বাজার থেকে বাসায় ফিরতে ফিরতে সন্ধ্যা হয়ে গেল। যাই যাই বলেও আর যাওয়া হচ্ছে না। সব সময়ই দু-একটি কাজ বাকি থেকে যায়। যখন বাসায় ফেরার সময় হলো তখন রীতিমতো রাত হয়ে গেল। ইচ্ছা করে দেরি করলেও ঠিক বুঝে উঠতে পারিনি ঘড়ির কাঁটাটা যে এত তাড়াতাড়ি চলছে। তখন রাত প্রায় ১০টা, শহরে আলোর মাঝে রাত ১০টা সন্ধ্যা হলেও গ্রামে তা মধ্যরাত। নিঝুম পরিবেশ, ছিমছাম রাস্তা সবাই ঘুমের ঘোরে ব্যস্ত থাকে। একটি শব্দ আস্তে করলে তার দ্বিগুণ আওয়াজ হয়। বাজার থেকে বাসার উদ্দেশে হাঁটতে লাগলাম, মনে মনে একটু ভয় হচ্ছে! রাস্তার দু পাশের গাছগুলো যেমন ভাবে দাঁড়িয়ে আছে মনে হচ্ছে কাউকে পাহারা দিচ্ছে। মাঝে মাঝে এ গাছ থেকে ও গাছে দু একটি পাখি উড়ে যায়। হাঁটছি আর মনে মনে ভাবছি কেন যে এতো রাত করলাম, সমিতের সঙ্গে দেখা হয়েই যত সব কাণ্ড করখানা হয়েছে একদম দেরি হয়ে গেছে। সমিত আমার স্কুলের বন্ধু, একই সঙ্গে ভাকোয়াদী প্রাথমিক বিদ্যালয়ে পড়ি। যাই হোক তা ভেবে আর লাভ কি? ধীরে ধীরে হাঁটতে লাগলাম আর আম্মুর শিখানো দোয়া পড়তে লাগলাম। কখনো কখনো আবার একা একা কথা বলছি।
বড়দের কাছে শুনেছি পুকুর পাড়ের বটগাছটা নাকি অনেক খারাপ। এ গাছেই এলাকার সব ভুত পেতের বসবাস। কিন্তু বটগাছ তো আরও দু মিনিটের পথ তবু কেন জানি ভয়ে শরীর ঠাণ্ডা হয়ে যাচ্ছে। ভয়ে ভয়ে সামনে এগুতে লাগলাম, হঠাৎ সামনে দেখতে পেলাম কে যেন হেঁটে যাচ্ছে। আমার মনে মনে অনেকটা ভরসা হলো, ভয়টাও একটু কমল। আমি আগের তুলনায় হাঁটার গতি বাড়িয়ে দিলাম সামনের লোকটিকে ধরার জন্য। কিন্তু আমার কাছে মনে হচ্ছে লোকটি আরও তাড়াতাড়ি হেঁটে চলছে। ভুল করে হলেও একবার ডাক দিয়েছিলাম কিন্তু কোনো সাড়া নেই, আমি ভেবেছিলাম হয়তবা আমার ডাকের শব্দ লোকটির কান পর্যন্ত পৌছেনি। লোকটিকে অনুসরণ করে হেঁটে আসতে আসতে পুকুরপাড়ের বট গাছটির নিচে চলে আসলাম।
হঠাৎ করে মনের অজান্তে একবার বটগাছটির উপরে তাকালাম কি ঘন ঘন পাতা গাছটিতে কোন পাখি নেই বাতাস নেই পুরো মৃত গাছ বলে মনে হয়। এখন আর ভয় হচ্ছে না সামনে একটি লোক আছে বলেই ভরসা হচ্ছে। কিন্তু আমি তো লোকটিকে দেখিনি শুধু অনুসরণ করে হেঁটে চলছি মাঝে মাঝে এমন প্রশ্নও হচ্ছে মনে। এখন আর তা ভেবে তেমন লাভ নেই অতি দ্রুত লোকটি হেঁটে যাচ্ছে সঙ্গে না যেতে পারলে আবার ভয়ে আমার যা তা অবস্থা হবে। তবে আর একটু গেলেই আমাদের বাড়ি, নিশ্চয়ই আম্মু আমার প্রতীক্ষায় বসে আছে আর বসে থাকা মানে বকাবকি থেকে নিস্তার নেই। অনেকটা আনমনে হয়ে গিয়েছিলাম, সামনে তাকালাম কিন্তু কি অদ্ভুত সামনের লোকটি আর নেই! এমন অবস্থায় আমি কি করব তা ভেবে পাচ্ছি না, আমার গলা শুকিয়ে গেল।শরীর ঘেমে জামা কাপড় ভিজে গেল। মনে হলো আমাকে কেউ পেছন থেকে বারবার ডাকছে। দৌড় দেওয়ার মতো কোনো শক্তি নেই। আমার মাথার ভিতরে একটি কল্পনাই ঘুরছে সামনের লোকটি কোথাই গেল? তবে তা কি ভূত ছিল? তাহলে কি আমি এতক্ষণ ভূতের পিছু পিছু হেঁটে চলছি? এরকম কথা কল্পনা করে আরও ভয় হচ্ছে। জোরে একটি চিৎকার দিলাম পরে কি হলো তা ঠিক মনে নেই। পরের দিন আম্মুর কাছে সব খুলে বললাম। আম্মু বলল তা উপকারী ভূত ছিল তাই মানুষের রূপ নিয়ে তোমাকে উপকার করেছে। সব মানুষ যেমন খারাপ হয় না তেমনই সব ভূতও খারাপ হয় না,ভালো ভূতগুলো বিভিন্ন সময় বিভিন্ন রূপ নিয়ে মানুষের উপকার করে। হতে পারে তোমার সামনের লোকটিও তাদের দলের একজন মানুষরূপী উপকারী ভূত ছিল।