শুক্রবার, ২৪ মার্চ, ২০১৭ ০০:০০ টা

পাখিদের সভা

মামুন সিরাজী

পাখিদের সভা

পাখিদের সমাজে আজ শোরগোল পড়ে গেছে, সকাল থেকেই চিৎকার-চেঁচামেচি আর ব্যস্ততা। আমগাছের ওই মগডালে আজ সভা বসেছে। মানুষগুলো সারা জীবন ধরে পাখিদের জ্বালিয়ে মারছে, হয় খাঁচায় বন্দী করছে, নয়তো উদরস্থ করছে... আরও কত কি!!! তাই সভাপতি ময়না এক প্রতিযোগিতার আয়োজন করেছে। মানুষকে বিরক্ত বা ক্ষতিগ্রস্ত করার অভিজ্ঞতা লিখে জমা দিতে হবে, আর তার মধ্য থেকে বাছাই করা হবে তিনটি অভিজ্ঞতার কথা। এই সভায় সেই তিনজন লেখক-লেখিকা তাদের সেই লেখা দর্শক পাখিদের সামনে পাঠ করবে আর দর্শকদের ভোটের বিচারে পুরস্কৃত হবে শ্রেষ্ঠ লেখক বা লেখিকা।

সভাপতি ময়নার সংক্ষিপ্ত ভাষণ দিয়ে শুরু হলো সভা। প্রথম লেখিকা একটি টিয়া। উপস্থিত দর্শকদের স্বাগত জানিয়ে টিয়া শুরু করল তার অভিজ্ঞতার বর্ণনা : সেদিন ধানখেতের পাশে খেজুর গাছটায় বসে একটা পাকা খেজুরে যেই না কামড় দিতে গেছি, দেখি কয়েকটা পাঁজি ছেলে আমার দিকে কি একটা তাক করে রেখেছে, ভয় পেয়ে ছুটে পালাই, কিন্তু ছোঁড়াগুলোও ছাড়বার পাত্র নয়, তারাও দৌড়ায় আমার পেছনে, বেশ কয়েকটা পাথর আমার গায়ে লাগতে লাগতে নিচে পড়ে গেল। আমি হাঁপাতে হাঁপাতে একটা বটগাছের ডালে সবেমাত্র একটু বসেছি, ওমা ছোঁড়াগুলো ওখানেও চলে এসেছে!! হঠাৎ দেখি বটগাছের ডালে একটা সাপের বাচ্চা, আমি তাড়াতাড়ি সেটা মুখে নিয়ে নিচে ছুড়ে মারি, আর সেটা মাটিতে পড়তেই ছেলেগুলো মা রে বাবা রে বলে এর ওর ঘাড়ে পড়তে পড়তে ছুটে পালাল... হাঃ হাঃ হাঃ হাঃ। টিয়ার বক্তব্য শেষ।

পরবর্তী প্রতিযোগী এক কাক। সেদিন সকালে পেয়ারা গাছের ডালে দোল খাচ্ছি হঠাৎ দেখি চকচকে টাকওয়ালা একটা লোক দাঁতন করছে ঠিক ওই গাছটারই নিচে, লোকটা মহাশয়তান, আমারই বন্ধুকে ঢিল মেরেছিল তার আগের দিন, বন্ধুটার একটা পাখনা প্রায় অকেজো হয়ে পড়েছে।

ব্যাটাকে দেখে ব্রহ্মতালু জ্বলে গেল, দিলাম একটা গলাপচা পেয়ারা মাথায় ফেলে। ব্যস, লোকটা এবার আমাকে দেখতে পেয়ে যেই না ঢিল তুলেছে অমনি ক্ষিপ্রগতিতে উড়ে এসে লোকটার টাকের বাকি কগাছা চুল ছিঁড়ে নিয়ে উড়ে পালালাম খানিক দূরের এক সজনে গাছের ডালে। লোকটা মাটিতে আছড়ে পড়ে কি কান্না!! হাঃ হাঃ হাঃ হাঃ। কাক বক্তব্য শেষ করল।

 

শেষ প্রতিযোগী এক শালিক। শালিক তার বক্তব্য শুরু করল : সময়টা ছিল গ্রীষ্মকাল। প্রচণ্ড জলের তেষ্টায় ছাতি ফেটে যাওয়ার জোগাড়। একটা বাড়ির পেছনের বাগানে একটা মাটির ভাড়ে খনিকটা জল দেখে উড়ে গেলাম তেষ্টা মেটাতে কিন্তু ঠিক তখনই বাড়ির পেছনের দরজা খুলে এক মহিলা বেরিয়ে এসে ‘আ মরণ, এক শালিক! যাঃ যাঃ’ বলে একটা ঢিল ছুড়ে মারল আমার দিকে, ঢিলটা আর একটু হলেই আমার ডানায় লাগত আর আমি পঙ্গু হয়ে যেতাম!

 

খুব রাগ হলো, বাসায় ফিরে বন্ধুদের বলাতে ওরাও বলল যে, এক শালিক দেখাটা নাকি মানুষরা পছন্দ করে না, ওদের দিন খারাপ যায়। সে যাই হোক, আমি পরদিন আমার বন্ধুদের নিয়ে সেই বাগানে আবার গেলাম।

দেখি সেই মহিলাটি একটা খুব সুন্দর শাড়ি বাগানে টানানো একটা দড়িতে শুকো দিচ্ছে- যেই না ঘরে ঢুকে দরজা বন্ধ করেছে আমি আর বন্ধুরা মিলে সেই শাড়িটাকে ঠোঁট দিয়ে ঠুকরে ঠুকরে ছিঁড়ে দিলাম। হিঃ হিঃ হিঃ হিঃ...

এরপর দর্শকদের বিচারে শ্রেষ্ঠ লেখকের সম্মান পেল কাক। কারণ একমাত্র সেই মানুষকে বেশি বোকা বানাতে পেরেছে।

 প্রবল হর্ষধ্বনির মধ্যে কাকের গলায় জয়মাল্য পরিয়ে দিল ময়না, আর পুরস্কারস্বরূপ দিল পাতায় করে শুকনো পোঁকামাকড় আর কিছু ধান- তার শ্রেষ্ঠত্বের পুরস্কার। পাখিদের সভা শেষ।

এই রকম আরও টপিক

সর্বশেষ খবর