শিরোনাম
শুক্রবার, ১৮ ডিসেম্বর, ২০১৫ ০০:০০ টা
গল্প : আবেদীন জনী

মিঠু গিয়েছিল জাদুর দেশে

মিঠু গিয়েছিল জাদুর দেশে

মিঠুদের বাড়ির উঠোনে একটি পেয়ারাগাছ। সেই গাছের শাখে বাঁধা হয়েছে দোলনা। দোলনায় চড়ে সকাল-বিকাল দোল খায় মিঠু। দোল খেতে খেতে পাখির সাথে কথা বলে। ফুলের সাথে কথা বলে। গান গায়। ছড়া কাটে। কখনো বা হাওয়াপরীর তুলতুলে ডানার ছোঁয়ায় ঘুমিয়ে পড়ে।

সেদিন বিকালেও দোলনায় দোল খাচ্ছিল মিঠু। হঠাৎ দেখল, ওর পাশেই এক লোক দাঁড়িয়ে আছে। এক নিমিষে কোথা থেকে এলো লোকটি? কী উদ্ভট চেহারা! গোল গোল, বড় বড় ভুতুড়ে চোখ। জটা জটা এলোমেলো চুল। কাশফুলের মতো সাদা। নাকটা চিক্কণ-লম্বা। ইয়াবড় বাঁকানো গোঁফ। কুঁচকানো শরীরের চামড়া। হাতের নখগুলো রাক্ষসের নখের মতো ভয়ঙ্কর। মিঠু লোকটা দেখে ভীষণ ভয় পেয়ে গেল। ভয়ে কেঁপে কেঁপে জিজ্ঞেস করল, তুমি কে? তুমি কি ভূত?

—না-রে, খোকা, আমি ভূত না। জাদুর দেশের মস্ত বড় জাদুকর।

—তুমি এখানে এসেছ কেন?

—তোমাকে জাদুর দেশে নিয়ে যেতে এসেছি, হিঃ হিঃ হিঃ!

মিঠু আরও ভয় পেল। দোলনা থেকে নেমে পালাতে চাইল। কিন্তু পারল না। মা-কে ডাকল। কিন্তু শব্দ হলো না। অদ্ভুত ব্যাপার!

জাদুকর হিঃ হিঃ হিঃ হেসে বলল, তুমি এখন কোথাও যেতে পারবে না মিঠু। তোমাকে আমি জাদুর জালে বন্দী করে ফেলেছি। ছু মন্তর ছু!

তুমি আমার নাম জানলে কী করে? মিঠু প্রশ্ন করল। জাদুকর বড় বড় দাঁত বের করে চিবিয়ে চিবিয়ে বলল, জানি, জানি। তুমি এই দোলনায় চড়ে সকাল-বিকেল দোল খাও। পাখি দেখে দেখে, ফুল দেখে দেখে দুলতে দুলতে ঘুম যাও। সব জানি, হিঃ হিঃ হিঃ!

—জানো তো ভালো কথা। এখন আমাকে যেতে দাও। আমি খুব ভয় পাচ্ছি। মায়ের কাছে যাব।

—না। যেতে পারবে না তুমি। অনেক আকাশ পাড়ি দিয়ে আমি খুব কষ্ট করে এসেছি। তোমাকে জাদুর দেশে নিয়ে যেতে।

—কেন আমাকে জাদুর দেশে নিয়ে যেত চাও!

—এখন বলব না। গেলেই জানতে পারবে। শুধু এইটুকু শোনো, জাদুর দেশে তোমাকে খুব দরকার।

—আমাকে খুঁজে না পেলে মা তো কাঁদবে।

—তোমার মা কিছু জানবে না। তার আগেই তোমাকে পৌঁছে দেব।

—সত্যি বলছ তো জাদুকর!

—সত্যিই বলছি।

তারপর জাদুকর বিড়বিড় করে ঠোঁট নেড়ে কী মন্ত্র যেন পাঠ করতে থাকল। আকাশের দিকে তাকিয়ে বলল— ছু মন্তর ছু। মিঠুর মুখমণ্ডলে জোরসে দিল ফুঁ। তারপর মিঠুকে পিঠের ওপর বসিয়ে হাওয়ায় ভেসে ভেসে যেতে লাগল জাদুকর। আকাশের পরে আকাশ। মেঘের পরে মেঘ। নীলের পর নীল। আরও দূর বহু দূর অতিক্রম করে জাদুকর মিঠুকে নিয়ে পৌঁছে গেল জাদুর দেশে।

দেশটা ঘুরে ঘুরে দেখতে লাগল মিঠু। জাদুকর পথ দেখিয়ে দেখিয়ে নিয়ে গেল সবখানে। অবাক ব্যাপার! জাদুর দেশে কোথাও কোনো বৃক্ষ নেই। ফুল-ফল-শস্য নেই। পাথর আর পাথর। পাথরের পাহাড়। আগুনের মতো রোদ। মানুষগুলো লিকলিকে। রোগা। খাবার নেই তাদের। ক্ষুধার জ্বালায় পাথর চেটে চেটে খাচ্ছে। কী বীভৎস ছবি!

মিঠু জাদুকরকে বলল, এটা কেমন দেশ? বৃক্ষ নেই। ফুল নেই। ফল নেই। শস্য নেই। সবখানে পাথর। খাদ্য নেই। মানুষগুলো না খেয়ে রোগা হয়ে গেছে। পাথর চেটে খাচ্ছে। তুমি না মস্ত বড় জাদুকর? পাথরগুলোকে বৃক্ষ বানাতে পারো না? ফুল ফোটাতে পারো না পাথরে?

জাদুকর বলল, না-রে খোকা। আমি বৃক্ষকে পাথর বানাতে পারি। কিন্তু পাথরকে বৃক্ষ বানানোর জাদু আমার জানা নেই।

তুমি হলে একটা বোকা জাদুকর। মিঠু বলল।

জাদুকর বলল, হ্যাঁ, হ্যাঁ, তুমি ঠিকই বলেছ মিঠু। আমার মতো বোকা জাদুকর আর কোথাও নেই। সুখে বাস করব বলে পাথরের প্রাসাদ বানাতে চেয়েছিলাম। কিন্তু এদেশে কোনো পাথর ছিল না। তাই সব বৃক্ষ আমি জাদু দিয়ে পাথর বানিয়েছি। বৃক্ষ ছাড়া দেশ মরুভূমি হয়ে যায়। একথা আমার জানাই ছিল না।

—কিন্তু আমাকে এখানে নিয়ে এলে কেন? মিঠুর প্রশ্ন।

—তুমি হলে সত্যবাদী। নিষ্পাপ খোকা। আমি জাদুশাস্ত্র ঘেঁটে দেখেছি, কোনো নিষ্পাপ খোকা যদি এদেশের একটি পাথর ছুঁয়ে বলে ‘বৃক্ষ হয়ে যা’। তাহলে সবগুলো পাথর পুনরায় বৃক্ষে পরিণত হবে। তুমি আমাদের বাঁচাও খোকা।

নিজেকে সত্যবাদী ও নিষ্পাপ জেনে খুব ভালো লাগল মিঠুর। ও জাদুকরের অনুরোধে একটি পাথর ছুঁয়ে বলল, ‘বৃক্ষ হয়ে যা’। সঙ্গে সঙ্গে পাথরগুলো বৃক্ষ হয়ে গেল। সবুজে সবুজে ছেয়ে গেল দেশ।

তারপর বৃষ্টি নামল। বৃক্ষের শাখে শাখে ফুল ফুটল। ক্ষেতে শস্য হলো। সেদেশের মানুষ সুখে-শান্তিতে বাস করতে লাগল।

মিঠুর ছ’মাস কেটে গেল জাদুর দেশে। মাকে  মনে পড়ল ওর। জাদুকরকে বলল, আমাকে মায়ের কাছে পৌঁছে দাও।

জাদুকর বিড়বিড় করে মন্ত্র পাঠ করতে লাগল। তারপর বলল, ছু মন্তর ছু।  একমিনিষেই হয়ে গেল একটি উড়ো জাহাজ। সেই জাদুর জাহাজে উঠিয়ে দিল মিঠুকে। আকাশের পরে আকাশ, নীলের পরে নীল পাড়ি দিয়ে ছুটতে লাগল জাহাজ। এক সময় ঘুমিয়ে পড়ল মিঠু। ঘুম থেকে জেগে দেখতে পেল, বাড়ির উঠোনে পেয়ারাগাছে বাঁধা সেই দোলনায়ই দোল খাচ্ছে ও।

এই রকম আরও টপিক

সর্বশেষ খবর