যামিনী, হাøাহেনা, রজনীগন্ধরা রাতের ফুল। রাতে যখন ওরা ফোটে তখন মৃদু হাওয়া সৌরভ বয়ে আনে পরীর জন্য। পরীর মনটা তখন আনন্দে নেচে ওঠে।

পরীর তখন মনে পড়ে সেই কবিতাটাঃ রাতে আমার ঘুম আসে না কাঁঠালচাঁপার গন্ধে...।

পরী তখন একটু ঘুরিয়ে আবৃত্তি করে- রাতে আমার ঘুম আসে না হাøাহেনার গন্ধে...।

সে রাতেও এমনটি হয়েছিল। তবে রাতে ফোটা ফুলের গন্ধ মনটা চনমন হয়ে উঠলেও এক সময় চোখজুড়ে ঘুম এসে যায় পরীর।

পরীর চোখে তখন ভর করে স্বপ্নের গাছ।

কত যে ফুল ফুটেছে। পরী আশ্চর্য হয়ে যায় এই শরতেও নানা ঋতুর ফুলে বাগান তোলপাড় করছে। জুঁই, বেলি তো আছেই পাশাপাশি সূর্যমুখী, ডালিয়া, গোলাপ, গাঁদা, নীলমণি, মোরগ ফুল, কলাবতী, কৃষ্ণচ‚ড়া, পলাশ, জবা নানা রঙের নানা ফুল।

পরী এক সময় দেখে, সেসব ফুল পরীকে সম্ভাষণ জানিয়ে বলছে, সুপ্রভাত পরী। পরীও তাদের সুপ্রভাত জানিয়ে বলে, ‘তোমরা যে সবাই এক সাথে ফুটে উঠেছো?’

ওরা হেসে বলে, ‘আজ যে তোমার জন্মদিন। তাই তোমাকে একটা সারপ্রাইজ দিতেই আমাদের এই প্রয়াস।’

তাই নাকি? সত্যিই আজ আমার জন্মদিন?

কেন জানো না বুঝি? তোমার আম্মু-আব্বু বলেনি? আজ যে ৫ মে!

মে ফ্লাওয়ার। কথাগুলো শুনে পরী লজ্জা পেলো। সত্যিই তো। কাজের চাপে মনেই ছিল না হয়তো।

‘তোমাকে আমরা কি উপহার দিতে পারি বন্ধু ফুলপরী?’

‘না, না কিছুই দিতে হবে না। শুধু তোমরা দোয়া করো, আমি যেন সারা জীবন তোমাদের কাছাকাছি থাকতে পারি।’

সূর্যমুখী হেসে ওঠে, ‘বন্ধু ফুলপরী অবশ্যই আমাদের মাঝে তুমি থাকবে। তুমি অনেক বড় হবে। মানুষের উপকারে আসবে। আর এও জানি, তোমার আব্বু-আম্মু তোমার জন্মদিন উপলক্ষে একটা চমৎকার অনুষ্ঠানের আয়োজন করবে। আর সেই অনুষ্ঠানে আমরা তোমার পাশেই থাকব। আমরা আমাদের সৌরভে তোমার অনুষ্ঠান পবিত্র করে তুলব।

‘সত্যি বলছো সূর্যমুখী?’

সূর্যমুখী উত্তর দেওয়ার আগেই পরীর আব্বু-আম্মুর ডাকে জেগে উঠলো।

‘হেপি বার্থ ডে টু পরীমণি...।’ বাবা-মার হাতে দুটো ফুলের ডালি।

বিছানা ছেড়ে লাফ দিয়ে উঠে পড়ে পরী। খুশিতে তার মনটা ভরে উঠে।

পরী দেখে বাবা-মার হাতের ডালিতে সেই সব ফুলই শোভা পাচ্ছে। রাতের ওই ফুলেরাই পরীকে বলেছিল, ‘আমরা তোমার জন্মদিনের অনুষ্ঠানে সৌরভে পবিত্র করে তুলব। সত্যিই ঘরটি তাদের সুবাসে মৌ মৌ করছে। শুধু মা-বাবাই নন; তাদের পেছনে পরীর বন্ধুরা, খালামণি, বড়মামা, ছোট চাচি সবাই তাকে শুভেচ্ছা জানাতে এসেছে। সবার হাতেই ফুলের তোড়া।

এই রকম আরও টপিক

সর্বশেষ খবর