শুক্রবার, ২৮ জুলাই, ২০১৭ ০০:০০ টা

কানাভূত

আবদুস সালাম

কানাভূত

রাইকাদের বাড়িটি খুব সুন্দর। চারিদিকে গাছপালায় ঘেরা। তার পড়ার ঘরের সামনে বড় একটি আমবাগান। আমবাগান ও বাড়ির মাঝখানে একটা ফাঁকা মাঠ রয়েছে। ওই মাঠেই রাইকা তার বান্ধবীদের সাথে বিকালবেলায় খেলা করে। মাঝেমাঝে তারা একত্রে বসে গল্পগুজবও করে। তুলি নামে তার একজন ঘনিষ্ঠ বান্ধবী কয়েকদিন আগে তাদেরকে একটা কানাভূতের গল্প বলেছে। কানাভূতটির বর্ণনা দিতে গিয়ে সে বলেছে— ভূতটি দেখতে ছিল খুব ভয়ঙ্কর। তার চুলগুলো ছিল খুব লম্বা। সে যখন গাছের ডালে শুয়ে থাকত তখন তার চুলোগুলো মাটিতে ঠেকে যেত। তার দাঁতগুলো ছিল মুলার মতো, কান দুটো ছিল কুলার মতো। আর নাকটি ছিল খুব খাড়া। ভূতটি কানা হওয়ার কারণে সহসা কারও ক্ষতি করতে পারত না। বড় বড় গাছগুলো ছিল তার খুব প্রিয়। তবে কেউ তার ক্ষতি করার চেষ্টা করলে তাকে ছাড় দিত না। সুযোগ পেলেই তার ঘাড় মটকে দিত। ভূতটি দিনের আলোতে দেখা যেত না। তবে জোছনা রাতে তার ছায়া দেখা যেত। এই গল্পটি শোনার পর থেকে রাইকার সবসময়ই ওই কানাভূতের কথা মনে পড়ে। আর ভূতের কথা মনে হলে তার ভয় লাগে। রাত হলেই তার ভয়টা বেড়ে যায়। জোছনা রাতে আমবাগানটি অস্পষ্ট দেখা যায়। মাঝে মাঝে সেখানে পাখির ডানা ঝাপটানোর শব্দ শোনা যায়। বাগানের বড় গাছটির ডালপালা বাতাসে নড়াচড়া করতে দেখলে তার মনে হয় ওখানে বোধ হয় কানাভূতটা বসে আছে। আর এ কথা মনে হলেই সঙ্গে সঙ্গে সে ঘরের জানালাটি বন্ধ করে দেয়। কয়েকদিন পর দেখা গেল সে সবসময় পড়ার ঘরের জানালাটি বন্ধ করে রাখে। জানালা দিয়ে যেন ওই বড় আমগাছটিকে দেখা না যায়। এভাবে বেশ কিছুদিন ধরে সে মনোযোগ দিয়ে পড়ালেখা করতে পারে না। একা একা ঘুমাতেও ভয় পায়। ঠিকমতো খাওয়া-দাওয়া করতে পারে না। শুধু তা-ই নয়, বিকালবেলায়ও মাঠে খেলাধুলা বন্ধ করে দেয়। এমনকী আমগাছটির দিকে তাকাতেও তার ভয় লাগে। কয়েকদিন ধরে রাইকার মা তার আচরণে পরিবর্তনের বিষয়টি লক্ষ করলেন। তিনি তার কাছে এর কারণ জানতে চাইলেন। রাইকা কোনোভাবেই মুখ খুলল না। ওর মা বুঝতে পারল তার নিশ্চয় কিছু একটা হয়েছে। যার কথা বলতে সে ভয় পাচ্ছে। মায়ের পীড়াপীড়িতে অবশেষে মুখ খোলে। সে বলে যে, আমি তুলির কাছে থেকে শুনেছি আমবাগানে একটা কানাভূত বাস করত। রাইকার মা সবকিছু শুনে তাকে বলল, তুমি এসব ভূতের কথা একদম বিশ্বাস করবে না। ভূত বলে পৃথিবীতে কিছু নেই। ভূতের গল্পগুলো সবই মিথ্যা। তাছাড়া তুলি তো তোমারই বান্ধবী। বয়সেও একটু ছোট। তাদের বাড়িটা তো বাগানের পাশেই অবস্থিত। সে তো কখনো ভূতের কথা শুনে ভয় পায় না। তুমি কেন ভয় পাবে? মায়ের কথাগুলো রাইকার বুকে বেশ সাহস জোগায়। সে মায়ের কথাগুলো বিশ্বাস করে। তারপর থেকে সে কানাভূত কেন আর কোনো ভূতকেই ভয় পায় না। সে আগের মতো আবার পড়ালেখায় মন দেয়। ঠিকমতো খাওয়া-দাওয়া করে। পড়ার ঘরের জানালা সবসময় খুলে রাখে। প্রতিদিনের মতো আবার বান্ধবীদের সাথে বিকালবেলায় খেলাধুলা করে। রাইকার ভূতের ভয় দূর হওয়ায় তার মা-বাবাও খুশি হয়।

এই রকম আরও টপিক

সর্বশেষ খবর