শুক্রবার, ৭ অক্টোবর, ২০১৬ ০০:০০ টা

দুর্গাপূজায় সুমতি

রণজিৎ সরকার

দুর্গাপূজায় সুমতি

সুস্মিতা বাবা-মার একমাত্র সন্তান। বড় আদরের মেয়ে সে। বাবা-মার কাছে যখন যা চায়, তা সে পায়। স্কুল থেকে ফিরছে সুস্মিতা আর নাদিয়া। নাদিয়া গল্প বলল, ‘সুস্মিতা এবার পূজাতে নাড়ু মোয়া খাওয়াবি না?’

সুস্মিতা বলল, ‘এবার পূজাতে গ্রামের বাড়ি যাব। গ্রামে আমার ঠাকুরমা কি শুধু নাড়ু মোয়া তৈরি করেছেন। তা কিন্তু করেননি, আরও কত রকমের খাবার জিনিস তৈরি করেছেন পূজা উপলক্ষে। আমাদের সঙ্গে তুই চল। গিয়ে সব খাবি।’

নাদিয়া মুচকি হাসি দিয়ে বলল, ‘না রে, আমার যাওয়া হবে না। তুই ঘুরে আয়। আসার দিন আমার জন্য সব নিয়ে আসবি।’

সুস্মিতা বলল, ‘চল না, এক দিন থেকে চলে আসবি।’

নাদিয়া বলল, ‘না না বাবা-মা এবার পূজাতে কোথায় যেন আমাকে নিয়ে যাবেন। সম্ভাব্য বাবার কোনো সহকর্মীর বাসায়। মনে হয় ঢাকার বাইরে। তুই যা ঘুরে আয়।’

সুস্মিতা বলল, ‘আমি তো অবশ্যই যাব। তুই গেলে ভালো হতো। আমারও ভালো লাগত।’

নাদিয়া স্কুলব্যাগ থেকে পানির বোতল বের করল। তারপর পানি খেয়ে বলল, ‘আচ্ছা, সুস্মিতা তোকে একটা কথা বলতে চাই আমি।’

সুস্মিতা বলল, ‘কি কথা নাদিয়া, বল?’

নাদিয়া মাথা নাড়াতে নাড়াতে বলল, ‘শুনে রাগ করবি না তো।’

সুস্মিতা বলল, ‘না না রাগ করব না। তুই বল।’

নাদিয়া বলল, ‘আচ্ছা, আমরা ঈদের সময় কতজনকে কত কিছু দিই। যেমন জাকাত দেই, ফিতরা দেই। আর কতজনকে কত কিছু দিতে হয়। কিন্তু পূজাতে তুই কি গরিব দুঃখীদের কিছু দিস।’

সুস্মিতা স্কুলব্যাগ থেকে হাত সরিয়ে নিয়ে মাথার চুল নাড়তে নাড়তে বলল, ‘কাউকে তো কিছু দেওয়া হয় না। আর আমিও তো এভাবে কখনো চিন্তা করিনি।’

নাদিয়া বলল, ‘পূজাতে তুই গরিবদের জন্য কিছু করতে পারবি কিনা।’

সুস্মিতা ভাবতে লাগল পূজার তো আর বেশি দিন বাকি নেই। অবশ্যই কিছু একটা করা দরকার।

নাদিয়া সুস্মিতাকে ধাক্কা দিয়ে বলল, ‘কি রে, কি ভাবিস?’ সুস্মিতা মাথা ঝাকি দিয়ে বলল, ‘পূজা নিয়ে ভাবছিলাম। দেখি তোর কথামতো গরিব দুঃখীদের কিছু করতে পারি কি না। বাসায় গিয়ে বাবা-মাকে বিষয়টা বলব।’

নাদিয়া বলল, ‘ঠিক আছে। প্রয়োজনে আমরা তোকে সাহায্য করব।’

সুস্মিতা মাথা নাড়ে সম্মতি দিল।

সুস্মিতা বাসায় এলো। আসার পর মাকে বলল, ‘মা তোমাকে একটা কথা বলতে চাই আমি।’

মা বললেন, ‘কি কথা মামনি?’

সুস্মিতা বলল, ‘পূজাতে কি শুধু আমিই নতুন কাপড় পড়ব। যারা নিজেরা কিনতে পারে না, তাদের আমি নতুন কাপড় পরাতে চাই।’

সুস্মিতার কথা শুনে মা একটু অবাক হলো। কারণ এত দিন সুস্মিতার পুরনো জামা-কাপড় ভিক্ষুককে দিতে দিত না তার সামনে। আজ সে নিজে বলছে তাদের দেওয়ার জন্য, বিষয়টা কিন্তু রহস্যজনক মনে হচ্ছে মায়ের কাছে।

তবু মা বলল, ‘আচ্ছা, সুস্মিতা তুমি কিছু তোমার পুরনো জামা-কাপড়গুলো দিয়ে দেবে।’ সুস্মিতা বলল, ‘না না। আমি নতুন জামা কাপড় দিতে চাই।’

এর মধ্যে বাবা বাসায় এসে হাজির হলেন। মা-মেয়ে গল্প করা দেখে বাবা বললেন, ‘মা মেয়ে কি গল্প করা হচ্ছে?’

সুস্মিতা বলল, ‘বাবা বিয়ষটা মাকে বলেছি, এবার তোমাকে বলি।’

বাবা বললেন, ‘কি কথা মামনি। তুমি বলো। আমি মনোযোগ দিয়ে শুনব আমি।’

সুস্মিতা বাবার মুখের দিকে তাকিয়ে বলল, ‘এবার পূজা আমি নতুন জামা কাপড় পরব না। যারা পড়তে পারবে না, তাদের নতুন কাপড় পরাতে চাই।’

বাবা বললেন, ‘আমি কি করতে পারি মামনি।’

সুস্মিতা বলল, ‘বাবা তুমি আমাকে নতুন জামা কাপড় কিনে এনে দিবে। আমি সেগুলো নিয়ে গ্রামে যাব। যারা গরিব তাদের দেব। দাদুকে বলে দাও গরিব ছেলেমেয়েদের একটা তালিকা করতে।’

বাবা-মা সুস্মিতার কথা শুনে অবাক। তারপর বাবা বললেন, ‘তুমি কোন চিন্তা করো না। সব নতুন জামা কাপড় কিনে দেব।’

সুস্মিতা খুশিতে হাততালি দিল। তারপর বলল, ‘আমার ইচ্ছা পূরণ হবে, কি যে ভালো লাগছে আমার।’সুস্মিতার আনন্দ দেখে মন ভরে গেল বাবা-মার।

এই রকম আরও টপিক

সর্বশেষ খবর