শুক্রবার, ১৯ মে, ২০১৭ ০০:০০ টা

চুমকি নেমেছে আঙিনায়

রাহমান ওয়াহিদ

চুমকি নেমেছে আঙিনায়

মিষ্টি বিকেল। চারতলা বাড়ির নিচে ছোট্ট আঙিনা। দেয়ালঘেরা। ছোট ছোট ছেলেমেয়েরা খেলা করছে। হাসছে। ছোটাছুটি করছে। মনে ওদের কত আনন্দ! ওদিকে দোতলায় বারান্দার গ্রিল ধরে দাঁড়িয়ে চুমকি। ওরও ইচ্ছে করে ওদের সঙ্গে খেলতে। কিন্তু মা যেতে দেয় না। বলে-‘গায়ে ধুলো লাগবে। পড়ে গিয়ে ব্যথা পাবে। ছেলেধরা ধরে নিয়ে যাবে।’ এসব কত কি। চুমকি ভাবে- তাহলে ওরা যে খেলছে! ওরাও তো ওর মতোই ছোট। কেউ ওর মতো নার্সারি, কেউ কেজিতে পড়ে। কিন্তু এ ভাবনাটুকুই। ভয়ে কিছু বলতে পারে না সে। মুখ ভারি করে ওদের খেলা দেখে। প্রতিদিন বিকেলটা এভাবেই কাটে চুমকির।

আজ মা-বাবা কেউই এখনো অফিস থেকে ফেরেনি। নিচের একটা মেয়ে বলে- ‘চুমকি খেলবে?’ চুমকি মাথা নেড়ে বলে- ‘না। মা বকবে।’ একটা ছেলে বলে- ‘বকবে কেন। বাড়ির সামনে দেয়ালঘেরা। গেটে দারোয়ান কাকা। ভয় কি?’ চুমকি ভাবে। ঠিকই তো। যাবে নাকি? ঘরে ঢুকে দেখে বুয়াটা বাথরুমে। চেয়ার লাগিয়ে দরজাও খুলতে পারে সে। গেলে ক্ষতি কি? হারিয়ে তো আর যাবে না। মা-বাবাকে আসতে দেখলেই ছুটে উপরে আসতে পারবে। মনে জোর পায় চুমকি। পায়ে পায়ে নিচে নেমে আসে। ছেলেমেয়েরা ওকে পেয়ে ভীষণ খুশি। নানান খেলায় মেতে ওঠে ওরা। দৌড়াদৌড়ি। কানামাছি ভোঁ ভোঁ। লুকোচুরি। কত রকম খেলা। কত যে হাসাহাসি। ভুলেই যায় চুমকি নিজের কথা। বুয়ার কথা। বাবা মার কথা। কিন্তু বুয়া নিচে এলে চুমকি তাকে দেখতে পায়। একটা গাছের আড়ালে লুকায়। ছেলেমেয়েরা বুঝতে পেরে চুমকির কথা জানায় না তাকে। বুয়া ঘরে গিয়ে কাঁদতে থাকে।

এদিকে মা-বাবা যে কখন এসেছে দেখতে পায়নি চুমকি। বাবা-মা ঘরে ওকে না দেখে তো অবাক। বুয়াকে খুব করে বকা দেয়। চুমকি কখনো নিচে নামে না। তাই তারা আঙিনার কাউকে জিজ্ঞেস করে না। চুমকিও তখন চোখের সামনে ছিল না। ছুটে যায় বাবা-মা রাস্তায়। এখানে সেখানে খোঁজাখুঁজি। না বাইরে কোথাও নেই চুমকি। তারা ভেবেই নেয় চুমকি হারিয়ে গেছে। আর তাকে পাওয়া যাবে না। পাগলের মতো ছুটে এসে আঙিনায় দাঁড়ায় তারা। চোখে তাদের কান্না। হঠাৎ মা দেখে একটা মুরগির ঘরের পেছনে চুমকি! তখন লুকোচুরি খেলা চলছিল। মাকে দেখে ভয়ে চুমকি দৌড়ে এসে বাবার বুকে মুখ লুকায়। মা খুব রেগে যায়। চুমকির চুল টেনে ধরে বলে ‘তোমার এত বড় সাহস! কেন নিচে নেমেছ?’ ভয়ে কাঁপতে থাকে চুমকি। কিছু বলতে পারে না। বন্ধুরা এগিয়ে আসে। একজন বলে, ‘ওকে বকবেন না আন্টি। চুমকি খুব ভালো।

সুন্দর খেলতে পারে।’ আরেকজন বলে, ‘চুমকি সুন্দর গানও গাইতে পারে।’

কিন্তু মা ওদের কথায় কান দেয় না। ধমক দিয়ে বলে, ‘চুমকি, কথা বলছো না কেন? কেন নেমেছ এভাবে?’ বাবা চুমকির মাথায় হাত বুলিয়ে বলে, ‘স্যরি বল মামণি। কাউকে না বলে এভাবে নিচে নামতে নেই।’ চুমকি এবার বলে, ‘স্যরি মা, ভুল হয়ে গেছে। আর এমন হবে না।’ বাবা মাকে বলে ‘ঠিক আছে। ওকে আর বকো না।’ এবার চুমকিকে বলে, ‘তোমার তো অনেক খেলনা মামণি, নিচে খেলার দরকার কি?’ চুমকি এবার কাঁদতে কাঁদতে বলে, ‘ওগুলো আর ভালো লাগে না বাবা। অনেক পুরনো।’ বাবা বলে, ‘তাহলে কি নিচে এসে খেলতে চাও?’ চুমকি চোখ মুছতে মুছতে বলে, ‘মা যে বকবে’। বাবা বলে, ‘মা বকবে না। খেলতে চাইলে আমাকে, না হয় মাকে, না হয় বুয়াকে বলে নিচে নামবে।

মনে থাকবে?’ চুমকি মার দিকে তাকায়। না। মার মুখে রাগটা নেই। বাবাকে বলে, ‘হ্যাঁ বাবা। মনে থাকবে।’ বাবা বলে, ‘এই তো আমার লক্ষ্মী মেয়ে।’ চুমকি এবার ফিক করে হেসে দেয়। বাবাকে আদর করে বলে, ‘তুমিও আমার লক্ষ্মী বাবা’। মার কোলে মুখ লুকিয়ে বলে, ‘তুমিও খুব লক্ষ্মী মা’।

এই রকম আরও টপিক

সর্বশেষ খবর