শুক্রবার, ২১ জুলাই, ২০১৭ ০০:০০ টা

শিয়াল পণ্ডিত ও বোকা কাক

সোহেল রানা

শিয়াল পণ্ডিত ও বোকা কাক

শিয়ালের সঙ্গে কাকের শত্রুতা চিরকালের হলেও হঠাৎ করেই শিয়াল পণ্ডিতের সঙ্গে একটা কাকের দারুণ বন্ধুত্ব হয়েছিল। বন্ধুত্ব থাকার কারণে কাক যদি কোনো মরা প্রাণীর খবর পেত তাহলে তা সঙ্গে সঙ্গে শিয়াল পণ্ডিতকে জানাত। এতে করে শিয়ালের খাবার খুঁজতে আর কষ্ট করতে হতো না। যেদিন থেকে শিয়ালের সঙ্গে কাকের বন্ধুত্ব হয়েছে সেদিন থেকেই শিয়াল পণ্ডিতকে আর পায় কে। খেয়ে দেয়ে কি নাদুস নুদুসটাই না হয়েছে। 

একদিন কাকের মন খারাপ দেখে শিয়াল পণ্ডিত জিজ্ঞাসা করল, ‘কি হয়েছে বন্ধু, তোমাকে অনেক মনমরা লাগছে? তোমার এই কষ্টের কথা আমাকে না বলে কাকে বলবে বলো? তাড়াতাড়ি বলো দেখি, আমি তোমার কোনো উপকারে আসতে পারি কি না?। শিয়ালটা যখন এতটাই করে বলছে তাই কাকের কষ্টের কথা তাকে খুলে বলতে রাজি হলো। সে বলল, ‘আমার বাসায় সব সময়ই কোকিল ডিম পেড়ে যায়, আর আমি সেগুলো আমার ডিম মনে করে বাচ্চা দিই। আবার কখনো কখনো কোকিলের ডিম রেখে আমার ডিমগুলো ফেলে দিই আমি। এভাবে আর চলতে দেওয়া যায় না। কিছু একটা করো বন্ধু।’

শিয়াল পণ্ডিত অনেক চিন্তা করে বলল, ‘আসলেই তো এটা একটা জটিল সমস্যা। তবে এই সমস্যা থেকে উত্তরণের উপায়ও কিন্তু আমার কাছে আছে। যদি তুমি রাজি থাকো তাহলে বলতে পারি।’ কাকও তার উপায় শোনার জন্য রাজি হয়ে গেল। কাক রাজি হওয়াতে শিয়াল পণ্ডিত বলল, ‘দেখো বন্ধু, আমি তো আর গাছের উপরে উঠে তোমার বাসা পাহারা দিতে পারব না, তাই তোমাকে গাছের নিচে কোনো ঝোঁপে বাসা করতে হবে। আর তুমি যখন থাকবে না তখন আমি আড়াল থেকে ওই বাসাটি পাহারা দেব। যখন দেখব কোকিল তার ডিম পেড়ে চলে যাচ্ছে আর অমনিই আমি তার ডিমটা খেয়ে ফেলব। তাহলে আমিও ডিম খেয়ে তৃপ্তি পাব আর তোমাকেও কোকিলের ডিমে তা দিয়ে বাচ্চা ফোটাতে হবে না। তুমি তোমার ডিমেই তা দিয়ে বাচ্চা ফোটাতে পারবে।

শিয়াল বন্ধুর নিকট থেকে এত সুন্দর প্রস্তাব পেয়ে কাকও খুশিতে আত্মহারা হয়ে গেল। সে তাত্ক্ষণিকভাবে বটগাছের নিচে একটা ঝোঁপে বাসা তৈরি করে বসবাস করতে থাকল। দিন যায় মাস যায় কাক না থাকলে শিয়াল পণ্ডিত বন্ধুর বাসা পাহারা দিতে থাকে। এরই মধ্যে কাক বেশ কয়েকটি ডিম পাড়ল। কাক বাসা থেকে যাওয়ার সময় ডিমগুলো ভালোভাবে গুনে যেত, আবার এসেও দেখত সেগুলো ঠিক আছে কিনা।  এভাবে বেশ কিছুদিন অতিবাহিত হওয়ার পর একটা কোকিল এসে কাকের বাসায় ডিম পেড়ে চলে গেল। আর তা দেখে শিয়াল পণ্ডিতের জীবে পানি চলে আসল। সে তাড়াতাড়ি করে ডিম খেতে থাকল ঠিকই কিন্তু কোনটা কাকের আর কোনটা কোকিলের তা বুঝে উঠতে পারল না। তবে দুটা ডিমের স্বাদ দুই ধরনের হওয়ায় শিয়াল পণ্ডিত বুঝতে পারল সে কোকিলের পাশাপাশি কাকের ডিমও খেয়েছে। তাই বন্ধু বুঝে ফেলতে পারে এই ভেবে আর না খেয়ে দূরে গিয়ে লুকিয়ে থাকল। কিছুক্ষণ পর কাক এসে রীতিমতো তার ডিম গুনে দেখল দুটা ডিম কম অর্থাৎ শিয়াল পণ্ডিত কোকিলের ডিমের সঙ্গে সঙ্গে কাকের দুটা ডিমও খেয়ে ফেলেছে। ডিম কম দেখে কাক চিৎকার করে শিয়াল পণ্ডিতকে ডাকতে থাকল। শিয়াল পণ্ডিতও দৌড়াতে দৌড়াতে এসে বন্ধুর কাছে এসে বলল, কি হয়েছে বন্ধু? কাকের একটাই কথা, ‘আমার দুটা ডিম কম আছে, আর তুমি এখানে পাহারা না দিয়ে কোথায় গিয়েছিলে’? শিয়াল পণ্ডিত বুদ্ধি খাটিয়ে বলল, ‘আমি এইমাত্র কোকিলকে তাড়িয়ে আসছি, সে কিছুক্ষণ আগে এসে আমার জন্য তোমার খাঁচায় ডিম পাড়তে না পেরে দুটি ডিম নিয়ে পালিয়ে গেছে। তুমি না ডাকলে আমি তাকে ধরেই ফেলেছিলাম প্রায়। বোকা কাক শিয়ালের বুদ্ধির কাছে না পেরে এটাকেই বিশ্বাস করে বসে থাকল।  ডিম দুটি হারানোর পর থেকে কাক আর বাসা ছেড়ে কোথাও যায় না, আর শিয়ালের ডিম খাওয়াও হয় না। তাই শিয়াল বুদ্ধি করে বলল, ‘অনেক দিন ধরে ভালোমন্দ খাওয়া হয় না বন্ধু, তুমি যদি একটা মরা প্রাণীর খোঁজ নিয়ে আসতে তাহলে আমি অনেক তৃপ্তি সহকারে খেতে পারতাম’। বন্ধুর আবদার শুনে কাক মরা প্রাণীর খোঁজে বের হলেও ডিমগুলো ভালোভাবে গুনে রেখে বন্ধুকে ভালোভাবে পাহারা দিতে বলল। কাক স্থান ত্যাগ করার সঙ্গে সঙ্গে শিয়াল আর দেরি না করে অনেক মজা করে ডিমগুলো খেয়ে স্থান ত্যাগ করল। কিছুক্ষণ পর কাক এসে দেখতে পেল একদিকে যেমন তার বাসায় ডিমগুলোও নেই অন্যদিকে শিয়াল বন্ধুও নেই। কাক আফসোস করে কাঁদতে কাঁদতে বলতে থাকল, ‘শত্রুকে কখনই বন্ধু ভাবা উচিত নয়’।

এই রকম আরও টপিক

সর্বশেষ খবর