শিরোনাম
শুক্রবার, ২৬ মে, ২০১৭ ০০:০০ টা

গিগাবাইট দৈত্য

আসিফ মেহ্দী

গিগাবাইট দৈত্য

ইতু ইন্টারনেট ব্রাউজিং করছে। হঠাৎ একটি লিঙ্ক তার চোখে পড়ল। সেটিতে ক্লিক করতেই ল্যাপটপের সামনে ধোঁয়া কুলি পাকানো শুরু করল! একটু পরই ইতুর সামনে হাজির হলো বড় মানুষের সমান লম্বা এক দৈত্য! ইতু মোটেই অবাক হলো না; বরং দৈত্যকে দেখে মনে হচ্ছে সে-ই অবাক হয়েছে! দৈত্য বলল, ‘ধন্যবাদ। চিপা গলির মতো এই চিপা কম্পিউটারের মধ্যে থাকতে খুব প্রবলেম হয়! তোমার হার্ডডিস্কের সাইজ মাত্র চল্লিশ গিগাবাইট! এ যুগে এত কম সাইজের হার্ডডিস্ক কেউ ব্যবহার করে?’

ইতু দৈত্যের প্রশ্নের জবাব না দিয়ে পাল্টা প্রশ্ন করল, ‘তুমি কে? চেরাগের দৈত্যের গল্প শুনেছি; কিন্তু তুমি কোথা থেকে এলে?’

দৈত্য বলল, ‘আমার নাম গিগাবাইট। আমরা তিন ভাই: কিলোবাইট, মেগাবাইট আর আমি। তিন ভাইয়ের মধ্যে আমি বড়। আমি তোমার হার্ডডিস্কের মধ্যেই ছিলাম! এখন চটপট তোমার কয়েকটা ইচ্ছার কথা বলো তো দেখি।’

দৈত্য না বললেও ইতু তার ইচ্ছার কথা বলত। সে জানে, দৈত্য হঠাৎ হাজির হলে মানুষ ভয় না পেয়ে বরং খুশি হয়। কারণ, দৈত্য ইচ্ছাপূরণ করে দেয়! ইতু বলল, ‘আমার ইচ্ছাগুলো খুব সহজেই তুমি পূরণ করতে পারবে!’

গিগাবাইট দৈত্য অবাক হওয়ার ভঙ্গিতে বলল, ‘আমি তো ইচ্ছাপূরণ করি না; শুধু ইচ্ছার তালিকা আমার ডাটাবেজে জমা রাখি! যার যেটা ইচ্ছা, তার সেটা নিজেকেই পূরণ করতে হয়। ইচ্ছাপূরণ দৈত্য করে না; করে অধ্যবসায়!’

ইতু বলল, ‘তাহলে আর বকবক কোরো না! চুপ করে আগের জায়গায় ফেরত যাও।’

দৈত্যকে চুপ করে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখে ইতু বলল, ‘আচ্ছা, তোমার যদি ফিরে যেতে ইচ্ছা না করে, তাহলে বারান্দায় গিয়ে বিশ্রাম নাও।’

দৈত্য হনহন করে হাঁটা ধরল। বারান্দায় গিয়েই আবার দৌঁড়ে ফিরে এল। ঠকঠক করে কাঁপছে সে! বলল, ‘উফ, কী শীত বাইরে!’

ইতু বলল, ‘তাহলে ওই কোণায় চুপ করে বসে থাক। আমি গুরুত্বপূর্ণ কাজ করছি।’

রাতে ইতুর সঙ্গে দৈত্যকে দেখে মা-বাবা ভড়কে গেলেন! বাবা-মাকে পুরো ঘটনাটি বলল ইতু। বাবা বললেন, ‘ভালোই হলো, গিগা সাহেব আমাদের গেস্ট! রাতে ড্রয়িংরুমে রেস্ট করুক।’ মা বললেন, ‘না খেয়ে বেচারার কী হাল! দৈত্য হবে রয়েল বেঙ্গল টাইগার বাঘের মতো; কিন্তু ওনার দেখছি বিড়ালের মতো অবস্থা! উনিও আমাদের সঙ্গে খেতে বসুক।’

গিগাবাইট বলল, ‘আমি এসব খাবার খাই না। আমি খাই কারেন্ট অর্থাৎ চার্জ!’ 

ইতুর ল্যাপটপের চার্জার নিয়ে কড়কড় করে কিছু চার্জ খেয়ে নিল গিগাবাইট! তারপর এক ঘুমে রাত পার। পরদিন সকালে ইতু আর দৈত্য হাঁটতে বের হলো। শীতের ঠাণ্ডা ঠেকাতে দৈত্য গায়ে চাপিয়েছে ইতুর বাবার সোয়েটার। হাঁটার সময় তারা ফুটপাতে দেখল, এক মা তার বাচ্চাকে বুকের মধ্যে আগলে ঘুমিয়ে আছেন।

শীত ঠেকানোর জন্য মায়ের গায়ে কোনো গরম কাপড় নেই! ঠাণ্ডায় কুঁকড়ে ঘুমিয়ে আছেন তিনি। ইতু গিগাবাইটকে বলল, ‘আমি আসলে এমন শীতার্ত মানুষের জন্যই গরম কাপড় চাইতাম তোমার কাছে। কিন্তু তুমি তো ইচ্ছাপূরণ করতে পার না! দেখেছ, কত কষ্ট!’

গিগাবাইট দৈত্য বলল, ‘দুঃখ-কষ্ট আমি বুঝি না। আমার মধ্যে আবেগ নেই। আমি শুধু বুঝি লজিক!’

‘গাধা কোথাকার!’ ধমক দিল ইতু।

‘আমি গাধা না; আমি দৈত্য!’ গিগাবাইট মৃদুস্বরে প্রতিবাদ করল। তারপর হুশ করে অদৃশ্য হয়ে গেল। অবশ্য কয়েক সেকেন্ড পরই ফিরে এল। ইতুর হাতে বড়দের কয়েকটা শীতের পোশাক দিয়ে বলল, ‘এই নাও, গরম কাপড়।’

‘এগুলো কোথায় পেলে?’

‘অনলাইন স্টোর থেকে আনলাম। ইন্টারনেটে তো সব পাওয়া যায়!’

শীতে জড়োসড়ো হয়ে ঘুমিয়ে থাকা মাকে ডাক দিয়ে তাকে গরম কাপড়গুলো দিল ইতু। বাচ্চাটিরও ঘুম ভেঙে গেছে।

গিগাবাইট দৈত্যের মাথা দোলানো দেখে খিলখিল করে হাসছে সে! বাচ্চার দিকে কটমট করে তাকিয়ে দৈত্য বলল, ‘শীতে মানুষ হাসে শুকনা হাসি; কিন্তু শীতে এই মানবশিশুর প্রাণবন্ত হাসি হাসার লজিক কী?’

ইতু বলল, ‘লজিক দিয়ে সব বোঝা যায় না রে, গাধা!

অনেক কিছু বুঝতেই মন লাগে!’

প্রাতঃভ্রমণ শেষে ইতু আর দৈত্য বাসায় ফিরে এল। বাসায় ফিরে গিগাবাইট বলল, ‘আমি চলে যাচ্ছি। ওই লিঙ্কে ক্লিক দিলে আবার ফিরে আসব!’ এ কথা বলেই ধোঁয়ার কুলি পাকিয়ে উধাও হয়ে গেল দৈত্য।

তারপর পেরিয়ে গেছে সোয়া এক বছর।

এ বছর শীতেও কত মানুষ গরম কাপড়ের অভাবে কষ্ট পেল! গিগাবাইট দৈত্যকে খবর দিলে সে শীতের পোশাকের ব্যবস্থা করতে পারত! ইতু ইন্টারনেটে অনেকবার খুঁজেছে গিগাবাইট দৈত্যকে আনার সেই লিঙ্ক; কিন্তু সেটি আর খুঁজে পায়নি!

এই রকম আরও টপিক

সর্বশেষ খবর