শুক্রবার, ৩০ জুন, ২০১৭ ০০:০০ টা

ভালোবাসার ঈদ

রুমান হাফিজ

ভালোবাসার ঈদ

একই ক্লাসে পড়ে অথচ একজন আরেকজনের সাথে এমন আচরণ করতে পারে? কথা বলে না তাছাড়া একে অপরের প্রতি হিংসাত্মক ব্যবহার এবং ক্ষতি সাধনে দুজন সদা ব্যস্ত!

কথাগুলো শুনে বেশ অবাক হলেন প্রধান শিক্ষক মিহরাব সাহেব।সাথে সাথে তিনি ডেকে আনলেন নাজিফ ও রুহান দুজনকেই। একই ক্লাসে পড়ে। তাছাড়া দুজনের মাঝে তো আগে ভালোই সম্পর্ক ছিল বলেই জানতেন তিনি। টেবিলের সামনে দুজনকে দাঁড় করিয়ে স্যার জানতে চাইলেন, কী জন্য তাদের মধ্যে এই অবস্থার সৃষ্টি?

প্রথমেই নাজিফ বলল-

“স্যার, রুহানের সাথে আমি কখনোই খারাপ আচরণ করিনি। কিন্তু আমি তার থেকে ভালো রেজাল্ট করি বলে সে সহ্য করতে পারছিল না। যার ফলে আমার সাথে লাগতে থাকে। আমি গরিব বলে অবহেলার স্বরে নানা কথা বলতে থাকে। আমার গায়েও হাত দিয়েছে। তবুও আমি কিছু বলিনি।”

নাজিফকে থামিয়ে দিয়ে স্যার রুহানের কাছে এ বিষয়ে জানতে চাইলেন। উত্তরে রুহান বলল-

“না স্যার নাজিফ একদম সাজিয়ে মিথ্যে কথা বলছে। আমি এরকম কিছুই করিনি। তাছাড়া সেই উল্টো আমাকে তুচ্ছ তাচ্ছিল্য করেছে আমি ভালো রেজাল্ট করতে পারিনি বলে।”

দুজনের বিপরীতমুখী কথাগুলো শুনে স্যার চিন্তায় পড়ে গেলেন। এর সমাধান কিভাবে করবেন।

তবে স্যার ভালো করেই জানেন, নাজিফ ছেলেটা কেমন। সে গরিব হতে পারে তবে তার আচার ব্যবহার তাছাড়া ভালো ছাত্র হিসেবে স্কুলে সবার কাছে তার আলাদা সুনাম রয়েছে।

স্যার তাদের দুজনকে উদ্দেশ্য করে পরামর্শমূলক কিছু কথাবার্তা বললেন—

শোনো, তোমাদের ঘটনাটা আমাকে ভীষণ কষ্ট দিয়েছে। তোমাদের থেকে এমন আচরণ কখনোই আশা করিনি। নিশ্চয় তোমাদের কারো না কারোর মধ্যে ভুল বোঝাবুঝি হয়েছে। হয়তো তোমরা সেটা বুঝতে পারছ, কিংবা না বুঝেই এমনটা করেছ। তবে যাই হোক না কেন এমন আচরণ কখনোই কাম্য নয়। শিক্ষাই জাতির মেরুদণ্ড। আর তোমরা তো সেই মেরুদণ্ডের অংশীদার, তাইনা? আর তোমাদের মাঝে যদি ছোটখাটো বিষয় নিয়ে এমনটা ঘটে তাহলে আগামীদিনে দেশ এবং জাতিকে কি উপহার দেবে? তোমাদের হাত ধরেই তো আগামীর সোনার বাংলা গড়ে উঠবে।

স্যারের কথাগুলো বেশ মনোযোগ দিয়ে শুনছিল দুজন। তবে ভিতরে ভিতরে বেশ অনুতপ্ত হচ্ছিল রুহান। পুনরায় যাতে এরকম না ঘটে সে জন্য স্যার তাদের সাবধান করে দিলেন।

সেদিন বাড়িতে এসে কোনো কিছুতেই তার ভালো লাগছিল না। কেবল সেই ঘটনার কথাই তাকে তাড়িয়ে বেড়াচ্ছিল। মনে মনে ভাবতে থাকে কিভাবে রুহানের সাথে এ বিষয়ে সমাধান করবে। নিশ্চয় সে তার ভুলের জন্য ক্ষমা চাইবে।

হঠাৎ তার মাথায় একটা বুদ্ধি আসে। আচ্ছা, কাল তো ঈদ! তাদের ঈদগাহে বড় জামাত হয়। আশপাশের কয়েক গ্রামের মানুষ এখানে আসে। নাজিফের গ্রামের লোকজনও আসবে। তাহলে সেখানেই নাজিফের সাথে দেখা করবে।

ঈদের নামাজ শেষ করে সবাই পরস্পরের সাথে কোলাকুলিতে ব্যস্ত। তাড়াতাড়ি করে রুহান এগিয়ে যায় নাজিফের কাছে। ঝাপটে ধরে কেঁদে ফেলে। ভুলের জন্য ক্ষমা চাইতে থাকে। কোনকিছু বুঝে উঠতে পারছিল না নাজিফ। অবাক দৃষ্টিতে কিছুক্ষণ তাকিয়ে থাকে।

একে অপরকে জড়িয়ে ধরে কোলাকুলি করল। নাজিফ ও রুহান সব ভেদাভেদ ভুলে পুনরায় ভালোবাসার বন্ধনে আবদ্ধ হয়!

এই রকম আরও টপিক

সর্বশেষ খবর