শুক্রবার, ৩১ মার্চ, ২০১৭ ০০:০০ টা

নাকের বড়াই

মঈন মুরসালিন

নাকের বড়াই

বাঘের মাসি বেড়াল সবাই বলে। কিন্তু এ কথা মানতে রাজি নয় বাঘ। বাঘের অহংকার খুব। বাঘ বলে, আমি হলাম বনের রাজা, আমার ভয়ে সকলেই ছুটে পালায় আর আমার কিনা মাসি হলো ঐ কাঁটাখেকো বেড়াল। আরে আমি তো ঐ আস্ত গরু, ছাগল, মাছ গিলে খাই আর আমার মাসি হলে তো কথা ছিল সে একত্রে কয়েকটি গরু সাবাড় করবে কিন্তু সে তো খায় কেবল কাঁটা, এঁটো খাবার। বাঘের শরীর জ্বলে ওঠে, রাগে শরীর রিরি করতে থাকে। বেড়াল সম্বন্ধে বলে—

নেংটি ইঁদুর করেই তাড়া/বাঘের হলি বংশ যারা দেখাই তোদের কেমন মজা—দাঁড়া।

কয়েকটি বাঘ মিলে একদিন এক পাহারাদারের কাছে গেল। বললো—

শুনছো মশায়-

বাঘ বলে, দাও বুদ্ধি উপায় / বেড়াল যাতে চুপ করে যায়।

পাহারাদারের ইচ্ছে ছিল বাঘের ওপর প্রতিশোধ নেয়ার, কারণ বাঘেরা গ্রামে ঢুকে কয়েকবার গরু-ছাগল নিয়ে গেছে। এই সুযোগে পাহারাদার বাঘদের বললো, তোমরা যেহেতু এসেছ তাহলে তো ফায়সালা দিচ্ছি এটাই যে, বেড়াল বাঘের মাসি আর এর প্রমাণ আছে যেমন : এক. তোমাদের শরীরের গঠন আর বেড়ালের শরীরের গঠন একই রকম। তোমরা দেখতে বড়ো আর বেড়াল ছোট।

দুই. বেড়ালের মুখে যেমন হালকা গোঁফ আছে, তোমাদের মুখেও গোঁফ আছে।

তিন. তোমরা যেমন হেলে দুলে চলো, বেড়ালও হেলে দুলে চলে। সুতরাং আমার ফায়সালা বেড়াল বাঘের মাসি, এটা মানতেই হবে।

বাঘরা যখন দেখলো পাহারাদারের ফায়সালা তাদের মন মতো নয় তখন তারা চলে এলো। বাঘরা সিদ্ধান্ত নিলো বেড়ালদের সাথে তারা বিতর্ক অনুষ্ঠানের আয়োজন করবে।

সত্যি সত্যি একদিন বনের সকল পশু-পাখি ডেকে বিতর্ক অনুষ্ঠান শুরু হলো। বেড়াল এমনিতেই খুব চালাক, তাই সাথে আয়না, রশি, লাঠি নিয়ে নিলো, বলা তো যায় না বাঘরা কোন দিক দিয়ে তাদের পরাজিত করে ফেলে। বনের ভিতর পাশাপাশি দুটো বটগাছের গোড়ায় দুই গ্রুপে ভাগ হয়ে বসলো। পশু-পাখিরা অধিকাংশই বিড়ালের পক্ষে কিন্তু বাঘের ভয়ে সে কথা কেউ স্বীকার করলো না। অনুষ্ঠানে বিচারক হিসেবে উপস্থিত মহামান্য হাতি। অনুষ্ঠানের শুরুতেই একটি বিষয় নির্ধারণ করা হয়েছে, যে গ্রুপ পরাজিত হবে তারা এ বন ছেড়ে অন্যত্র চলে যাবে।

শুরু হলো মূল অনুষ্ঠান। বাঘরা চিন্তা করলো বেড়ালদের পরাজিত করা সম্ভব নয়, কারণ তারা অবিকল এবং চরিত্রগতভাবেও আমাদের মতো। তবে বেড়ালদের ঠেকানোর একমাত্র পথ হলো তাদের ‘নাক’। বিচারক হাতি ঘোষণা করলেন বাঘদের মাঝ হতে যে কেউ প্রশ্ন করো-

হেলে দুলে বাঘদের মধ্য হতে একজন দাঁড়ালো।

ব্যঙ্গ করে সে বলতে লাগলো, বিড়ালের কথা কী আর বলবো তারা তো দুধ চোরের গোষ্ঠী,  আপনারা দেখুন-

তাদের গালের দুদিকে যেনো দুধের হাঁড়ি / আর নাকটা যেনো ভেঙেছে গরুর গাড়ি।

বলেই সে বসে পড়লো। এবার এ অপমানকর কথার জবাব দেয়ার পালা বেড়ালদের। এই জবাবের ওপরই নির্ভর করবে জয়-পরাজয়। বেড়ালরা এ ধরনের বিতর্কের জন্য প্রস্তুত ছিলো। তারা সবাই তাদের হাতের আয়নাগুলো বাঘদের সামনে নিক্ষেপ করলো।

বললো, আমাদের নাক তো ভালোই আছে, দেখুন না আয়নায় আপনাদের নাক।

বাঘ মহাশয় আয়না দেখুন / দেখুন চেয়ে নাক

থুবড়ে যেনো গিয়েছে এক / পাঁচ টনেরই ট্রাক।

বেড়ালদের জবাব শুনে সকল পশু-পাখি হেসে উঠলো। হাসি যেনো থামতেই চায় না। বাঘরা আয়নাতে নিজেদের মুখ দেখে লজ্জিত হলো, তারা আর বেড়ালদের জবাব নিয়ে মন্তব্য করেনি। হাতি ফায়সালা দেবার আগেই বাঘরা লজ্জায় বন ছাড়তে লাগলো। সকল পশু পাখি আনন্দে হই হই করে উঠলো।

এই রকম আরও টপিক

সর্বশেষ খবর