শুক্রবার, ২ ডিসেম্বর, ২০১৬ ০০:০০ টা

কাট্টুশের সমুদ্রযাত্রা

রিদওয়ান আক্রাম

কাট্টুশের সমুদ্রযাত্রা

এই মাত্রই ডিম থেকে ফুটলো সামুদ্রিক কচ্ছপের বাচ্চাটা। কোনো রকম বালির ভিতর থেকে বের হলো। জীবনে প্রথমবারের মতো দেখল আলোর মুখও। বিশাল আকাশ। নীল। দূরে শোনা যাচ্ছে সমুদ্রের গর্জন। বিশাল সব টেউ আছড়ে পড়ছে সেন্টমার্টিন দ্বীপের সমুদ্র তীরে। একটার পর একটা। কচ্ছপের বাচ্চাটার কোনো নাম নেই। নামটা দেবেই বা কে? ওর মা তো সমুদ্রের তীরে ডিম পেরে আবার সেই সমুদ্রেই ফিরে গেছে। সেটাও তো দুই মাসের আগে কথা। চলো আমরাই না হয় ওর একটা নাম দিয়ে দিই। কি দেওয়া যায় বল তো? আচ্ছা, কাট্টুশই না হয় রাখি। নামটা কিউট না? কাট্টুশ এখন ছুটছে। ওর মাথার ভিতর কে যেন শুধু বলছে, ‘দৌড়াও, দৌড়াও...। না হলে দারুণ বিপদ পড়বে।’ বিপদটা যে কি সেটা এখনো ধারণা করতে পারেনি কাট্টুশ। ধীরে ধীরে গতি বাড়ায়। এ তো আরেকটু গেলেই বিশাল সমুদ্র। কিন্তু ছোট ছোট চার হাতে পায়ে আর কতটুকু জোরেই বা ছোটা যায়? হঠাৎ করে চোখে পড়ল সাদা মতো কি যেন একটা আকাশ থেকে সোজা ছুটে আসছে ওর দিকে। এক নিমিষেই কাট্টুশ বুঝতে পারে এটাই সেই বিপদ। সাদা মতো দেখতে প্রাণীটা আসলে একটা গাঙচিল। গাঙচিলদের প্রিয় খাবারগুলোর মধ্যে কিন্তু বাচ্চা কচ্ছপরাও আছে। বাচ্চাগুলো ডিম থেকে বের হওয়ার পর থেকে বেশ তক্কে তক্কেই থাকে গাঙচিলগুলো। সদ্য জন্ম নেওয়া কচ্ছপের বাচ্চাগুলো বুঝতে পারে না কে ওদের শত্রু। বুঝতে বুঝতে গাঙচিলদের নাস্তায় পরিণত হয় ওরা। কাট্টুশের সেরকম কিছুতে পরিণত হওয়ার কোনো ইচ্ছেই নেই। ছোটার গতি আরও বাড়ায়। গাঙচিলও ঝাঁপ দেয় ওকে ধরার জন্য। কিন্তু একটুর জন্য বেঁচে যায় কাট্টুশ। গাঙচিলের সূঁচালো ঠোঁটে খোঁচা লাগে ওর পিঠে। কিন্তু কিছু হয় না। বাচ্চা হলেও কচ্ছপদের খোলসটা কিন্তু কম শক্ত নয়। তারপরেও কাট্টুশ বুঝতে পারে গাঙচিলের ঠোঁটের জোর কত? এবার না পারলেও একেবারে হাল ছেড়ে দিতে নারাজ গাঙচিলটা। উড়োজাহাজের মতো বাঁক খেয়ে আবার ছুটে আসে কাট্টুশের দিকে। এবার প্রায় ধরেই ফেলেছিল ওকে। এমন সময় কাট্টুশকে বাঁচিয়ে দিলো বিশাল এক ঢেউ। ওটা তাকে নিয়ে ফেলে জলরাশির মাঝে। চারদিকে পানি আর পানি। পানি পেয়ে একে একে সমুদ্রতীরের বালুতে লুকিয়ে থাকা ছোট কাঁকড়া, ঝিনুক আর শামুক বেরিয়ে আসে। বাচ্চা কাঁকড়াগুলো আবার মরা শামুকের খোলসের ভিতরে গিয়ে আশ্রয় নিয়েছে। সেখান থেকে এন্টেনার মতো দুই চোখ বের করে কাট্টুশকে দেখতে লাগল। এসবে বেশিক্ষণ নজর দিতে পারে ও।  

ডিম বের হয়েই এমন এক অবস্থায় পড়ে এক প্রকার ভয়ই পেয়ে গেল বলা যায় কাট্টুশ। ঢেউটা ওকে গভীর সমুদ্র পর্যন্ত নিয়ে গেল না। বরং তাকে পৌঁছে দিল সমুদ্রের কাছেই থাকা ডুবো পাথরের দুনিয়ায়। পাথরের বেশির ভাগ পানির নিচে থাকলেও উপরের অংশের খানিক ভেসে আছে। তাতে আশ্রয় নিয়েছে বড় বড় কাঁকড়ারা। ওকে পানিতে খাবি খেতে দেখে এক বুড়ো কাঁকড়া বলে উঠল, ‘আরে ভাগ্নে, তুমি দেখি সাঁতার কাটতে কাটতে বেশ হাঁপিয়ে উঠেছ। আমার হাতটা ধর। তোমাকে টেনে তুলছি।’

কাট্টুশের মনে হলো যাক কেউ একজন তো আছে এই বিপদ থেকে তাকে উদ্ধার করতে। বেশ কসরত করে ওকে পানি থেকে উঠাল কাঁকড়া মামা। উদ্ধারের পরেও কাট্টুশকে ছেড়ে দিলেন না তিনি। ও বলল, ‘আমি ঠিক আছি। এবার মনে হয় আমাকে ছাড়তে পারেন।’ কিন্তু তেমন কোনো লক্ষণ দেখা গেল না। কাঁকড়ার মতিগতি ভালো ঠেকল না কাট্টুশের। মনে হচ্ছে গাংচিলের মতো ওকে দিয়ে দুপুরের খাবারের পর্বটা সারতে চায় ব্যাটা কাঁকড়াও। এখন উপায়? কাঁকড়ার সাঁড়াশির মতো দুই হাতে বেজায় শক্তি।

এর থেকে নিস্তার পাওয়াটা তো আর চাট্টিখানি কথা নয়। কিন্তু এত সহজে হাল ছাড়তেও রাজি নয় কাট্টুশ। সেও বুদ্ধি খাটায়। ছোট হলেও তার চোয়ালও কম শক্তিশালী নয়। এক মোক্ষম সময়ে আচ্ছা করে একটা কামড় বসিয়ে দেয় কাঁকড়াকে। এমন কামড়ের জন্য মোটেও প্রস্তুত ছিল না দুষ্টটা। হাত দুটো একটু হালগা হতেই নিজেকে কোনো রকমে ছুটিয়ে ফের পানিতে লাফ দেয় কাট্টুশ। এক ডুবে সোজা গভীর সমুদ্রে। আর ওকে পায় কে! কাট্টুশ এবার নিশ্চিন্ত মনে সাগরে পানিতে সাঁতার কেটে বেড়ায়।

সর্বশেষ খবর