শুক্রবার, ২০ জানুয়ারি, ২০১৭ ০০:০০ টা

ভালো কাজ

মো. মাঈন উদ্দিন

ভালো কাজ

হাসিবদের বাসাটি তিনতলা বিশিষ্ট। হাসিবের এই বাসায় একদম ভালো লাগে না, কারণ এই বাসায় তেমন খেলার জায়গা নেই। তাদের বাসার পাশে ছোট্ট যে গলি সেখানে সে প্রতিদিন খেলতে চলে যায়। তার খেলার সঙ্গী হয় সোহাগ। সোহাগ পাশের বস্তিতেই থাকে। তার বাবা ভ্যানচালক। অনেক কষ্টে চলে তাদের সংসার। গতকাল বিকালে হাসিব গলিতে গিয়ে অনেকক্ষণ অপেক্ষা করে। সোহাগ আসেনি। হাসিব অবাক হয়— সোহাগ তো একদিনও দেরি করে না? ‘সোহাগের অসুখ করেনি তো?’ ভাবতে ভাবতে সোহাগ হাজির। হাসিব সোহাগের চোখের দিকে তাকিয়ে দেখে চোখের পানি গড়িয়ে পড়ার স্পষ্ট ছাপ। সে বলল, ‘সোহাগ, তুমি কাঁদছো কেন? কেউ তোমাকে মেরেছে?’ সোহাগ চোখের পানি মুছে বলল, ‘না, মারেনি। মাকে বলেছিলাম, ‘মা, বাবাকে বলো আমার জন্য শীতের জামা এনে দিতে। তাই মা আমাকে বকা দিয়েছেন। বলেছেন-তোর বাবা যে রোজগার করে তা দিয়ে পাঁচজন মানুষের খাওয়া-দাওয়ার পর ঘর ভাড়াই হয় না তোদের শীতের জামা এনে দিবে কেমনে।’ সোহাগের গায়ে পাতলা একটি ময়লাযুক্ত জামা। মাঘ মাসের তীব্র শীত, তার ওপর শীতল হাওয়ায় তার কষ্ট হওয়ারই কথা। হাসিব দেখল, সোহাগ শীতে ঠকঠক করে কাঁপছে। সে তার গায়ের জ্যাকেটটি খুলে সোহাগকে বলল, ‘বন্ধু, এই জ্যাকেটটি তুমি পরে নাও। আজ থেকে এই জ্যাকেটটি তোমার। সোহাগ বলল, ‘না না, তোমার জ্যাকেট আমি নেব কেন? তা ছাড়া তুমি আমাকে জ্যাকেট দিয়ে দিয়েছো— একথা শুনলে তোমার মা-বাবা তোমাকে বকা দেবেন।’ হাসিব বলল, ‘মা-বাবা একদমই বকা দেবেন না। তুমি জানো না, গতকাল বাবা আমার জন্য দুটি জ্যাকেট কিনে এনেছেন। আরও একটি নতুন জ্যাকেট বাসায় রয়ে গেছে।’ সে সোহাগকে জ্যাকেটটি পরিয়ে দিল।  আজ সকালে হাসিবের মা জ্যাকেট দুটি খুঁজতে গিয়ে একটি জ্যাকেট খুঁজে পেলেন না। তিনি হাসিবকে জিজ্ঞাস করলেন, ‘হাসিব গতকাল তুমি যে জ্যাকেটটি গায়ে দিয়ে খেলতে গেলে সে জ্যাকেটটি তো পাচ্ছি না, ঐ জ্যাকেটটি কোথায় রেখেছো?’ হাসিব কিছুটা ভয় পেল। তার মা যদি আবার বকা দেয়। তাই সে বলল, ‘মা, ঐ জ্যাকেটটি খুলে রেখে খেলছিলাম। আর খুঁজে পাইনি।’ তার মা রেগে গেলেন। বললেন, শীতের মধ্যে জ্যাকেট খুলে খেলতে গেলে কেন?  হাসিব অপরাধীর মতো জবুথবু হয়ে দাঁড়িয়ে রইল। মায়ের কথা শুনে হাসিবের দাদা রুম থেকে বেরিয়ে এলেন। বললেন, ‘কি হয়েছে বউমা, সকালবেলা চেচামিচি করছো কেন?’ মা বললেন, হাসিবের জন্য ওর বাবা যে নতুন দুটি জ্যাকেট এনেছিল, তার একটি হাসিব গতকাল খেলতে গিয়ে না কি হারিয়ে ফেলেছে। ‘এটা কোনো কথা হলো?’ দাদা বললেন, ‘বউমা হাসিব জ্যাকেটটি হারিয়ে ফেলেনি, সে ভয়ে তোমাকে বলছে না। সে একটি ভালো কাজ করেছে।’ মা আশ্চর্য হয়ে বললেন, ‘ভালো কাজ!’ দাদা বললেন, হ্যাঁ বউমা, ভালো কাজ।’ হাসিব একটি নতুন জামা তার গরিব বন্ধুকে দিয়ে দিয়েছে। ছেলেটি শীতে কাঁপছিল। তিনি হাসিবের দিকে ঘুরে বললেন, ‘হাসিব, শীতার্থকে বস্ত্র দেওয়া ভালো কাজ। তুমিতো ভালো কাজই করেছো। মিথ্যা বলছো কেন? শোনো, আজ থেকে একটি কথা মনে রাখবে-জীবনে কখনো মিথ্যা কথা বলবে না। এমনকি বিপদেও না। মনে রাখবে—সত্যের জয়, সবসময়।’

সর্বশেষ খবর