শুক্রবার, ২৮ এপ্রিল, ২০১৭ ০০:০০ টা

সাদা ইঁদুর

আহমাদ স্বাধীন

সাদা ইঁদুর

রাতুলদের বাড়িতে অনেক ইঁদুরের উপদ্রব।

এতটাই ইঁদুর যে কোনো কাজ করেই শান্তি পাওয়া যায় না।

খাবার ঘরে,পড়ার ঘরে, শোবার ঘরে এমনকি শৌচাগারও ইঁদুর মুক্ত নয়। রাত দিন সমান ভাবেই ইঁদুরের চলাফেরা।

হাঁটতে চলতে পায়ে পায়ে ছুটে বেড়ায় ইঁদুর। অনেকটা হ্যামিলনের বাঁশিওয়ালার গল্পের মতো। একমাত্র বাঁশি ছাড়া আর সব রকম উপায়েই ইঁদুর তাড়ানোর চেষ্টা  করা হয়েছে। ইঁদুর মারার টোঁপ, ইঁদুরের বিষ, ইঁদুরের জম বেড়াল পর্যন্ত উল্টো ইঁদুরের ভয়ে পালিয়ে গেছে।

অনেকটা তোমাদের  দেখা টম এন্ড জেরির কার্টুনের মতো। সেই কার্টুনে তো জেরি একা। কিন্তু রাতুলদের বাড়ির ইঁদুর প্রতিটাই এক একটা জেরি।

রাতুলদের বাড়িতে ওর তরিক মামা থাকে। এখানে থেকেই ভার্সিটিতে পড়াশোনা করে।

রাতুল পড়ে ক্লাস ফোরে। তবুও  মামা ভাগ্নের  মাঝে বন্ধুর মতো সখ্য। অনেক জটিল জটিল সমস্যা সমাধানেও তরিক মামার জুড়ি নেই। কিন্তু তার কথা হচ্ছে ছোটখাটো সমস্যা নিয়ে মাথা খাটালে চলবে ন। আমাদের চারপাশে অনেক বড় বড় সমস্যা আছে।  সেসব নিয়েই ভাবতে হবে।

এবং সেসব সমাধান করার চেষ্টাও করে তরিক মামা।

যেমন কদিন আগেও ওদের এলাকার খুব বড় একটা সমস্যার সমাধান করে ফেললো সে।

রাতুলরা যে এলাকায় থাকে সেখানে সন্ধ্যা নামতেই ঘুটঘুটে অন্ধকার হয়ে পড়ে। নেই কোনো সোডিয়াম লাইট কিংবা সিকিউরিটির ব্যবস্থা। যে কারণে এলাকাবাসীসহ পথচারীরা প্রায়ই ছিনতাইকারীর কবলে পড়ে ক্ষতিগ্রস্ত হয়।

রাতুলের তরিক মামা এ সমস্যা সমাধানে পত্রিকায় সংবাদ লিখলো। এলাকাবাসীকে একত্রিত করে সোডিয়াম লাইট বসালো। সন্ধ্যা থেকে পালাক্রমে এলাকা পাহারায় সিকিউরিটির ব্যবস্থা করলো। এবং বেশ সফলভাবেই সমাধান করলো দীর্ঘদিনের সেই সমস্যা।

এইরকম অনেক ভালো কাজের রেকর্ড আছে রাতুলের তরিক মামার ঝুলিতে। সেই সঙ্গে রাতুলসহ ওর বয়সি আরও কয়েকজনের সম্পৃক্ততাও আছে সেসব কাজের সঙ্গে। কিন্তু নিজেদের ঘরের ইঁদুর তাড়াতে তরিক মামার কোনো ভূমিকা না পাওয়ায় কিছুটা হতাশ রাতুল।

আজ অনেকটা অধিকার দেখিয়ে তার মামাকে বলল আচ্ছা মামা-তুমি এত মানুষের জন্য এত কিছু করো অথচ আমাদের বাসার ইঁদুর তাড়ানোর জন্য কিছুই করছো না কেন বলোতো? এই ইঁদুরের উৎপাত দূর করার ব্যাপারে তোমার ভূমিকা থাকা কি উচিত না?

-ভাগ্নের এইরকম সাহসী বাক্যে রাতুল মামা হেসে জবাব দেয়, -অবশ্যই উচিত, কেন না।

তবে জানিস তো রাতুল, আমার আসলে অনেক কাজ। ইঁদুর তাড়ানোর মতো ছোট কাজগুলো তো তোদেরই করা উচিত! 

রাতুল বড়দের মতো মাথা নেড়ে বলে- হ্যাঁ  উচিত এবং সে চেষ্টা করেই অনেকবার ব্যর্থ হওয়ার পরেই তো তোমায় বলছি। আজ দেখলাম পাজি ইঁদুরের দল তোমার বইয়ের সোকেসেও ঢুকে পড়েছে, আল্লাই জানে তোমার এতসব মূল্যবান বইয়ের কয়টা ওরা চিবিয়ে খেলো।

এবার বোধহয় রাতুল সঠিক জায়গায় টোকা দিতে পেরেছে। কারণ তরিক ওর বইয়ের কথা শুনেই উঠে দাঁড়িয়ে গেল-কি বললি, আগে বলবি না। ওই বদ ইঁদুর আমার বই খেয়ে ফেলবে আর আমি চুপচাপ বসে থাকবো?  এটা কখনোই হবে না।

চল্ আমার সঙ্গে এখনই ওদের একটা ব্যবস্থা করছি। এই বলেই ভাগ্নেকে নিয়ে বেরিয়ে পরলো রাতুল। সোজা চলে গেল কাটাবন।  আর সেখান থেকে কিনে আনলো সাদা ধবধবে চারটি বিলাতি ইঁদুর। বাড়িতে ফিরেই রাতুলের প্রশ্ন-কি ব্যাপার মামা বলোতো। আমি তোমাকে বললাম বাড়ি থেকে ইঁদুর তাড়াতে আর তুমি উল্টো ইঁদুর কিনে আনলে! 

তরিক মামা তার স্বভাবসুলভ হাসি মুখে ঝুলিয়ে রেখে বললেন-শোন্, আমাদের সমাজে অনেক খারাপ মানুষের পাশাপাশি কিছু ভালো মানুষ থাকে। যাদের প্রচেষ্টায় সেই খারাপ মানুষগুলোর খারাপ কর্মকাণ্ড রুখে দেওয়া যায়। তেমনি আমাদের বাড়ির এই অবৈধ অভিবাসী কালো ইঁদুরের পাশাপাশি কিছু ভালো স্বভাবের সাদা ইঁদুর দরকার। এদের আগমনে কালো ইঁদুর গুলো খুব তাড়াতাড়ি পালিয়ে যাবে। আর এই সাদা ইঁদুরগুলোও আমাদের খুব বেশি ক্ষতি করবে না বলেই আমি জানি। এই বিলেতি ইঁদুর ঘরের সৌন্দর্যও বর্ধন করে।  তাছাড়া উল্লেখযোগ্য তেমন কোনো ক্ষতিও করে না।

কেটে গেল বেশ কিছুদিন। রাতুল সহ ওদের পরিবারের সবাই অবাক হয়ে লক্ষ করলো  সাদা ইঁদুরের আগমনে সত্যি সত্যি ওদের বাড়ির বদ ইঁদুরগুলো পালাতে শুরু করেছে।

এই রকম আরও টপিক

সর্বশেষ খবর