শুক্রবার, ৩০ ডিসেম্বর, ২০১৬ ০০:০০ টা

প্রজাপতি, দৈত্য ও সাবরিনার গল্প

রুমান হাফিজ

প্রজাপতি, দৈত্য ও  সাবরিনার গল্প

বার্ষিক পরীক্ষা শেষ করে আম্মুর সাথে নানু বাড়িতে বেড়াতে আসে সাবরিনা। আজ অনেক দিন পর নানু বাড়িতে তাদের আসা। আসতে চাইলেও অনেক সময় সম্ভব হয় না, কারণ সাবরিনাদের পরিবার বগুড়া শহরে থাকে, বাবার চাকুরীর সুবাদে সেখানে প্রায় তিন বছর থেকেই তারা বসবাস করে আসছে। আর সাবরিনার নানু বাড়ি সিলেট জেলায়। বগুড়া থেকে সিলেটের দূরত্বও কম না। নানু বাড়ি সিলেট হওয়াতে সাবরিনা তার বন্ধুদের সাথে এ নিয়ে অনেক গল্প করে। সে গর্ব করেই বলে আমার নানু বাড়ি সিলেটে। সিলেটের মাটি, মানুষ, প্রাকৃতিক সম্পদ, দর্শনীয় স্থান সব মিলিয়ে গর্ব করার মতোই। সাবরিনা নানু বাড়িতে বেড়াতে এসে সিলেটের অনেক কিছুই দেখে ফেলেছে। সিলেটের এই অপরূপ সৌন্দর্য তাকে বারবার টেনে নিয়ে আসে। নানু বাড়িতে আসার সময় কী যে খুশি লাগে সাবরিনার, কিন্তু চলে যাওয়ার সময় ভীষণ খারাপ লাগে তা কেবল সাবরিনাই বুঝতে পারে। মন চায় যদি নানু বাড়িতে একেবারে থাকতে পারত। তা কী করে সম্ভব!

সাবরিনা এবার পঞ্চম শ্রেণির সমাপনী পরীক্ষা দিয়েছে। পড়ালেখায় বেশ মনোযোগী। সব ক্লাসেই ভালো রেজাল্ট করেছে। এবারও ভালো একটা রেজাল্ট প্রত্যাশা করছেন বাবা-মা, শিক্ষক-শিক্ষিকাসহ সবাই। পড়ালেখায় যেমন ভালো তেমনি তার কথাবার্তাও। অনেক সুন্দর করে গুছিয়ে কথা বলতে পারে, যা এই বয়সে অনেকেই পারে না।

সেদিন খুব ভোরে নাস্তা না করেই ঘর থেকে বেরিয়ে যায় সাবরিনা। নানু বাড়ির পেছনের দিকটায় বিশাল এক ফুলের বাগান। নানা জাতের ফুলের সমাহার বাগানটায়। এর আগেও সাবরিন এই বাগানে এসেছে। তাই কাউকে কিছু না বলেই চুপিচুপি চলে যায় বাগানে। বাগানটা তার অনেক পছন্দের। ভোরের শিশিরসিক্ত সবুজ ঘাসের আলতো ছোঁয়ায় তার মনটা প্রফুল্লিত হয়। বাগানের কাছে এসে সদ্য উদিত ফুলের ওপর হাত বোলাতে থাকে সাবরিনা। আহা কী আনন্দ আকাশে-বাতাসে! ফুলের গন্ধে সাবরিনা হারিয়ে যায় অজানাতে। হঠাৎ তার চোখ যায় লাল টুকটুকে গোলাপ ফুলটার ওপর বসে থাকা একটা প্রজাপতির দিকে। একদম কাছে এসে দাঁড়ালেও প্রজাপতিটা কোনোরূপ নড়াচড়া না করে বসেই থাকে। অনেক সুন্দর তো!

মনে হচ্ছে যেন ফুলের ওপর আরেক ফুল বসা। একদম কাছে পেয়ে লোভ সামলাতে না পেরে সাবরিনা হাত দিয়ে ধরতে যায় প্রজাপতিটাকে। কিন্তু একি! প্রজাপতিটা এক নিমিষে উধাও হয়ে যায়, সাথে সাথে পুরো বাগানটা ধোঁয়ায় আচ্ছন্ন হতে থাকে। পেছন দিক থেকে হাসির শব্দে ফিরে তাকায় সাবরিনা, বিরাট আকৃতির একটা দৈত্য তার দিকে দাঁত বের করে খিলখিল করে হাসছে! খানিক ভয় পেয়ে যায় সাবরিনা। কী করবে বুঝতে পারছে না। দৌড় দিয়ে পালাবে কিন্তু তার শরীরটা তো নড়াচড়া করছে না। কী যেন বলতে গিয়েও আটকে যাচ্ছে।

-‘এই সাবরিনা, ভয় পাচ্ছ তুমি?’

দৈত্যের মুখ থেকে নিজের নাম শুনে আরও অবাক হয় সাবরিনা! দৈত্যটা আমার নামও জানে?

-‘কি অবাক হচ্ছ?’

দৈত্যের ফের প্রশ্নে মুখ খুলে সাবরিনা, না মানে বলছিলাম কি...!

-কী?

-‘আ...প...নি এখানে...?

হা হা হা হা হু হু হু হু....

সাবরিনার প্রশ্ন শুনে বিকট শব্দ সে কী হাসি দৈত্যের! দৈত্যের এ হাসিতে আরও ভয় পায় সাবরিনা।

-‘আরে নাহ, তোমাদের এই বাগানটা আমার অনেক পছন্দের, খুব ভালো জায়গাটা তাই আমি এখানেই থাকি। চিন্তা করো না সাবরিনা, আমি তোমার কোনো ক্ষতি করব না কেমন!’  দৈত্যের কথায় এবার স্বস্তির নিশ্বাস নেয় সাবরিনা।

-‘আচ্ছা আপনি কী কী করেন?’

-‘সাবরিনার প্রশ্নে হাসি তুলে উত্তর দেয় দৈত্য, আমি কী পারি না সেটা বলো? সব কিছুই করতে পারি। তোমার কোনো কিছু লাগবে যা চাইবে তাই করে দেব। চিন্তায় পড়ে যায়

সাবরিনা, কী চাইবে দৈত্যের কাছে?

-‘আচ্ছা আমি তো এবার সমাপনী পরীক্ষা দিয়েছি আমাকে কি এ-প্লাস পাইয়ে দেবে?’

-‘হা হা হা! এটা কোনো চাওয়া হলো? এ নিয়ে একদম চিন্তা করো না, নিশ্চিত তুমি এ-প্লাস পাবে।’

দৈত্যের কথা শুনে ঠোঁটের কোনে হাসি ফোটে সাবরিনার।

-‘আর কিছু লাগবে না?’ দৈত্যের প্রশ্ন-

আচ্ছা দাঁড়াও বলছি—

অনেকক্ষণ চিন্তা করে সাবরিনা তার আরেকটি চাওয়ার কথা জানায়।

-‘আমি নানু বাড়িতে সবসময় থাকতে চাই, এখানে আমার অনেক ভালো লাগে। কিন্তু আব্বু আম্মু তো আমাকে থাকতে দেয় না। কী করব বলো?’

সাবরিনার এই প্রশ্নে হাসিতে ফেটে পড়ে দৈত্য, সাথে সাথে সাবরিনাও হাসতে তাকে। সে কী হাসি! দুজনের হাসি যেন থামতেই চায় না...

এমন সময় হঠাৎ ছোট মামার ডাক, এই সাবরিনা এখানে কী করো? আর হাসতেছ যে! ছোট মামার ডাকে সাবরিনা ফিরে তাকায়। কী রে সেই কতকক্ষণ ধরে খুঁজছি তোকে, ঘরে সবাই তো চিন্তা করতেছে। আর তুই এখানে? সাবরিনা কোনো কথা বলে না।

দৈত্যের দিকে ফের তাকায় সাবরিনা, কিন্তু দৈত্য কোথায়? দৈত্যটা চলে গেল? তাহলে সাবরিনার চাওয়াটা পূরণ হবে কীভাবে? ইস...! ছোট মামাটা যদি না আসতেন, তাহলে তো...!

বাগান থেকে বেরিয়ে ছোট মামার হাত ধরে ছুটে চলে সাবরিনা। বারবার বাগানের দিকে ফিরে তাকায়, যদি আবার দৈত্যটা প্রজাপতি হয়ে চলে আসে!

সর্বশেষ খবর