শুক্রবার, ৭ এপ্রিল, ২০১৭ ০০:০০ টা

তারার দেশপ্রেম

শাম্মী তুলতুল

তারার দেশপ্রেম

তারার বাবা আর্মিতে চাকরি করেন। জীবনের অর্ধেক সময় তিনি পার করেন এই পেশায়। যার কারণে তারা বাবাকে কাছে পায় কম। তাই এই পুচ্ছিটা বাবার কথা ছাড়া আর কারও কথা শোনে না।

তার ধারণা বাবা যেভাবে বুঝিয়ে বলে তা আর কেউ পারে না। তাই সে বাবার সব কথা মাথায় রাখে। একদিন বাবা কর্মস্থলে চলে যাওয়ার পর তারা খুব কান্নাকাটি করে। বাবা জানতে পেরে বাসায় ফোন দিয়ে তারাকে বলে, আমার কথা মন দিয়ে শোন মামনি। শুনবে তো? জী শুনব। আমি দেশ সেবা করি।

দেশকে শত্রুর কাছ থেকে রক্ষা করার চেষ্টা করি। তাই অনেক ব্যস্ত থাকি। উদাহরণ দিয়ে একটু বলি তোমাকে, কখনো খেয়াল করেছ তোমার পুতুলগুলো যখন  ইঁদুর কেটে ফেলে তখন তুমি কত্ত মন খারাপ কর। ইঁদুরকে কত্ত বকা দাও। তুমি তখন চেষ্টায় থাক কিভাবে তোমার পুতুলগুলো রক্ষা করবে ইঁদুরের হাত থেকে। তাই না?

জী বাবা ঠিক বলেছ।

তেমনি তোমার মতো আমিও চেষ্টা করি দেশকে এভাবে  বড় বড় ইঁদুর থেকে রক্ষা করতে। আমাদের দেশে অনেক বড় বড় ইঁদুর আছে তাদের হাত থেকেও তোমাদের, আমাদের সব্বাইকে রক্ষা করতে হয়। তাহলে তো তুমি অনেক সাহসী। তাই না বাবা?

তুমিও অনেক সাহসী মামণি আমার মতো। ঠিক বলেছি? হ্যাঁ বাবা ঠিক বলেছ।

তাহলে কথা দাও আজ থেকে তুমি আর কাঁদবে না। আজ থেকে তুমি তোমার বাবাকে নিয়ে গর্ব করবে।

কথা দিলাম বাবা। সেই থেকে ছোট্ট তারার মনে গেঁথে গেছে দেশপ্রেম। কিছুদিন পর তারার জন্মদিনের সময় ঘনিয়ে এলো। বাবা সেদিন ফোন করে তারাকে বলল, আজ আমি তোমার জন্য চকলেট আর পুতুল নিয়ে হাজির হব। একসঙ্গে কেক কাটব। 

শুনে তারা তো মহাখুশি। তারার সাতটা বছর কেটেছে বাবাবিহীন জন্মদিন পালন করে। এবারে সে প্রথম জন্মদিন পালন করবে বাবার সঙ্গে। তার আনন্দ দেখে কে। তারা তার প্রিয় পুতুলকে কোলে নিয়ে নতুন জামা পরে এ ঘর থেকে ও ঘর দৌড়ায়। বারান্দায় উঁকি দেয়। মুচকি মুচকি হাসে।

কিন্তু দুপুর গড়িয়ে সন্ধ্যা প্রায় হয়ে এলো। বাবা আসার কোনো খবর নেই। বাবার কোনো সাড়া নেই। ধীরে ধীরে তারার হাসিমাখা মুখখানি ম্লান হতে লাগল। সন্ধ্যা শেষ, রাত শুরু। ক্রিং ক্রিং করে ফোন বেজে উঠল। তারা দৌড়ে ফোন ধরল।

বাবা বুক ভরা কষ্ট নিয়ে বলল, দুঃখিত মামণি। নিজেকে অনেক অপরাধী মনে হচ্ছে। পারলাম না এবারও আসতে।

তারা বলল, বাবা আমি একদম মন খারাপ করিনি। আমি জানি তুমি বড় ইঁদুরগুলোর জন্য আসতে পারনি। দেখ আমি একদম ঠিক আছি। মামণিকে জিজ্ঞাসা কর। একদম কাঁদছি না। কথাগুলো বলার সময় তারার চোখ ছলছল করছিল।

এইটুকুন একটা মেয়ের বুঝ দেখে মায়ের চোখ পানিতে ভেসে উঠল। বাবার সঙ্গে কথা শেষ করে তারা মাকে জড়িয়ে ধরল।

এই রকম আরও টপিক

সর্বশেষ খবর